আলুর দামে ধস, দিশেহারা কৃষক-ব্যবসায়ী

মহিউদ্দিন আহমেদ, গজারিয়া (মুন্সীগঞ্জ)
 | প্রকাশিত : ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৮:২২

মাস ছয়েক ধরে চাল আর মাস তিনেক ধরে সবজি ও পেঁয়াজের বাজার অস্থির। গণমাধ্যমের পাতায়ও বেড়েছে পণ্যগুলোর কদর। কিন্তু এর ভিড়ে নিত্যপণ্য হিসেবে বহুল ব্যবহার করা আলুর দাম ক্রমেই কমছে। যে কৃষক ভরা মৌসুমে না বেচে আলু সংরক্ষণ করেছিল, যে হিমাগার মালিক বা ব্যবসায়ী লাভের আশা করেছিল সবাই এখন লোকসানে।

বাজারে আলুর দাম কম বলে ভোক্তারা স্বস্তিতে। আর এ নিয়ে সংবাদও তেমন একটা প্রকাশ হচ্ছে না গণমাধ্যমে। কিন্তু বাজার তদারকিতে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির হিসাবে গত বছরের এই সময়ের তুলনায় পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে ৪৬ শতাংশ কম দামে।

শীত শেষে ভরা মৌসুমে আলুর দাম কম থাকে বলে কৃষক পুরো পণ্য বাজারে না তুলে একটি অংশ আটকে রাখে। বড় ব্যবসায়ীরাও বাজার থেকে আলু কিনে মজুদ করে। আর বড় ক্রয় হয় বলে মৌসুমে কিছুটা ভালো দাম পায় কৃষক।

কিন্তু যারা এভাবে গত মৌসুমে আলু রেখেছেন, তারা এখন ক্রয়মূল্যেই তা বেচতে পারছে না। এর বাইরে আট থেকে নয় মাস হিমাগারে রাখার ভাড়া এবং যারা ঋণ নিয়ে আলু কিনেছিলেন, তাদের ওপর বসেছে সুদের খড়্গ। দুইয়ে মিলে দিশেহারা তারা।

টিসিবির হিসাবে সোমবার ঢাকার খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হয়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে। এক মাসে দাম কমেছে কেজিতে পাঁচ টাকা। নভেম্বরের শুরুতেও পণ্যটি বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে। আবার গত বছর ডিসেম্বরে পণ্যটির দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে আলু।

রাজধানীর বাজারে যখন এই দাম, তখন আলুর প্রধান উৎপাদন যেসব এলাকায় সেস স্থানে দাম আরও কম।

আলু চাষের জন্য বিখ্যাত মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগার কর্তৃপক্ষ সবাই বড় লোকসানের মুখে। কেবল গত মৌসুমে মজুদ করা আলুতে লোকসান নয়, সামনে বাজারে আসার অপেক্ষায় থাকা ফসল নিয়েও উদ্বেগে থাকতে হচ্ছে চাষিদের।

কৃষক ও হিমাগার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বস্তা (দুই মণ) আলুর ক্রয় মূল্য ছিল আটশ থেকে এক হাজার টাকা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে হিমাগার ভাড়ার সাড়ে তিনশ টাকা। কিন্তু পাইকারি বাজারে এই আলুর দাম এখন ছয় থেকে সাতশ টাকা।

গত বছর জমি থেকে আলু সংগ্রহের সময় অতি বৃষ্টি, ঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মাটি কাদা মিশ্রিত আলু হিমাগারে সংরক্ষণে বাধ্য হয়েছিল কৃষক। সেই আলুর একটি অংশে আবার ধরেছে পচন। এই পচন ধরা আলু আলাদা করতে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের আবার গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।

মাথাভাঙ্গা গ্রামের আলু ব্যবসায়ী অনোয়ার হোসেন জানান, নিজের ৭০ বিঘা জমির উৎপাদিত আলুসহ প্রায় চার হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ করেছিলেন তিনি। কিন্তু হিমাগারে প্রতি বস্তায় কম করে চার থেকে পাঁচশ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে তার। একইভাবে লোকসানের মুখে আলুচাষী হাবিব মিয়া, রাসেদ মিয়া ও শহিদুল্লাহ মুফতি।

আলু সংরক্ষণের হিমাগার মেঘনা মাল্টিপারপাস এর ব্যবস্থাপক সিরাজুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, চলতি বছর ২৮৮ জন কৃষক ও ব্যবসায়ী তার প্রতিষ্ঠানে এক লাখ সতেরা হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ। আবার আলু সংরক্ষণের জন্য ১২৭ জন কৃষককে তারা ঋণ দিয়েছেন কোটি টাকার উপরে। লোকসানি আলু চাষি হিমাগার ভাড়া পরিশোধ করতেই যেখানে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে ঋণ আদায় নিয়ে অনিশ্চয়তায় তারা।

আলুর এই মূল্য পতনকে অস্বাভাবিক বলছেন গজারিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক আহমেদ নূর।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, আলুর চাহিদা ও উৎপাদন নিয়ে কোনা বছরই পরিস্কার ধারণা পাওয়া যায় না। কোনো কোনো বছর চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বা সরবরাহ কম হলে দাম বেড়ে যায় অস্বাভাবিকভাবে। কিন্তু প্রায় বছরই অতিরিক্ত উৎপাদন কমিয়ে দেয় দাম, আর লোকসানে ফেলে কৃষক।

আবার একবার লোকসানে পড়লে পরের বছর আলু চাষে উৎসাহ হারায় কৃষক। এতে পরের বছর চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমলে দাম বেড়ে যায় দাম।

ঢাকাটাইমস/০৫ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :