হুমকির মুখে ঐতিহ্যবাহী কাঠের শিল্প

প্রকাশ | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৮:৪৯

রিফাত আলম, ঢাকাটাইমস

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের মধ্যে কাঠের তৈরি আসবাব অন্যতম। সময়ের ব্যবধানে বাংলার ঐতিহ্যের তালিকাতেও জায়গা করে নিয়েছে এই শিল্প। আধুনিক যুগে এসে রড আয়রন, স্টিল আর প্লাস্টিকের তৈরি আসবাবের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে কালের অতল গহ্বরে। চাহিদা কমতে কমতে ধীরে ধীরে হুমকির মুখে পড়েছে ঐতিহ্যের কাঠের তৈরি আসবাব শিল্প।

অথচ টেকসই আর দীর্ঘস্থায়ী বলে এখনও গ্রামের মানুষের কাছে এর কদর রয়েছে। বাড়িতে বাড়িতে বাপ দাদার আমলে তৈরি কাঠের তৈরী বিভিন্ন রকমের ব্যবহার সামগ্রী এবং আসবাবপত্র দেখতে পাওয়া যায়।

যদিও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে গত এক দশকে পার্টেক্স ও লোহার তৈরি রেডিমেড আসবাবপত্রের দোকান গড়ে উঠেছে মোড়ে মোড়ে। দিন দিন লোহা ও পার্টেক্স বোর্ডের রেডিমেট আসবাবপত্রের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে শহরবাসীর মধ্যে। খুবই স্পস্ট একটা পার্থক্যও দেখা দিয়েছে আমাদের সমাজে, ঘরের আসবাবপত্রের উপর ভিত্তি করে। চাহিদার কারণেই আধুনিক উপাদানে তৈরি আসবাবের কাছে হার মানছে কাঠের শিল্প।

এতে কাঠের কারিগর সহ এ পেশার মানুষের জীবিকা কর্মহীন হয়ে পরেছে। জীবিকার তাগিদেই অনেকে বাপ দাদার পুরানো পেশা বদলে ভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন।

যারা ধুকে ধুকে টিকে আছেন তারাও আছেন কষ্টে। সুযোগ খুজছেন অন্য কোনো পেশায় চলে যাবার। সদরঘাট এলাকার কাঠের আসবাবের কারিগর মিলন মিয়া বলেন, ‘আমরা পিস প্রতি চুক্তিতে কাজ করি। অসুখ বিসুখ যাই থাকুক, যেভাবেই হোক হাজিরা দিয়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দৈনিক আয় করতে হয়। তা নাহলে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যায়।’

আসবাব কারখানার মালিক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘দোকানে ক্রেতা আসে কম। তাই কাঠের তৈরি আসবাবপত্র বিভিন্ন মেলায় হাট-বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। আগে এই কাঠের আসবাব সবাই কিনতো। এখন দরিদ্র মানুষই বেশীর ভাগ কেনে, আর আমরা অল্প লাভে তাদের কাছে বিক্রি করে দিই।’
আরেক কারিগর হালিম বলেন, ‘বর্তমানে দেশে আয়রন, পার্টেক্সের বোর্ডের ফার্নিচার বাজারে ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়াতে আমাদের কাঠের তৈরী আসবাবপত্রগুলোর আগের মত চাহিদা নেই।’

রড আয়রন, স্টিল কিংবা বোর্ডের তুলনায় কাঠের তৈরি আসবাবপত্রর দাম বেশি হওয়ার কথা জিজ্ঞাস করলে তিনি জানান, কাঠের দাম, নকশা করার খরচ আর কারিগরের পারিশ্রমিকসহ খরচ হয় বেশি। তাই চাইলেও রট আয়রন কিংবা স্টিলের আসবাবের দামে কাঠের আসবাব বিক্রি করা সম্ভব না।

ক্রেতারাও দাম কম বলে এসব আসবাবের দিকেই ঝুকছেন। ধোলাইখালের ‌'রহিম ফার্নিচার' এ রেডিমেড আসবাবপত্র কিনতে আসা নিবিড় রহমান জানালেন ফরমায়েশ দিয়ে কাঠের আসবাব কেনার চেয়ে রেডিমেড আসবাব কেনা তার জন্য সহজ এবং সাশ্রয়ী। কেন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দাম তুলনামূলক ভাবে অনেক কম। টেকে অনেকদিন আর নাড়া চাড়া করতে সুবিধা হয়। তাই কাঠের আসবাব কেনার চেয়ে রেডিমেড ফার্নিচার কেনাটাই সুবিধা।’

(ঢাকাটাইমস/৯ডিসেম্বর/আরএ/কেএস)