ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ৫০০ বছরের বিথঙ্গল আখড়া

পাবেল খান চৌধুরী, হবিগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ১০ ডিসেম্বর ২০১৭, ১০:০৫

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার তথা হাওর এলাকার অন্যতম সেরা আকর্ষণ বিথঙ্গল আখড়া। প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসেন ৫০০ বছরের পুরোনো এই আখড়াটি দেখতে। রামকৃষ্ণ গোস্বামী উপমহাদেশের বিভিন্ন তীর্থস্থান সফর শেষে ষোড়শ শতাব্দীতে আখড়াটি প্রতিষ্ঠা করেন।

বানিয়াচং উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম হাওরপাড়ে বিথঙ্গল গ্রামে এ প্রাচীন আখড়াটি অবস্থিত। যা বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম তীর্থস্থান। বিশাল এই আখড়ায় মোট কক্ষ আছে ১২০টির মতো।

লোকমুখে জানা যায়, কক্ষগুলোতে ১২০ জন বৈষ্ণব থাকতেন। তবে বর্তমানে বৈষ্ণব বসবাস করছেন মাত্র কয়েকজন। জানা গেছে, শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ গোস্বামী বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিথঙ্গলে এসে এতদঞ্চলের অন্যতম তীর্থ ক্ষেত্র এই আখড়ার প্রতিষ্ঠা করেন। রামকৃষ্ণ গোস্বামী হবিগঞ্জের রিচি পরগণার অধিবাসী ছিলেন। তরুণ বয়সে তিনি উপমহাদেশের বিভিন্ন তীর্থ স্থান সফর শেষে বিথঙ্গল এসে এই আখড়া প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলা ১০৫৯ সনে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ গোস্বামী দেহত্যাগ করেন।

আখড়ায় শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ গোস্বামীর সমাধিস্থলের উপর একটি সুদৃশ্য মঠ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মঠের সামনে একটি নাট মন্দির এবং পূর্বপাশে একটি ভাণ্ডার ঘর এবং দক্ষিণে একটি ভোগ মন্দির রয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকটি পুরাতন ইমারত আছে। ৫০০ বছর আগে ত্রিপুরার রাজা উচ্চবানন্দ মাণিক্য বাহাদুর প্রাচীন নির্মাণ কৌশলসমৃদ্ধ দুটি ভবন নির্মাণ করে দেন। মাণিক্য বাহাদুর ও তার স্ত্রী ওই আখড়ায় বসে প্রায়ই ধর্মকর্ম করতেন। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে বর্তমানে ধ্বংসের সম্মুখীন প্রাচীন এই আখড়াটি।

বর্তমান আখড়ার পুরাতন ইমারতগুলো জরাজীর্ণ হয়ে ধ্বংসের প্রহর গুণছে। ইতোমধ্যেই এর অনেক দর্শনীয় বস্তু বিনষ্ট হয়ে গেছে। বিশেষ করে সংস্কারকালে আখড়ার প্রাচীন সৌন্দর্য রক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে ভবিষ্যতে আখড়ার ঐতিহাসিক গুরুত্ব হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আখড়ায় পালিত উৎসবাদির মধ্যে আছে কার্তিক মাসের শেষ দিন ভোলা সংক্রান্তি কীর্তন, ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দোল পূর্ণিমার পাঁচ দিন পর পঞ্চম দোল উৎসব। চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে ভেড়ামোহনা নদীর ঘাটে ভক্তগণ স্নান করেন। স্নানঘাটে বারনীর মেলা ও আষাঢ় মাসে দ্বিতীয় রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি উৎসবে হাজার হাজার ভক্ত যোগদান করেন। আখড়ায় অনেক দর্শনীয় বস্তুর মধ্যে রয়েছে ২৫ মণ ওজনের শ্বেত পাথরের চৌকি, পিতলের সিংহাসন, রথ, রৌপ্য নির্মিত পাখি, মুকুট ইত্যাদি।

আখড়ার বর্তমান বৈষ্ণব সুকুমার দাস জানান, আখড়ার নিজস্ব ৪০ একর জমির উৎপাদিত ফসল ও ভক্তদের দানে যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ হয়। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে এলাকাবাসী প্রতিদিন রোগবালাই হতে পরিত্রাণের জন্য আখড়ায় এসে আশীর্বাদ নিয়ে যান।

আখড়া কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুব্রত কুমার বৈষ্ণব ঢাকাটাইমসকে জানান, উপজেলা কিংবা জেলা সদরের সাথে বিথঙ্গলের উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী প্রাচীন এ আখড়া পরিদর্শন করতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হন। দেশের প্রাচীনতম এ ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি সংরক্ষণে সরকারের সংশিষ্ট বিভাগের বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলেও জানান সুব্রত কুমার বৈষ্ণব।

কীভাবে আখড়ায় যাওয়া যায়

হবিগঞ্জ জেলা সদর থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রায় ১৪ মাইল দূরবর্তী বিথঙ্গল আখড়ায় বর্ষাকালে কালারডোবা নৌকাঘাট থেকে ইঞ্জিন নৌকায় করে যেতে হবে। যাওয়া-আসার নৌকা ভাড়া দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। শুকনো মৌসুমে হবিগঞ্জ-আজমিরীগঞ্জ সড়কে শিবপাশা হয়ে নাভানা মাইক্রোবাস বা জিপে যাওয়া-আসার ভাড়া আড়াই হাজার টাকা। থাকা-খাওয়ার খুব ভালো ব্যবস্থা সেখানে নেই।

(ঢাকাটাইমস/১০ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেনী সরকারি কলেজে শিক্ষার্থীদের গণইফতারে ছাত্রলীগের হামলা, আহত ১০

মধ্যরাতে ফের মিয়ানমারের গুলির শব্দে কেঁপে উঠল টেকনাফ সীমান্ত

উত্তরবঙ্গের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক, দুর্ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি

বরগুনা প্রেসক্লাবের নামে ভুয়া কমিটি গঠনের অভিযোগ 

ঝিনাইদহে বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকারের অভিযান, ৩ প্রতিষ্ঠানে জরিমানা

যারা ট্রেনে আগুন দেয় তারাই ভাড়া বৃদ্ধির গুজব ছড়ায়: রেলমন্ত্রী

আলফাডাঙ্গায় দিনব্যাপী ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত

মানিকগঞ্জে ব্যবসায়ী হত্যা মামলায় ৫ জনের যাবজ্জীবন

সিলেটে পিকআপ-লেগুনা সংঘর্ষে একই পরিবারের ৫ জন নিহত

অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত প্রক্টর ও সহপাঠী রিমান্ডে

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :