বোমার বদলে কমোড!

তাজরিন জাহান তারিন, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০১ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৫:৪৯

মার্কিন মুলুকের সঙ্গে ভিয়েতনামের যুদ্ধ তখন চরমে। আকাশ থেকে মুহুর্মুহু বোমা ফেলছে যুদ্ধবিমান। কিন্তু একদিন বোমা নয়, ভিয়েতনামের আকাশে উড়তে থাকা একটা যুদ্ধবিমান থেকে নেমে এলো একটা কমোড।

হ্যাঁ, কমোড। আপনার টয়লেটে যে বস্তুটি থাকে। যেখানে বসে আপনি সাত সকালে প্রাকৃতিক কর্ম সারেন, সেই কমোড। আকাশ থেকে বোমার বদলে একটা আস্ত কমোড ফেলে গেলো মার্কিন যুদ্ধবিমান। তার কি কারণ?

সে প্রসঙ্গে যাবার আগে একটু বলে নিতে হয়, বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশ থেকে সত্তরের দশকে টানা ২১টি বছর ধরে পৃথিবী সাক্ষী হয়েছিল অস্তিত্ব রক্ষার এক ভয়াবহ যুদ্ধের। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ চীন সাগর তীরে বয়ে গিয়েছিল এ রক্তের বন্যা। কালের পর কাল মানুষের স্বাধীনতার স্বপ্নে প্রেরণা যোগানোর ইতিহাস তৈরি করা সেই জনপদের নাম ভিয়েতনাম। এটি দ্বিতীয় ইন্দোচীন যুদ্ধ নামেই বেশি পরিচিত। এ যুদ্ধে প্রায় ৩০ লাখ ভিয়েতনামি প্রাণ হারান। পাশাপাশি প্রাণ হারায় ৫৮ হাজার আমেরিকান সৈন্য, যারা উত্তর ভিয়েতনামকে সমর্থন দিয়েছিলো।

১৯৬৫ সালের ৪ নভেম্বর ভিয়েতনামের এক গ্রামের কয়েক বাসিন্দা একটি সাদা বস্তু দেখিয়ে বললো এটা বোমার সাথে আকাশ থেকে পড়েছে। কিন্তু আসলে বোমা না। যদিও বস্তুটির সামনের এবং পেছনের অংশ বোমার মতো দেখা গেলেও সাদা এই বস্তুটি ছিলো আসলে একটি কমোড। মেকং বদ্বীপে অভিযান চালানো তৎকালীন মার্কিন বিমান ‘ভিএ-২৫-এ-১ স্কাইরাইডার’ থেকে এই কমোডটি দক্ষিণ ভিয়েতনামে নিক্ষেপ করা হয়। এটি দক্ষিণ চীন সাগরে একটি বিমান ক্যারিয়ার বেস ডিক্সি স্টেশন থেকে এসেছে। বিমানের পাইলটের পুর্ণ পরিচয় সিডিআর ক্ল্যারেন্স 'বিল' স্টোডার্ড।

কমোড ফেলার গল্পটি জানা যায় ক্যাপ্টেন ক্লিন্ট জনসনের কাছ থেকেই। যিনি কিনা অন্য একটি ‘ভিএ-২৫ এ-১’ স্কাইরাইডার এর পাইলট ছিলেন। গল্পটি শুরু হয় স্টোডার্ড এর আক্রমণের প্রস্তুতির সময় থেকে। তিনি বিমানে বহন করা অস্ত্রের তালিকা পড়ছিলেন রেডিওতে। সেই তালিকার একবারে শেষে ছিল অপারেশন সানি-ফ্লাসের কথা। সানি- ফ্লাস কি? প্রশ্ন করা হলো কেন্দ্র থেকে। উত্তর পাওয়া গেলো আরেকটি যুদ্ধবিমানের ক্যাপ্টেন জনসনের কাছ থেকে। তিনি জানালেন তাদের যুদ্ধ বিমান বহনের বিশাল জাহাজটির নাবিকদের টয়লেটের একটা কমোড অকেজো হয়ে যায়। কমোডটা বিকল এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বাতিলই হয়ে গিয়েছিলো, ওটা সমুদ্রে ফেলে দেয়া ছাড়া আর কোনো গতি ছিলো না। কিন্তু কয়েকজন পাইলট এটা বাতিল না করে বরং এটা নিয়ে একটা জলজ্যান্ত মশকরা করার ফন্দি আটলেন। সেটার গায়ে আকি বুকি করে বোমার চেহারা দিলেন। এবং সাথে হুইসেলও যোগ করে দিলেন যাতে পড়ার সময় শব্দ হয়। সব শেষে একটি ভিডিও তৈরি করলেন।

যাহোক, সেই কমোড নিয়ে ক্যাপ্টেন স্টোডার্ড যখন আকাশে উড়লেন তখন মেইন সার্কিট থেকে একটা বার্তা এলো। তারা বারবার জানতে চাইছিলেন ৫৭২ নম্বর বিমানের ডান পাখায় সাদা মতন একটা বস্তু দেখা যাচ্ছে, সেটা কি? অপারেশন সানি-ফ্লাস হলো এই সাদা বস্তু আর এটাই হলো সেই বিকল হয়ে যাওয়া কমোড। তখন অবশ্য জীবাণু যুদ্ধ নিয়ে বিমান বাহিনীর মধ্যে অনেক মজার মজার গল্প চালু ছিলো। কারো কারো ধারনা হয় এটা হয়তো সেরকম কোন অস্ত্রেরই পরীক্ষামূলক ব্যবহার। কিন্তু হাস্যকর ভাবে ঘটনাটা আসলে অমন কিছুই না।

তবে কেউ কেউ বলেন যুদ্ধের প্রতি বিরক্ত হয়েই অনেকটা নিরব প্রতিবাদ হিসেবে এই কাজ করেছিলেন স্টোডার্ড আর তার বন্ধুরা। সেই যুদ্ধে মার্কিন যুদ্ধ বিমানগুলো থেকে ৬০ লাখ পাউন্ডের বেশি বিষ্ফোরক ফেলা হয় ভিয়েতনামের মাটিতে। এতে সায় ছিলো না বিমানবাহিনীর অনেক পাইলটেরই। কিন্তু তাদের যা কাজ তাতো করতেই হবে। আর তারা সেটা করেও ছিলেন।

তো, স্রেফ মশকরা হোক কিংবা নিরব প্রতিবাদ, এই গল্পের নায়ক বিল স্টোডার্ড জুনিয়র ভীষণ রকম আলোচিত হয়েছিলেন এমন একটা কাণ্ড করে। প্লেনের ডানায় ক্যামেরা বেঁধে কমোড ফেলার একটা ভিডিও করেছিলেন তিনি। সেই ভিডিওটা দেখিয়ে পরে অনেক হাসাহাসিও হয়। পরে অবশ্য সেই ভিডিওটির আর কোনো কপি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বৈমানিক স্টোডার্ড ১৯২৭ সালের ৩০ জানুয়ারি আমেরিকার আটলান্টায় জন্মগ্রহণ করেন। এই রসিক কিংবা প্রতিবাদী মানুষটির মৃত্যু হয়েছিলো ১৯৭৩ সালে, বিমান বাহিনীতে কর্মরত অবস্থায়।

(ঢাকাটাইমস/১ডিসেম্বর/টিজেটি/কেএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :