সোফিয়া-নাফিসে জমেছে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড
এবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড কতটা জমেছে? নগরের প্রযুক্তিপ্রেমীদের কাছে কাছে যদি এমন প্রশ্ন করা হয় তবে তিনি হয়তো না ভেবেই বলে দেবেন রোবট সোফিয়া এবং অস্কার বিজয়ী নাফিসের কথা। এই দুয়ে মিলে তথ্যপ্রযুক্তির এই উৎসব প্রথম দিন থেকেই জমজমাট।
৬ ডিসেম্বর সকালে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর এটি সবার জন্য সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। যদিও সকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের আশেপাশে ভিড় জমাচ্ছিলেন দর্শনার্থীরা। কেননা, দুপুরে রোবট সোফিয়াকে সকলের সামনে উপস্থাপন করার কথা ছিল। আর জন্য দল বেধে হাজার হাজার প্রযুক্তিপ্রেমী সোফিয়ার সঙ্গ পাওয়ার আসায় ভিড় জমান হল অব ফেমে। সেখানে রীতিমত তিল ধারণের জায়গা ছিল না। স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেকেই সোফিয়াকে চাক্ষুষ দেখতে পারেনি। ফলে কিছুটা অপ্রীতিকর অবস্থা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু যারা রোবটটির কথা কাছ থেকে শুনতে পেরিছিলেন তারা যারপরনাই খুশি হয়েছেন। কেননা, তারা এই ধরণের রোবট এর আগে দেখার সুযোগ পাননি।
রোবট সোফিয়ার সঙ্গে ছিলেন তার উদ্ভাবক ডেভিড হ্যানসনও। রোবটটি বাংলাদেশের জামদানির প্রশংসা করে। এছাড়াও সে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আগ্রগতির কথাও সমাগত সামনে উপস্থাপন করে।
আর ডেভিড হ্যানসন শোনালেন আশার বাণী। তিনি জানালেন চাইলে বাংলাদেশও সোফিয়ার মত এমন কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার রোবট তৈরি করতে পারে। কেননা, এর সফটওয়্যার ওপেন সোর্স প্লার্টফর্মে আছে।
ডেভিড হ্যানসন বলেন ‘আপনারা চাইলে সোফিয়ার মতো সটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। সোফিয়ার মতো রোবটও বানাতে পারেন।’ ডেভিড বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই রোবট বানানোর স্বপ্ন দেখতাম। আমি ৩০ বছর আগে প্রথম রোবট বানিয়েছিলাম। আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ও সাধনার ফল সোফিয়া।’
এদিকে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের দ্বিতীয় দিন দুপুরে হাজির হন দুই বার অস্কার জয়ী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাফিস বিন জাফর। তার বক্তব্য শুনতে হল অব ফেমে উপচেপড়া ভিড় ছিল।
তরুণদের অ্যানিমেশন ফিল্মে আগ্রহী করে তুলতে উৎসাহ করে তিনি বলেন, ‘অ্যানিমেশন ফিল্মে বিজ্ঞানের সবোত্তম ব্যবহার হয়। এখানে যেমন গ্রাফিক্স লাগে তেমনি লাগে গনিত, জ্যামিতি, ভিজুয়াল ইফেক্টস। এটা আসলে একটা গল্প বলার মত। দৃশ্যকল্প গুলোকে সফটওয়্যারে সাজাতে হয়। এজন্য স্টোরি টেলিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
তরুণদের উদ্দেশ্য করে নাফিস বলেন, আপনার যদি এই সেক্টরে কাজ করতে চান তবে থিয়েটারে কাজ করুন। নাটকে কাজ করুন। প্রথমে ছোট গল্প তৈরি করুন। শট ফিল্ম বানান। প্রয়োজনে টিভিতে শিক্ষানবীস হিসেবে কাজ করেন। এসব কাজ করতে করতে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার কোন কাজটা ভালো লাগে। একটা নাটক কিংবা ছবিতে শুধু ক্যারেক্টার ছাড়াও পেছনে অনেক কিছু থাকে। সেগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে হবে। না হলে ভালো ফিল্ম মেকার হওয়া যাবে না।
নাফিস জানান তার ছবিতে হাতেখড়ি হয়েছিল ২০০০ সালে। তখন তিনি ইমেজ প্রসেসিং সফটওয়্যার নিয়ে কাজ শুরু করেন। এরপর নানা ধরণের ইমেজ প্রসেসিং সফটওয়্যার ও ভিজুয়াল ইফেক্টস শিখেছেন। এ নিয়ে তার ভাষ্য, ‘একটা ছবিতে নানা বিষয় থাকে। এমন কিছু বিষয় থাকে যা তৈরি করতে প্রচুর অর্থ ব্য় হয়। কিন্তু এগুলো যদি আপনি অ্যানিমেশনের সাহায্যে করেন তবে সময়ও যেমন বাঁচতে তেমনি খরচটাও কমে যাবে। বাস্তব দৃশ্যকে ছবিতে অ্যানেশন ও ইফেক্টস দিয়ে বাস্তবের কাছাকাছ নিয়ে আসা যায়।
রোবট সোফিয়া এবং অস্কার জয়ী নাফিস ছাড়াও ফেসবুক, অ্যাংরি বার্ডস এবং জুমলার মত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা এবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে আয়োজিত বিভিন্ন কর্মশালা, সেমিনার এবং কনফারেন্সে অংশ নিয়ে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এসব তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য শুনতে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ছিল সরগরম।
আজ সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৭ এর পর্দা নামছে।
(ঢাকাটাইমস/৮ডিসেম্বর/এজেড)