আজ বগুড়া মুক্ত দিবস

বগুড়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ১০:০৪

আজ ১৩ ডিসেম্বর বগুড়া মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে সামনা সামনি যুদ্ধে পাক বাহিনী পরাস্ত হয়। অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা শহরের ফুলবাড়ী এলাকায় পাক বাহিনীর ঘাটি আক্রমণের মধ্য দিয়ে বগুড়াকে হানাদার মুক্ত করেন।

বাংলাদেশের একমাত্র জেলা বগুড়া, যার দখল নিতে পাক বাহিনীর সময় লেগেছিল ২৩ দিন। তারপর মুক্তিযোদ্ধার সংগঠিত হয়ে পাক বাহিনীর বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আশেপাশের সকল থানা মুক্ত হলেও বগুড়া মুক্ত হতে সময় লাগে ১৩ ডিসেম্বর রাত ১০টা পর্যন্ত।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সকালে পাক বাহিনী রংপুর থেকে সড়ক পথে এসে বগুড়া দখল নিতে আক্রমণ চালায়। টানা পাঁচ দিন যুদ্ধের পর মুক্তিবাহিনীর তীব্র প্রতিরোধের মুখে তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়। পাক বাহিনীকে বগুড়া থেকে হটিয়ে দিতে এই কদিনে আজাদ, টিটু, তোতা, তারেকসহ প্রায় ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়।

১৭ এপ্রিল সড়ক এবং আকাশ পথে হামলা চালিয়ে আবারও বগুড়ার দখল নেয় পাক বাহিনী। এর পরপরই শুরু হয় তাদের নারকীয় হত্যাকাণ্ড। শহর এলাকা ছাড়াও তারা বগুড়ার শাজাহানপুরের বাবুর পুকুর এলাকায় সাতজন মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৪ জনকে গুলি করে হত্যা করে।

সেদিনের সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ভোর থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা বগুড়াকে শত্রু মুক্ত করার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। এজন্য তারা শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে নওদাপাড়া, চাঁদপুর ও ঠেঙ্গামারা এলাকায় নিজেদের অবস্থান সুসংহত করে। পরে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর ৬৪ মাউন্টেন্ট রেজিমেন্টের বিগ্রেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার প্রেম সিংহের নেতৃত্বে ট্যাংক নিয়ে তারা শহরের দিকে এগুতে থাকে। ওইসব এলাকার অসংখ্য যুবকও সেদিন তাদের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১৩ ডিসেম্বর সকালে তারা শহরের ফুলবাড়ী এলাকায় পৌঁছার পর পাক বাহিনীর সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। তবে সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পাক বাহিনী পিছু হটে। পরে ওইদিন দুপুরে ফুলবাড়ী সংলগ্ন শহরের বৃন্দাবন পাড়া এলাকায় পাক বাহিনীর প্রায় ৭০০ সৈন্য আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। তাদেরকে বন্দী করে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয়ে মিত্র বাহিনীর হেফাজতে রাখা হয়।

কথা হয় ওই সময়ের যুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা নজমল হক খানের সাথে। তিনি জানান, ওই সময় বর্তমান টিএমএসএস কার্যলয় এলাকা ঠেংগামারা গোকুল) পুরোটা আম বাগান ছিল। ওই আম বাগানে ভারতীয় আর্মিদের ঘাঁটি করা হয়। সেখানে তিনিও ছিলেন। যেদিন পাকিস্তানি আর্মিরা আত্মসমর্পণ করে সেই দিন তারা ওই আম বাগান থেকেই মুল যুদ্ধটা শুরু করেন। তারা সেখান থেকে মার্চ করতে করতে বর্তমান বগুড়া শহরের বড়গোলা এলাকায় এসে পাকিস্তান সেনাদের ধরে ফেলে। সেখানেই তারা আত্মসমর্পণ করে। নজমল হক আর জানান, যখন পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করে তখন তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। প্রথমে তারা তাদের হাতে থাকা অস্ত্র মাটিতে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধারা সেই অস্ত্রগুলো তাদের হাতে নেয়। তাদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়েই সেদিন বগুড়া মুক্ত হয়েছিল।

এদিকে ফুলবাড়ীতে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের স্মরণে ২০০৫ সালে ‘মুক্তির ফুলবাড়ী’ নামে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সম্বলিত স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। এছাড়া নভেম্বর মাসে শহরের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করে বাবুরপুকুর নামক স্থানে ধরে নিয়ে গিয়ে যে ১৪ জনকে গুলি করে হত্যা করে হানাদার বাহিনী সেই বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নির্মিত হয়েছে এক স্মৃতিসৌধ। তাদের সেই বীরগাঁথা কাহিনী আজকের এই দিনে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছে বগুড়াবাসী। কিন্তু বিজয়ের ৪৬ বছর পার হয়ে গেলেও বগুড়ার বধ্যভূমিগুলো এখনো অযত্ন এবং অবহেলায় পড়ে আছে।

(ঢাকাটাইমস/১৩ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :