২০০৮ সালের চেয়েও বড় বিজয় দেখছেন জয়

প্রকাশ | ১১ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৬:৫৬ | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৯:৪৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে বেশি ব্যবধানে আওয়ামী লীগের জয়ের প্রত্যাশা করছেন প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ‘বিজ্ঞানসম্মত’ জরিপে এই বিষয়টি উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

রবিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ের দলের সম্পাদকমণ্ডলী এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র এবং সরকার প্রধানের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা।

সংবাদ সম্মেলনের আগে জয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বিকাল তিনটা থেকে দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন। এরপর সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী পুত্র।

জয় বলেন, ‘আরেকটা সুখবর জানাতে আমি এসেছি। আগামী নির্বাচন নিয়ে আমি জরিপ করেছি। দলকে জানাতে যে, আমার জরিপের রেজাল্ট এত ভালো আসছে যে, আজকে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে বুঝা যাবে আগের চেয়েও বেশি ভোট পাবে আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের চেয়েও ল্যান্ড স্লাইড (ভূমিধস) জয় পাবে আওয়ামী লীগ।’

‘এবং এটা সায়েন্টিফিকেলি জরিপ করে আমরা পেয়েছি। এখানে আওয়ামী লীগের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এ কথাটা জানাতে আমি এসেছি।’

কোন প্রতিষ্ঠান এই জরিপ করেছে-এমন প্রশ্নে জয় বলেন, ‘জরিপটা আমরা প্রত্যেক বছরই করি। সেটা আমাদের একটা কোম্পানি আছে, সেটা থেকেই করি। এটা আমার বিষয়, এটা নিয়ে আমি স্টাডি করেছি, কাজ করেছি। তো আমার বিশ্বাস হচ্ছে আমার জরিপ হচ্ছে মোস্ট একুরেট (সবচেয়ে সঠিক) জরিপ।’

১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর সব দলের অংশগ্রহণে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে বিজয়ী ও বিজিত দলের মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যবধান হয়েছিল ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০ আসনে বিজয়ী হয়। তার আগের ক্ষমতাসীন বিএনপি ৩০টি আসন পায়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ে মাত্র তিনটি আসন বেশি পায় বিএনপি।

ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে পায় প্রায় ৪৯ শতাংশ ভোট। তখন তারা ভোট পায় তিন কোটি ৩৬ লাখ ৩৪ হাজার ৬২৯টি। আর বিএনপির পক্ষে পড়ে ৩৩.২ শতাংশ ভোট।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনে ২৩৪ টি আসন পায়। তবে শতাধিক আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন দলের প্রার্থীরা। যেসব আসনে ভোট হয়েছে সেই ১৪৭ আসনে দলটি ভোট পায় এক কোটি ২৩ লাখ ৫৭ হাজার ৩৭৪টি, যা মোট ভোটের ৭২ দশমিক ১৪ শতাংশ।

২০১৮ সালের শেষ দিকে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পূরণ না হওয়য় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি-জামায়াত জোট এবং সমমনা দলগুলো। তাদের দাবি, নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোট হলে বিপুল ভোটে জিতবে তারা।

তবে হয় বলেন, ‘ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে হারানোর মতো কোনো দল বাংলাদেশে নেই।’

‘মন্ত্রী-এমপি হওয়ার ইচ্ছা নাই’

গত নির্বাচনের মতই আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা নেই জানিয়ে জয় বলেন, ‘প্রার্থী হচ্ছি না। আমার উদ্দেশ্য দলকে ক্ষমতায় রাখা। এমপি-মন্ত্রী হওয়ার লোভ আমার নেই। এটা ভবিষ্যতে দেখা যাবে। দলকে কীভাবে ক্ষমতায় রাখতে পারি এটাই আমার লক্ষ্য।’

জয় বলেন, ‘এতদিন শুধু ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। ইয়ংবাংলা, সিআরআই এগুলো নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু এখন দলকে আগামী নির্বাচনে আবার জেতাতে কাজ করব।’

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারের কোন পরিবর্তন আছে কি না-এমন প্রশ্নে জয় বলেন, ‘গত নির্বাচনে আমি আমার দলের জন্য ক্যম্পেইন করেছি। ভেবে নিতে পারেন যে এখন থেকেই শুরু। প্রচারণা আমরা সবদিক থেকেই চালাব। আপনার খেয়াল করে দেখবেন আমরা চার বছর ধরেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। যেহেতু নির্বাচন ছিল না সে কারণে বিপুল ভাবে হয়নি। এখন হবে।’

নির্বাচনী প্রচারণায় শেখ হাসিনার কোন ফেসবুক বা টুইটার একাউন্ট খোলার চিন্তা আছে কি না-এমন প্রশ্নে জয় বলেন, ‘ওনার নাম দিয়ে ফেইসবুক-টুইটার একাউন্ট করা যায় কিনা এটা নিয়ে আমরা ভাবছি, করবো কিনা যাচাই করছি। এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।’

‘পরিকল্পনা আমরা করেছি, আমাদের আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেইজ, আমার নিজস্ব ফেইসবুক পেইজ, এগুলোতে আমরা আমাদের যে সকল তথ্য দেওয়ার সেগুলো আমরা বিতরণ করছি।’

‘ভোট নিয়ে চক্রান্ত চলছে’

২০১৪ সালের মতই আগামী সংসদ নির্বাচন বানচালে বিএনপি-জামায়াত ষড়যন্ত্র করছে বলেও অভিযোগ করেন জয়। আর এ জন্য নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার তাগাদা দেন তিনি।

জয় বলেন, ‘ষড়যন্ত্র তো লেগেই আছে, আমাদের নজর রাখতে হবে, আগামী এক বছর। কোন দুর্ঘটনা, যেগুলো আমরা গত নির্বাচনে দেখেছি, যেভাবে আমাদের দেশের মানুষের উপর আগুন দিয়ে সন্ত্রাস চালিয়েছে, এরকম ঘটনা যাতে না হয়।’

‘কাউকে ভোটে আনতে বাধ্য করতে পারি না’

বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে আনতে কোনো ধরনের উদ্যোগ এবং আলোচনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার ছেলেও কথা বললেন একই সুরে।

আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ বিষয়ে জয় বলেন, ‘আমরা তো কাউকে বাধ্য করতে পারি না যে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে । এটা হচ্ছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। কোন দল যদি নির্বাচনে না আসতে চায়. এটাতে আমাদের কিছু করার নেই, এটা আমাদের দায়িত্ব না।’

‘অনেক জায়গায় তাদের টাকা আছে’

বিদেশে জিয়া পরিবারের বিপুল পরিমাণ সম্পদ থাকার বিষয়ে আওয়ামী লীগের অভিযোগ অভিযোগ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে তোলপাড় চলছে দেশে।

জয় বলেন, ‘তাদের টাকা তো আগেও ধরা পড়েছে, এফবিআই পেয়েছে। এবারও ধরা পড়েছে। এটা তো কিছুই না, নিশ্চয়ই আরও টাকা তাদের আছে, আরও অনেক জায়গায় যেটা আমরা জানি না।’

পৃথিবীর কোথাও খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের নামে কোনো একাউন্ট নেই- বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জয় বলেন, ‘এখানেই তো প্রমাণ হচ্ছে তারা কীভাবে মিথ্যা কথা বলে। তারেক রহমান এবং কোকো রহমানের বিরুদ্ধে এফবিআই এসে সাক্ষী দিয়ে গেছে। তারা দুর্নীতি করেছে, ঘুষ নিয়েছে, তাদের টাকা পাওয়া গেছে। সেটা দেশে ফিরিয়েও আনা হয়েছে। এফবিআই এসে বাংলাদেশে সাক্ষী দিয়ে গেছে। সেখানে মির্জা ফখরুল কীভাবে বলেন তাদের বিশ্বের কোথাও কোন একাউন্ট নেই?’।

জিয়া পরিবারের বিদেশে অর্থ সম্পদ থাকার অভিযোগের বিষয়ে জয় বলেন, ‘এই খবর তো আমাদের কাছ থেকে আসে নাই। এটা আন্তর্জাতিক মিডিয়া থেকে এসেছে, যে তাদের সৌদিতে ১২ বিলিয়ন ডলার পাওয়া গেছে।’

(ঢাকাটাইমস/১১ডিসেম্বর/টিএ/ডব্লিউবি)