উবারে কার কত আয়?

কাজী রফিকুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৮:৪৫

গাড়ি চালিয়ে সপ্তাহে আয় করা যাবে বিশ হাজার টাকা। অর্থাৎ মাসে আশি হাজার টাকারও বেশি। কথাটা শুনে পিলে চমকে ওঠার মতই। তবে এ বিজ্ঞাপনের মূল হোতা উবার বলছে এটা একেবারেই অসম্ভব নয়। বরং ঢাকা শহরের মতন বিপুল জনসংখ্যার শহরে বিষয়টিকে বেশ দ্রুতই সম্ভব করেছে ভাড়া গাড়ির ইন্টারন্যাশনাল চেইন 'উবার'। মোবাইলের এ্যাপের মাধ্যমে চলা এ প্রযুক্তি নির্ভর যানবাহন সেবা খুব অল্প সময়ের ভেতর অত্যন্ত দ্রুত গতিতে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমে শুরু হয়েছিলো প্রাইভেটকার দিয়ে। সম্প্রতি তার সাথে যুক্ত হয়েছে মোটরসাইকেল। সব মিলিয়ে উবার এখন রাজধানীবাসীর হাতের নাগালের দৈনন্দিন বাহন।

ব্যক্তিগত গাড়িকে ভাড়ায় খাটাবার বারোয়ারি পদ্ধতি তৈরি করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে ‘উবার’। গত বছর 'উবার’ বাংলাদেশে আসে। তারপর থেকেই এর সুবিধা পেতে যাত্রীরা যেমন আগ্রহী হয়ে ওঠেন, তেমনি আগ্রহী হন গাড়ি মালিক এবং চালকরা। উবার বাংলাদেশে আসার পরই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানায়, চালকদের জন্য সপ্তাহে ২০ হাজার টাকা আয় করার সুযোগ রয়েছে। তখন বিষয়টা অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য ঠেকে। কিন্তু সেটাকে অল্প সময়ের মধ্যেই সত্যি প্রমাণ করে ছাড়ে উবার। এমনকি একবছর পর এখনও সপ্তাহে ২০ হাজার বা তার কাছাকাছি আয় করছেন এমন চালক অনেক রয়েছেন রাজধানীতে।

যদিও এরকম আকাশ ছোয়া এ আয়ের বিষয়টা মানতে নারাজ অনেকেই। বিশেষ করে প্রথাগত রেন্ট এ কার ব্যাবসায়ীরা উবারের আয়ের অংকটা একদমই বুজরুকি বলে মনে করেন। যদিও তাদের কেউই উবারের কাছে গাড়ি ভাড়া দেননি তারপরও এরকম নেতিবাচক ধারনা বদ্ধমূল। তাদেরই একজনের সাথে কথা বলতে গিয়ে রিতিমত বিব্রত হতে হলো। উবারের আয়ের অংকটা শুনেই একরোখা ভাষায় রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়ী মো: আব্দুল কাইয়ুম বলেন, "মাসে আশি হাজার টাকা কামান গেলে আমরা বইসা আছি কেন? আমগো তো মাসে ত্রিশ হাজার টিকাইতে কষ্ট হয়। আপনাগো এই সব আশি হাজার এক লাখের কথা কয় কেডা?"

কিন্তু উবার নিয়ে এরকম নেতিবাচক কথা বললেও বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। উবারে গাড়ি চালাতে এসে চালকদের মাসিক আয় বেড়েছে এবং মালিকরাও লাভবান হচ্ছেন বলে জানা গেলো। চালকদের কয়েকজনের সাথে কথা বলেই এর সত্যতা পাওয়া গেছে। গত ছয় মাস ধরে উবারে গাড়ি চালাচ্ছেন রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগরের বাসিন্দা মো: ফরহাদ হোসেন। ঢাকাটাইমসকে তিনি জানান, "আমি ছয় মাস ধরে উবারে গাড়ি চালাই। গাড়ি যে মালিকের, আগে তারই চাকরি করতাম। বেতন দিত ষোল হাজার। এখন সে নতুন গাড়ি কিনে দিছে, আমি সেইটাই উবারে চালাই। সকাল ১০/১১ টায় বের হই, রাত ১২ পর্যন্ত ট্রিপ দিই। উবার যদি বলে তারা সপ্তাহে ২০ হাজার ইনকামের সুযোগ দেয়, তো মিথ্যা তো কিছু বলে নাই। আমার গাড়ি মালিকেরতো প্রায় ২০ হাজার টাকার মতই ইনকাম হয়। কিন্তু যে গাড়ির ড্রাইভার আধাবেলা গাড়ি চালাবে, শুক্রবার ছুটি কাটাবে, সে কিভাবে এক সপ্তাহে ২০ হাজার আয় করবে?আর গাড়ি চালাইলেও উবারের খরচ আমার দেয়া লাগে না, প্রতি ট্রিপে ওরা ১০০ টাকার বোনাস দেয় সেটার সাথেই ওদের বিল কাটাকাটি হয়ে যায়। মাস শেষে গ্যাস খরচ বাদ দিয়ে ৭০ হাজারের মত থাকে। পাঠাও আসার পর ট্রিপ একটু কম আগের তুলনায়। তারপরও ৬০ এর নিচে কোনো মাসে নামে নাই।"

উবারে নতুন চালক যুক্ত করতেই হোক কিংবা সপ্তাহে ২০ হাজার টাকা আয় করার সুযোগ দিতেই হোক, চালকদের জন্য নানান রকম সুবিধার ঝাপি খুলে বসে আছে উবার। ট্রিপ প্রতি একশ টাকা হারে বোনাস দেয়া হচ্ছে চালকদের। প্রতিদিন দশটি ট্রিপ আর সপ্তাহে ছয়দিন কাজ করলেই সপ্তাহান্তে ছয় হাজার টাকা পাবেন একজন উবার চালক। প্রশ্ন উঠতে পারে এর বিপরীতে উবার কি নিচ্ছে? উবার মোট ভাড়ার শতকরা পঁচিশ শতাংশ কমিশন হিসেবে কেটে নেয়। অর্থাৎ উবারের কমিশন বাদ দিয়ে ভাড়ার বাকি টাকার পুরোটাই মালিকের। আর তেল, গ্যাস, মবিল, মেরামত, ড্রাইভারের বেতন এসব কিছু বাদ দিয়ে যা থাকে সেটাই হলো আয়। তেলের খরচ বাদ দিয়ে ৭০ হাজার টাকার মত গাড়ি মালিকের থাকে। সেখান থেকে ড্রাইভার বেতন বাদ দিলে ৪০ হাজার টাকার মত গাড়ি মালিকের লাভ।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, উবারের দেয়া আশি হাজার টাকার কতটা চালকরা নিতে পারছেন? এক্ষেত্রে বোঝার বিষয় হচ্ছে কেউ যদি নিজের গাড়ি নিজেই চালায় তাহলে ভাড়ার ২৫ শতাংশ বাদ দিয়ে বাকি টাকাটা চালকের পকেটে যাচ্ছে। যদিও পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের অধিকাংশ গাড়ি চালকই চাকুরি নির্ভর এবং তাদের নিজস্ব গাড়ি নেই। তবে এটাও সত্যি যে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যক্তিগত গাড়ি চালানোর চেয়ে চালকদের কাছে উবার চালানোটা অনেক বেশি অর্থকরি এবং লাভজনক। কেননা উবারের কারনে চালকরা ব্যাক্তিগত গাড়িতে চাকরি করার চেয়ে তুলনামূলক বেশি আয় করার সুযোগ পাচ্ছেন। তাই ব্যাক্তিগত গাড়ি চালাবার চাইতে উবারের গাড়ি চালানোর দিকেই ঝুকছেন চালকরা। কেননা বেতনের বাইরেও এক্ষেত্রে বৈধ ভাবে বাড়তি টাকা আয়ের সুযোগ থাকছে। বেশির ভাগ চালকই জানালেন তাদের গাড়ির মালিক নিজের গাড়িটিকে উবারে সংযুক্ত করে, ড্রাইভারের বেতন বাড়িয়ে দিয়ে ব্যাবসা করছেন। এক্ষেত্রে ড্রাইভাররা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মত বেতন পান উবারে গাড়ি চালালে। যা কিনা ব্যাক্তিগত গাড়ির চেয়ে প্রায় ৮-১০ হাজার টাকা বেশি।

নবীনগরের বাসিন্দা মো. মোসারফ হোসেন মালিকের ব্যাক্তিগত গাড়ি চালানো বাদ দিয়ে এখন উবারের গাড়ি চালাচ্ছেন। ঢাকাটাইমসকে বললেন, "আগে প্রাইভেট মালিকের ডিউটি করতাম। বেতন নিয়া ঝামেলা করত। মাস শেষ হইলেও বেতন পাইতাম না। চাকরি ছাইড়া এখন যে মালিকের গাড়ি চালাই তার গাড়ি দিয়া উবারের ডিউটি করায়। টাকা আমার হাতেই থাকে। বেতন নিয়া ঝামেলা নাই। তেলের খরচ মালিকের। আমি মাসে ৩০ হাজারের মত পাই। খাটনি বেশি হইলেও আগের চাইতে অনেক ভাল আছি।"

উবার আসার আগে মো. ইউসুফ খাঁ সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালাতেন। উবার সম্পর্কে জানার পর থেকে সিএনজি বাদ দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন উবারে। জানালেন উবার আসায় বেড়েছে তার আয়, কমেছে ঝামেলা। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, "আগে সিএনজি চালাতাম। আয় কম ছিল। ঝামেলা ছিল। সার্জেন আটকাইত, যাত্রী ভাড়া নিয়া কাউকাউ করত। এখন ছোট ছোট ক্ষ্যাপ মারি, ভাড়া নিয়া চিল্লাচিল্লি নাই। প্রথম কয় দিন একটু বুঝতে ঝামেলা হইত। এহন বুঝি। এহন তো আবার অফার চলে, যাত্রীও বাড়ছে। ভাল আছি ভাই। যে যা কউক, আমরা তো ভাল আছি। দুই টাকা বেশি আয় করতে পারি।"

(ঢাকাটাইমস/ ৮ ডিসেম্বর/ কারই/ কেএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :