সরকারি টাকা জলে ফেলার এক নমুনা
সেতু তৈরি হয়েছে বটে, তবে সেটা ব্যবহারের কোনো জো নেই। কারণ দুই পাশে সংযোগ সড়ক। আবার যেখানে প্র্রয়োজন, সেখানে না বানিয়ে যেখানে কোনো উপযোগিতা নেই, সেখানে নির্মিত হয়েছে সেতু।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার মরা নদীর উপর প্রায় এক বছর আগে নির্মিত ছোট আকারের তিনটি ছোট সেতু এভাবে হয়ে রয়েছে সরকারি অর্থ অপচয়ের নমুনা হয়ে। এগুলো কোনো কাজেই আসছে না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলের চারটি ইউনিয়নের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ইসলামপুর ইউনিয়নের হায়াতমোড় খাকচাপাড়া থেকে শাজাহানপুর ইউপি পর্যন্ত একটি সড়ক ও সেতুর। যেটি নির্মিত হলে, শাজাহানপুর, চরবাগডাঙ্গা, সুন্দরপুর ও ইসলামপুর ইউনিয়নের মানুষের যাতায়াতের জন্য ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার রাস্তা কমে আসবে।
এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে প্রায় আট কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক এবং ওই রাস্তায় সোয়া তিন কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০ মিটার একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি।
কিন্তু প্রকল্পটি হাতে নেয়ার পর ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম-সচিব তাঁর বাড়ির সামনে দিয়ে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনটি কালভার্ট তৈরি করেন। আর গত অর্থবছরে এই কালভার্টগুলো বানানো হলেও দুই পাশে মাটি ভরাট করা হয়নি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, যেখানে দরকার সেখানে সড়ক ও সেতু নির্মাণ না করে ব্যক্তি স্বার্থে সরকারের কোটি টাকা খরচ করে গড়ে তোলা এসব কালভার্ট করা হয়েছে।
স্থানীয় এক শিক্ষক বলেন, যেখান দিয়ে কোন মানুষ চলাচল করে না সেখান দিয়ে হয়েছে এই সেতুগুলো। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতি সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করি, কিন্তু যেখানে ব্রিজগুলো তৈরি হয়েছে সেখান দিয়ে কোন দিন যাওয়া হয়নি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক এক ব্যক্তি বলেন, যিনি এসব সেতু তৈরি করেছেন, তার নিজের জমির দাম বাড়ানোই এর উদ্দেশ্য। আর তিনি তা করেছেন তার চাচাত ভাইরে কথায়।এই ব্যক্তি বলেন, ‘বন্যা পানিসহ অন্যান্য সময়ও কষ্ট করে মূল রাস্তা দিয়ে চলাচল করছি আমরা। কিন্তু ওই রাস্তা দিয়ে কেউ যায় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান ভূঁইয়া জানান, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতাই এর জন্য দায়ী। এর দায়-দায়িত্বও বহন করতে হবে ওই প্রতিষ্ঠানকে। তবে জনগণের দাবি পূরণে খুব শীঘ্রই এলজিইডির পক্ষ থেকে মূল রাস্তায় একটি সড়ক ও সেতু নির্মাণ করা হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ বলেছেন, এলজিইডি ও ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের আবদার রক্ষা করতেই তৈরি করা হয়েছে সেতুগুলো।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মৌদুদ আলম খাঁ বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে এলজিইডি মূল সড়কে সেতু নির্মাণ না করায় এসব কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। তার দাবি, কোনো বিশেষ ব্যক্তির স্বার্থে নয়, জনগণের চাহিদার প্রেক্ষিতেই নির্মিত হয়েছে এসব সেতু।
যার বিরুদ্ধে অভিযোগ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেই যুগ্মসচিব তাজকেরা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তার বাড়ির সামনে সেতু বানানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি কেন ক্ষমতা খাটাব। আমি এলজিইডিকেই বলেছিলাম যে, ওই রাস্তা দিয়ে কালভার্ট বা ব্রিজগুলো করা হোক। আর এই রাস্তার মধ্যখানে ব্রিজগুলো কীভাবে হলো আমি তা জানি না। আর যে রাস্তায় ব্রিজগুলো তৈরি করা হয়েছে কোন একদিন চালু হবেই।’
ঢাকাটাইমস/১ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি