ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতেই: অ্যাটর্নি জেনারেল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৫:০৮ | প্রকাশিত : ১২ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৪:৫৯

বিচার বিভাগের কর্মী এবং বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ, কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ অন্যান্য শৃংখলা বিধান রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি জানান, সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করেই রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত নেবেন।

মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা এ কথা বলেন। অধঃস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রনের বিষয়ে গেজেট নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।

সুরেন্দ্র কুমার সিনহা প্রধান বিচারপতি থাকাকালে অধঃস্তন বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে সরকারের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের টানাপড়েন তৈরি হলেও তার পদত্যাগের পর আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠান খসড়া সুপ্রিম কোর্ট গ্রহণ করেছে।

সিনহার আমলে বেশ কয়েকবার সময় নেয়ার পর আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠান খসড়া ফিরিয়ে দিয়েছিল আপিল বিভাগ। তবে অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্‌হাব মিয়া ও অন্যান্য বিচারপতির সঙ্গে আইন মন্ত্রীর আলোচনায় বিষয়টি নিয়ে একটি সমঝোতায় আসে দুই পক্ষ।

এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, গেজেট প্রকাশে তিনি অকেটাই ভারমুক্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মাঝখানে আমাকেই অবস্থান নিতে হয়। যাকে বলে সেতুবন্ধন। সুতরাং সুপ্রিম কোর্টের একটি আগ্রহ ছিল এটা এতো দিন হচ্ছে না কেন। আর বারে বারে আমাকে সময় নিতে হয়েছে। সেটা আমার জন্য নিশ্চয় বিব্রতকর ছিল। আমার সেই বিব্রতকর অবস্থার পরিসমাপ্তি হলো। আগামীকাল আদালতের কাছে একটা দরখাস্ত দিয়ে দাখিল করব।’

আগের খসড়া এবং এখনকার গেজেটের মধ্যে মূল তফাতটা কী-জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি যেটা চেয়েছিল, আমি যতদূর বুঝতে পেরেছি, সেটা হলো সমস্ত ক্ষমতাটা সুপ্রিমকোর্টের হাতেই থাকবে। সেটা তো সংবিধানবিরোধী একটা অবস্থান। সংবিধানে আছে রাষ্ট্রপতি করবেন কিন্তু সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে করবেন।’

সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অবস্থান কি সংবিধান বিরোধী ছিল জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘১১৬ যে পর্যন্ত সংবিধানে আছে, এখন যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থায় তো সর্বময় ক্ষমতা সুপ্রিমকোর্টের হাতে দিয়ে দেয়া যায় না।’

‘প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি যেটা চেয়েছিলেন, যে এটা সম্পূর্ণ রূপে বিচার বিভাগের হাতেই থাকবে। সেটা তো হতে পারে না। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন জাতীয় ঐক্যের প্রতীক।’

‘রাষ্ট্রপতি সংসদ, শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ। এই সবটারই একজন সেতু বন্ধন বলতে হবে। বা রাষ্ট্র ঐক্যবদ্ধ থাকে কিন্তু রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে। এ ব্যাপারগুলোকে বাদ দেয়া যাবে না।’

সাবেক প্রধান বিচারপতির কারণেই গেজেট প্রকাশে দেরি হয়েছে কি না জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘মাননীয় আইনমন্ত্রী যা বলেছেন, আমি তার রিপিট করতে চাই না।’

বিচার বিভাগের সঙ্গে যে একটা দ্বন্দ্ব ছিল এই গেজেটের মাধ্যমে তার অবসান হলো কি না-এমন প্রশ্নে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘এই ব্যাপারে আইনমন্ত্রী বলেছেন, কাজেই আামি আর কিছু বলতে চাই না। তিনি নিজেই বলেছেন কেন এতো দিন হয়নি।’

‘সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ীই সব হয়েছে’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সংবিধানের ১১৬ অনুযায়ী জুডিশিয়াল সার্ভিস রুল বিধিমালা প্রণয়ন হয়েছে। এর বিভিন্ন পর্যায়ে অভিযোগ, অনুসন্ধান কীভাবে হবে তার পর এটার অনুসন্ধানের পরে এদের সাময়িক বরখাস্ত কীভাবে হবে এবং এদের অপরাধের তদন্ত কিভাবে হবে সব ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে এ্‌ই বিধিমালায় উল্লেখ করা আছে।

‘রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন স্তরে পদক্ষেপের ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করবেন এটি বিস্তারিত বলা আছে। এছাড়াও যদি সুপ্রিমকোর্ট মনে করে স্বপ্রণোদিত হয়ে তারা কোনো অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার। তাহলে তারা রাষ্ট্রপতিকে জানাতে পারবেন। এই পরামর্শের ধারাবাহিকতায় বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে। কাজেই এটা এখন আর নিম্ন আদালতের যারা বিচারক আছেন বা যারা বিচার সংশ্লিষ্টকাজে নিয়োজিত আছেন তাদের শৃংখলার ব্যাপারে, তাদের অ্যাডমেনিস্ট্রেটিভ অ্যাকশনের ব্যাপারে কোনো রকম বাঁধা রইলো না।’

নিম্ন আদালতের বিচারকদের অভিযোগগুলোর তদন্ত এবং সেটার ফয়সালা কীভাবে হবে- এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এটার ফয়সালাটা হবে। এখানে রাষ্ট্রপতি অ্যাপয়েন্টিং অথোরিটি। রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন বা তিনি যদি জ্ঞাত হন যে অসাদাচরণ হচ্ছে তাহলে সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমেই পদক্ষেপ নেয়া হবে এবং দণ্ড দেয়ার ক্ষেত্রেও সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ নেবেন। বিভিন্ন পর্যায়ে সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ এটা সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে। সেটারই প্রতিফলন এই বিধিমালায় ঘটেছে।’

‘রাষ্ট্রপতি যে কোন পদক্ষেপই নেন না কেন সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে হবে।’

মাহবুবে আলম বলেন, ‘এটা স্পষ্টভাবে বলা আছে, যখন কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হবে, কারো বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া দরকার, অভিযোগ অনুসন্ধান করা দরকার বা বিচারবিভাগীয় তদন্ত দরকার সেখানেও রাষ্ট্রপতি সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হবে তখনও পরামর্শ করবেন।’

সব সিদ্ধান্তই রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে দেন। তাহলে বিচার বিভাগে কি নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণের আশঙ্কা থেকে যাবে?- এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘না, তা হবে কেন। একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যদি কোনো রকম অভিযোগ আসে এবং তার যদি বিচার করার প্রয়োজন হয় আর তা যদি রাষ্ট্রপতি নিজে নিজেই করে ফেলতেন তাহলে বলা যেত সেখানে বিচার বিভাগকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। তা তো করা হচ্ছে না। যাই করা হোক না কেন সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে করা হবে।’

গেজেটে কারণে সাবেক প্রধান বিচারপতির তোলা ‘দ্বৈত শাসন’ পরিস্থিতিই বিরাজমান থাকলো কি না- জানতে চাইলে মাহবুবে বলেন, ‘না, দ্বৈত শাসন কেন বলব? দ্বৈত শাসন যারা বলছেন তারা ঠিক বলছেন না।’

এই গেজেটে কোনো রকম অসঙ্গতি থাকলে সে বিষয়ে কী করবেন- এমন প্রশ্নে জবাব আসে, ‘অসঙ্গতি থাকার কোনো প্রশ্ন আসে না। তার কারণ সু্প্রিমকোর্টের সঙ্গে আইনমন্ত্রী বসেছেন এবং আমি যতটুকু জানি তাদের দেখিয়েই এগুলো করা হয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/১২ডিসেম্বর/এমএবি/ডব্লিউবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আদালত এর সর্বশেষ

ব্যবসায়ী নাসিরের মামলা: পরীমনিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি

বোট ক্লাব কাণ্ড: পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন

সেই রাতে ৮৭ হাজার টাকার মদ খেয়েছিলেন পরীমনি, পার্সেল না দেওয়ায় তাণ্ডব

বোট ক্লাব কাণ্ড: প্রতিবেদন দিল পিবিআই, ব্যবসায়ী নাসিরের মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন পরীমনি?

ড. ইউনূসকে স্থায়ী জামিন দেননি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল

সদরঘাটে লঞ্চ দুর্ঘটনা: আসামিদের তিনদিনের রিমান্ড

অরিত্রীর আত্মহত্যা: চতুর্থ বারের মতো পেছাল রায় ঘোষণার দিন, কী কারণ?

অরিত্রীর আত্মহত্যা: ভিকারুননিসার ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলার রায় আজ

বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বিকে হলের সিট ফেরত দেওয়ার নির্দেশ

আত্মসমর্পণের পর ট্রান্সকমের ৩ কর্মকর্তার জামিন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :