ত্রাণ বেচে ক্যাম্প থেকে পালানোর চেষ্টায় রোহিঙ্গারা

মোসলেহ উদ্দিন, উখিয়া (কক্সবাজার)
 | প্রকাশিত : ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৮:১৯

কক্সবাজারের উখিয়ায় ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা এত পরিমাণ ত্রাণ পাচ্ছে যে তা তাদের প্রয়োজনকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে। ফলে বাড়তি এই ত্রাণ তারা বিক্রি করছে। আর হাতে টাকা আসার পর তারা ক্যাম্প ছেড়ে দেশের অন্যত্র চলে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

এরই মধ্যে পুলিশ বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া তিনশ বস্তারও বেশি চাল এবং ক্যাম্প থেকে পালানোর চেষ্টার সময় দুইশটিরও বেশি পরিবারকে আটক করেছে। তবে তাদের নজরদারি এগিয়ে বহু পরিবার ক্যাম্প থেকে পালিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকাতেও একাধিক রোহিঙ্গা পরিবার ধরা পড়েছে।

আবার বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে বেচে দেয়ায় ক্যাম্পের আশপাশের দোকানিরা পড়েছেন ঝামেলায়।

বাংলাদেশে আসার পর থেকেই সরকারি, বেসরকারি পর্যায় থকে তো বটেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে বিপুল পরিমাণ ত্রাণ। আর বিতরণে যুক্ত হয়েছে সেনাবাহিনী, সবাই যেন সমানভাবে পায়, সে উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।

আবার রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা।

উখিয়ার কুতুপালং অস্থায়ী ক্যাম্প-১ ও ২, বালুখালী-১ ও ২, থাইংখালী হাকিমপাড়া, তাজনিমারখোলা, ময়নারঘোনা, শফিউল্লাহকাটা, জামতলি ঘুরে দেখা যায়, ক্যাম্পের ভেতরে বসান হয়েছে মৌসুমি হাটবাজার। এসব হাটবাজারে নিত্যপণ্য ছাড়াও রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণ করা চাল, ডাল, তেল, দুধ, কম্বল, খাদ্য সামগ্রী ও শীত বস্ত্র বিক্রি হচ্ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী নজির আহমদ, সুলতান আহমদ, শামসুল আলমসহ একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, তারা বিভিন্ন নিত্যপণ্য বিক্রি করতেন। কিন্তু রোহিঙ্গারা কম দামে ত্রাণ বিক্রি করে দেয়ার কারণে তাদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

ফলিয়াপাড়া গ্রামের নাজির হোসেন, ছৈয়দ আকবরসহ বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, শতশত রোহিঙ্গা ত্রাণ বিক্রির জন্য বিভিন্ন লোকালয়ে চলে যাচ্ছে। এমনকি বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা চাল, ডাল, তেল বিক্রি করছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক মৌসুমি হাটবাজার গড়ে উঠায় রোহিঙ্গারা ত্রাণ বিক্রির সুযোগ পাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কুতুপালংয়ের আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল হক খান। তিনি বলেন, ত্রাণ বিক্রি মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের হাতেকড়ি হচ্ছে। আর আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হয়ে উঠার কারণে শতশত রোহিঙ্গা পরিবার-পরিজন নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে।

ক্যাম্প ছেড়ে বিভিন্ন এলাকায় চলে যাওয়ার সময় পুলিশ, বিজিবি সদস্যরা এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক রোহিঙ্গা পরিবারকে আটক করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেন, ‘তারা ত্রাণ বিক্রির টাকা নিয়ে স্বজনদের কাছে আশ্রয়ের জন্য চলে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে।’

প্রতিদিন সন্ধ্যায় সদর হাটবাজারে রোহিঙ্গারা শীত বস্ত্র, চাল, ডাল, তেল বিক্রি করতে দেখা গেছে। কুতুপালং ক্যাম্পের বাসিন্দা আলি হোসেন জানান, তার পাঁচ সদস্যের পরিবারের জন্য চাহিদার তুলনায় বেশি ত্রাণ মিলছে। এ কারণে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী রেখে বাকিগুলো বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক হামিদুল হক চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গাদের প্রকাশ্য, গোপনে বিভিন্ন দাতা সংস্থা যেভাবে ত্রাণ ও নগদ টাকা দিচ্ছে তাতে রোহিঙ্গারা বেশ অর্থকড়ি কামাচ্ছে। আর টাকা যোগাড় হলে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ক্যাম্প ছেড়ে অন্যত্রে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে জানান, গোপনে ত্রাণের চাল বাইরে বিক্রির সময় তিনশ বস্তা চাল উদ্ধার করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজাও দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ত্রাণ সামগ্রী রোহিঙ্গারা যাতে বাইরে বিক্রি করতে না পারে সে জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ কাজ করছে। এছাড়া চেকপোস্টে নিয়মিত তল্লাশি চালানো হচ্ছে।’

ঢাকাটাইমস/০৮ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :