যে কারণে ধূমপানে ঝুঁকছে কিশোররা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ১০:১০
ফাইল ছবি

ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও নিজের হতাশা দূর করতে ও অল্প বয়স থেকেই এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওঠে অনেকে। আর এ ক্ষেত্রে কিশোরদের মধ্যে ধূমপানে আসক্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। ফলে খুব অল্প বয়েসেই হতাশাগ্রস্তসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগতে হয় ধূমপায়ীদের।

সম্প্রতি ভারতের ছয়টি শহরে এক হাজার ৯০০ জন টিনএজারের ওপর সমীক্ষার পর গবেষকরা বলছেন, ‘ভারতের ৫০ শতাংশ টিনএজার মনে করে ধূমপান করলে তাদের স্ট্রেস কমবে এবং তাদের বন্ধুদের কাছে নিজেদের ‘কুল’ ইমেজ তৈরি করতে পারবে। অপরদিকে ৫২ শতাংশ টিনএজার মনে করে, ধূমপান তাদের মনোসংযোগ বাড়াতে সাহায্য করবে। এদের মধ্যে ৯০ শতাংশ টিনএজারই তাদের ধূমপানের অভ্যাস বজায় রাখতে চায়।’

সমীক্ষায় আরও বলা হয়, ‘৮০ শতাংশ মনে করে জীবনে অন্তত একবার ধূমপানের অভিজ্ঞতা হওয়া উচিত। ৮৭ শতাংশ টিনএজারের কাছে টেলিভিশন, সিনেমায় অভিনেতাদের ধূমপান করতে দেখলে ধূমপানের ঝোঁক বাড়ে বলে জানিয়েছে। ৭৮ শতাংশ মনে করে সেলিব্রিটিরা ধূমপানবিরোধী প্রচারে অংশ নিলে তা ধূমপানের অভ্যাস কমাতে সাহায্য করবে। ৬০ শতাংশের ওপর টিনএজারের মতে, ধূমপান রুখতে বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণের ওপর আরও জোর দেয়া প্রয়োজন।’

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে, ‘বিশ্বে প্রতি বছর ৭০ লক্ষ মানুষ মারা যান ধূমপানের কারণে। ল্যান্সেট জার্নালে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বিশ্বের ৬৪ লাখ মৃত্যুর মধ্যে ১১ শতাংশই ছিল ধূমপানজনিত অসুস্থতার কারণে। যার মধ্যে ৫২.২ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে চীন, ভারত, রাশিয়া ও ব্রিটেনে। ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ৯০ শতাংশই হয় ধূমপানের কারণে, ক্রনিক পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি-তে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ৮০ শতাংশের ক্ষেত্রেই মূল কারণ ধূমপান।’ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুতেও ১৭ শতাংশ ক্ষেত্রে ধূমপানকেই দায়ী করেছেন গবেষকরা।

ধূমপান প্লেগের মতোই ক্ষতিকারক। এই অভ্যাসের সূত্রপাত কৈশোরে হয় এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথেই শারীরিক সমস্যা শুরু হয় বলে মন্তব্য করেন ভারতের মনোবিদ ও বিহেভিয়ারিয়াল সায়েন্টিস্ট সমীর পারেখ।

সিগারেট ছাড়া পর শরীরে যে পরিবর্তন হয়:

১. সিগারেট খাওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যেই শরীরের রক্তচাপ কমে গিয়ে স্বাভাবিক হয়ে যায়। হাত ও পায়ে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।

২. শেষ সিগারেট খাওয়ার আট ঘণ্টার মধ্যে শরীরে জমে থাকা কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। একই সাথে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ায় ফুসফুস থেকে ক্ষতিকারক ও অস্বস্তিকর ব্যাকটেরিয়া দূর হয়।

৩. এই সময়ের মধ্যে ফুসফুসে জমে থাকা নিকোটিন শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ফলে স্বাদ ও ঘ্রাণ শক্তি বাড়ে।

৪. ধূমপান ছেড়ে দেয়ার তিন দিনের মধ্যে আপনার ব্রঙ্কিয়াল টিউব প্রসারিত হবে। ফলে স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে পারবেন, এনার্জি ফিরে আসবে, স্ট্রেস কমবে।

৫. দুই সপ্তাহ থেকে দুই মাস সময়ের মধ্যে শরীরে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হয়ে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। ফলে হাঁটাচলা করতে আগে যারা হাঁফিয়ে উঠতেন, এই সময় থেকে তা কমে গিয়ে এনার্জি ফিরে পায়।

৬. তিন থেকে নয় মাস সময় থেকেই আগের মতো নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট কম হয়। ধূমপানের কারণে যে খুকখুকে কাঁশি হতো তাও অনেক কমে আসে। ব্রঙ্কিয়াল টিউবের ফাইবার আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে থাকে যা ফুসফুস থেকে ব্যাকটেরিয়ার দূর করে পরিষ্কার রাখে।

৭. যারা কোনোদিনও ধূমপান করেননি তাদের তুলনায় ধূমপান ছাড়ার এক বছর পরও ধূমপায়ীর হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে দ্বিগুণ।

৮. সিগারেট ছেড়ে দেয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। কোনোদিন ধূমপান না করলেও যে ঝুঁকি থাকে, পাঁচ বছর পর ঝুঁকির পরিমাণ ঠিক ততটাই কমে আসে।

৯. ধূমপানের ফলে ফুসফুসের যে ক্ষতি হয়, ধূমপান ছেড়ে দেয়ার পর ১০ বছর সময় লাগে ফুসফুসের আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে।

১০. ধূমপান ছেড়ে দেয়ার ১৫ বছর পর হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ততটা, যতটা এমন কারও যিনি কোনোদিন ধূমপান করেননি।

(ঢাকাটাইমস/০৭ডিসেম্বর/এএকে/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ

করোনায় ধূমপায়ীদের মৃত্যু হার ৩ গুণ বেশি: গবেষণা

বিদায়ী উপাচার্যের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রশ্নে যা বললেন ডা. দীন মোহাম্মদ

বিএসএমএমইউতে নতুন উপাচার্যকে বরণ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি  

অ্যানেস্থেসিয়ায় হ্যালোথেন ব্যবহার বন্ধ করতে বললো স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, কেন এ নির্দেশ?

হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় বাদাম!

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ইনসাফ বারাকাহ হাসপাতালে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প

বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসে জানুন সংক্রামক এ রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত

মৃগী রোগ সম্পর্কে কতটা জানেন? এর লক্ষণ আর চিকিৎসাই বা কী?

এক যুগ আগেই জানা যাবে আপনি মূত্রাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত কি না

কীভাবে চিনবেন প্রাণঘাতী অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার? বাঁচতে হলে জানুন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :