ডাকসু নির্বাচনে ভিসির আশ্বাসে অনশন ভাঙলেন আশরাফ

প্রকাশ | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৬:০৬ | আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৮:১৬

এন এইচ সাজ্জাদ, ঢাবি প্রতিনিধি

ঢাকসু নির্বাচনের দাবিতে শুরু করা অনশন অবশেষে ১৫ দিন পর ভাঙলেন ওয়ালিদ আশরাফ। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের আশ্বাসে আশরাফ তার অনশন ভাঙেন।

তবে আশরাফ ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে তার আন্দোলন থেকে সরেননি বলে জানিয়েছেন গণমাধ্যমকে। আর তাকে সমর্থন জোগাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

ওয়ালিদ আশরাফ বলছেন, ‘যেহেতু ভিসি স্যার এসেছেন তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমি এই অনশনের ইতি টানছি। তবে স্যারের কথায় আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট তা না। আমি তার কাছে আশা করছিলাম তফসিল ঘোষণার নির্দিষ্ট তারিখ।’

আগের উপাচার‌্যদের মতোই অধ্যাপক আখতারুজ্জামান আশ্বাস দিলেও আশাবাদী ওয়ালিদ আশরাফ। তিনি বলেন, ‘আগের সবার মতো তিনিও আশ্বাস দিয়েছেন। তবে আশা করি তিনি তা বাস্তবায়ন করবেন।’

আশ্বাস বাস্তবায়ন করার আশ্বাসের কথা সাংবাদিকদেরও শুনিয়েছেন উপাচার্য। একই সঙ্গে তিনি জানান, দ্রুতই সেটা করা সম্ভব হবে না।

আশরাফের সঙ্গে দেখা করতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জাবাবে উপাচার্য বলেন, ‘২৭ বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায়, যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে আমাদের কিছু সময় লাগবে। কারণ হঠকারী করে কিছু করা যাবে না। তবে নির্বাচন না হওয়ার যে অপসংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছে তা আমরা অবশ্যই দূর করব।’

এ সময় উপাচাযের সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মাকসুদ কামাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক।

সর্বশেষ ১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ডাকসু নির্বাচন। সেবার বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের মনোনীত আমানউল্লাহ আমান ‍ও খায়রুল কবির খোকনের প্যানেল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় ডাকসু ও হল ছাত্র সংসদগুলোতে। তখনকার স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার হটানোর আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এই ডাকসুর।

গণতন্ত্র-উত্তর গত ২৭ বছরে আর কোনো ডাকসু কিংবা হল সংসদের নির্বাচন হয়নি। প্রচলিত আছে এ সময়ে ক্ষমতায় যারাই এসেছে তারা চায়নি ডাকসু নির্বাচন হোক। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে বরাবরই উদাসীন থাকতে দেখা যায়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিসহ আর সব সংগঠনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে নিয়মিত।

ডাকসু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়ে উপাচার‌্য অনশন ভাঙালেও আশরাফের দাবি পূরণ হয়নি বলছেন বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা। তারা বলছেন, ‘উপাচার্য ডাকসু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু এখনো পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেননি। এদিকে হাইকোর্টের বেঁধে দেওয়া ছয় মাস সময়সীমার প্রায় তিন মাস শেষ হওয়ার পথে।’

 বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী ডাকসু নির্বাচনের জন্য তিন মাস আগে তফসিল ঘোষণা করতে হয়।

দীর্ঘদিন ধরে ডাকসু নির্বাচন না দেওয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে চলতি বছরের ১৯ মার্চ রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর আহম্মদ, সাবেক জিএস ড. মোস্তাক হোসেন ও বর্তমান অধ্যয়নরত জাফরুল হাসান নাদিমের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা সচিব, ঢাবি উপাচার্য, উপ-উপাচায, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরকে রুলের জবাব দিতে বলার পাশাপাশি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে ডাকসু নির্বাচন কেন দেওয়া হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়।

এর আগে গত ৪ মার্চ ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের ৫০তম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ঢাকসু নির্বাচন না হওয়ার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য ডাকসু নির্বাচন ‘মাস্ট’। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

কিন্তু বাস্তবতা হলো এখনো পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগের কথা জানা যায়নি।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ নভেম্বর বিকেল পাঁচটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন প্রাঙ্গণে অনশনে ব্রতী হন ওয়ালিদ আশরাফ। এই ১৫ দিনে শারীরিক দুর্বলতার কারণে তাকে ঢাকা মেডিকেল তিনবার ভর্তি করা হয়। বেশ কয়েকবার স্যালাইন নিতে হয় তাকে।

ওয়ালিদ আশরাফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের ২০১১-২০১২ সেশনের সন্ধ্যাকালীন কোর্সের মাস্টার্সের ছাত্র ছিলেন। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের রুশ ভাষার শিক্ষার্থী।

অনশনস্থল থেকে উপাচায চলে যাওয়ার পর সেখানে উপস্থিত হন ওয়ালিদের মা-বাবাসহ তার বেশ কয়েকজন আত্মীয়। তখন তার মা তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ওয়ালিদের মা-বাবাকে সান্ত্বনা দেন তার সহপাঠীরা। 

ইতিহাস বলছে, ঢাকসু নির্বাচন নিয়ে উপাচার্যের আশ্বাসের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। নব্বইয়ের দশকের পর থেকে এই পর্যন্ত মোট আটজন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেছেন, তার মধ্যে ছয়জন পূর্ণ মেয়াদে এবং দুজন ভারপ্রাপ্ত হিসেবে।

২৭ বছরে বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি ও প্রতিবাদের মুখে এই আট উপাচার্য ডাকসু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কেউই আশ্বাসকে বাস্তবে রূপ দিতে সমর্থ হননি।  তাদের মধ্যে সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ ও মনিরুজ্জামান মিয়া তফসিল ঘোষণা করলেও শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে শেষমেশ নির্বাচন আর হয়নি।

(ঢাকাটাইমস/৯ডিসেম্বর/মোআ)