‘সৌদিতে খালেদার অর্থপাচার’

ক্ষমা না চাইলে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা: বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৫:৫০ | প্রকাশিত : ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ১১:৪৮

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সৌদি আরবে বিপুল পরিমাণ সম্পদ থাকা এবং অর্থপাচার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে অভিযোগ তুলেছেন তা পুরোপুরি মিথ্যা বলে দাবি করেছে বিএনপি। এই বক্তব্যের জন্য খালেদা জিয়া এবং দেশবাসীর কাছে ক্ষমা না চাইলে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

সরকার আকণ্ঠ দুর্নীতিতে জড়িয়ে আছে দাবি করে ফখরুল বলেন, আপনাদের মুখে সুনীতি, সুশাসন, সততা শুধু বেমানান নয় হাস্যকর।’

গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কানাডাভিত্তিক টেলিভিশন নিউজ ইন্টারন্যাশনালের খবর নামে একটি ভিডিও ছড়াচ্ছে। এতে বলা হচ্ছে, সৌদি আরবে খালেদা জিয়া ও তার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। সে দেশে খালেদা জিয়া শপিং মল ‘আল আরাফাহ’ এবং কাতারের বাণিজ্যিক ভবন ‘তিপরার’ মালিক বলে জানানো হয়েছে কথিত ওই সংবাদে।

আবার বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকো কাতারে ইকরা নামে একটি বহুতল ভবনের মালিক।

বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়াকে এই অর্থপাচারের জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

তবে এই সংবাদ বাংলাদেশের মূলধারার বেশিরভাগ গণমাধ্যম প্রচার করেনি। এ জন্য বৃহস্পতিবার গণমাধ্যম মালিকদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রশ্ন তোলেন রসগোল্লা খেয়ে এই সংবাদ প্রচার বন্ধ রাখা হয়েছে কি না। আর বা তার পরিবারের সদস্যদের নামে এমন খবর আসলে গণমাধ্যম মালিকরা কী করতেন, সে প্রশ্নও তোলেন প্রধানমন্ত্রী।

এই ভিডিওর বিষয়ে এতদিন চুপচাপ ছিল বিএনপি। তবে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধানমন্ত্রীকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

ফখরুল বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা সৌদিতে ফোন দিয়েছি, গণমাধ্যম ঘেঁটে দেখেছি। কোথাও এ ধরনের তথ্য নেই।’

‘আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই এই সব বানোয়াট তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি ও প্রতিবাদ করছি। অবিলম্বে এ ধরনের মানহানিকর মিথ্যা বক্তব্য প্রত্যাহার করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে আগামীতে এ ধরনের অশালীন, রুচিবর্জিত, রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত মিথ্যা বানোয়াট বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কাল্পনিক এই সব দুর্নীতির কল্পকাহিনির মূল উদ্দেশ্য দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা এবং রাজনৈতিকভাবে তাকে জনগণের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা মাত্র।’

‘প্রধানমন্ত্রীর এই ধরনের মিথ্যা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বক্তব্য শুধু অশালীন নয় এটা বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য।’

খালেদা জিয়া বা তার পরিবারের কারো বিরুদ্ধে বিদেশে সম্পদ পাচার বা বিনিয়োগ অভিযোগ আজ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি বলেও দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, ‘অবৈধ ফখরুদ্দীন ও মইনউদ্দীন সরকার এবং শেখ হাসিনার অনৈতিক অবৈধ সরকার তন্ন তন্ন করে সারা বিশ্বে খোঁজ করেও আজ পর্যন্ত কোন সম্পদের অস্তিত্ব পায়নি।’

গণমাধ্যমে প্রশংসা

মূলধারার গণমাধ্যম সৌদি আরবে খালেদা জিয়ার কথিত সম্পদের সংবাদ প্রকাশ না করায় প্রশংসা করেন মির্জা ফখরুল। বলেন, ‘কল্পিত এই সব তথ্যের উপর ভিত্তি করে দায়িত্বশীল গণমাধ্যম স্বাভাবিকভাবেই তা প্রকাশ করেনি।’

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং সম্পদের কল্পকাহিনি তৈরি করে ‘জোর করে’ গণমাধ্যমকে দিয়ে তা প্রচারের অপচেষ্টা হিসেবেও দেখছেন ফখরুল। বলেন এটি শেখ হাসিনার প্রতিহিংসাপরায়নতা, সংকীর্ণতা, অন্তসারশূন্যতা ও দেউলিয়াপনার প্রমাণ।

কাচের ঘরে ঢিল ছুড়বেন না

খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা সরকার নিজেই দুর্নীতিতে ডুবে আছে বলে অভিযোগ করেন ফখরুল। কাচের ঘরে ঢিল না ছোড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মেগা প্রজেক্টের নামে যে মেগা লুট করছেন তা জনগণ জানে। পদ্মাসেতু প্রকল্প, রূপপুর অনবিক শক্তি প্রকল্প, পায়রা বন্দর, এক্সপ্রেসওয়ে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ভিওআইপি, স্যটেলাইট স্টেশন, প্রতিটি সেতু, সড়ক, মহাসড়ক, প্রতিটি আন্তর্জাতিক টেন্ডারে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লুটে যে অভিযোগ উঠছে জনগণ তা হিসাব নিচ্ছে।’

‘এ দেশের পত্র-পত্রিকা, বিদেশের পত্র-পত্রিকা, আপনাদের দলের মন্ত্রী, নেতা ও পরিবারে সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। কানাডার বেগম পাড়া, বৃটেন, আমেরিকা, মালোশিয়া, সিঙ্গাপুর, বেলারুস, সুইস ব্যাংক, পানামা অবশোর ইনভেস্টমেন্ট তালিকায় আপনাদের অনেকের নাম উঠে আসছে। ফ্লোরিডা, ওয়াশিংটন ডিসি, সিএটল বাফেলোসহ আমেরিকা ও কানাডাসহ ব্যায়বহুল শহরগুলোতে কাদের সন্তানদের এবং পরিবারে সদস্যদের নামে বাড়ি ও সম্পদ কেনা হয়েছে তার হিসেব জনগণ রাখছে।’

দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা কারা লোপাট করেছে জনগণ তারও হিসাব রাখছে।’

‘দুই বার শেয়ার মার্কেট লুট করে অসংখ্য সাধারণ বিনিযোগকারীদের নিঃস্ব করা হয়েছে’ মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে দুর্নীতির পাকা ব্যবস্থা করা হয়েছে। জমি, বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শাসকদের লোকেরা দখল করছে প্রতিদিন। সাধারণ মানুষসহ রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের সদস্যদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে।’

ট্রাম্পের নিন্দা

সংবাদ সম্মেলনে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করেন ফখরুল। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়ার দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।

ঢাকাটাইমস/৮ডিসেম্বর/এএকে/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :