‘পদ্মাবতী’ ও গুজরাট ভোটের সম্পর্ক কী?

চলতি বছরে বলিউডের সম্ভবত সবচেয়ে আলোচিত ও প্রতীক্ষিত ছবির নাম ‘পদ্মাবতী’। যা প্রায় সাতশো বছর আগে চিতোরের রানি পদ্মিনীর জীবন নিয়ে তৈরি। কিন্তু ছবির পরিচালক সঞ্জয় লীলা বানশালির এই ছবিকে ঘিরে তুমুল বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের পর এটির মুক্তিই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তার জন্য অনেকেই দায়ী করছেন ভারতের গুজরাটের নির্বাচনকে।

সে রাজ্যের প্রভাবশালী রাজপুত ভোটারদের তুষ্ট করতেই ক্ষমতাশীল দল বিজেপি ‘পদ্মাবতী’র বিরোধিতায় সরব হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর বিরোধী দল কংগ্রেসও তাতে গলা মিলিয়েছে। রাজপুত মর্যাদা রক্ষার নামে গুজরাটের নির্বাচনী রাজনীতি কীভাবে শিল্পীর স্বাধীনতাকে বিপন্ন করে তুলেছে, গুজরাটের পথে-প্রান্তরে চলছে তারই সন্ধান।

রাজপুতানার ঘুমর লোকনৃত্যের তালে নাচতে ভালবাসতেন চিতোরের রানি পদ্মিনী। যিনি দিল্লির শাসক আলাউদ্দিন খিলজির হাত থেকে সম্ভ্রম বাঁচাতে শত শত সঙ্গিনীকে নিয়ে আগুনে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। সংক্ষেপে এই হল বলিউডের ‘ম্যাগনাম ওপাস’ ‘পদ্মাবতী’ ছবির বিষয়বস্তু।

গত ১ ডিসেম্বর ছবিটি সারা ভারতেই মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্মাতা বানশালির সেই স্বপ্নে জল ঢেলে দেয় রাজপুতদের মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নটি। গুজরাটে রাজপুত নেতাদের অন্যতম বাপুনগরের বিজেপি এমএলএ জগরূপ সিং রাজপুত। তিনি বলছেন, ‘ভারতের দুর্ভাগ্য হল চিরকাল এ দেশে ইতিহাসকে বিকৃত করে পেশ করা হয়। মহারানা প্রতাপকে না-বলে আমরা নায়ক বলি আকবরকে।’ ‘হুমায়ুনের বীরগাঁথা গাই, অথচ শরীরে বিরাশিটা আঘাত নিয়ে যিনি তার সঙ্গে লড়েছিলেন সেই রানা সাঙ্গার কথা বলি না। রানি পদ্মিনী ঘোমটা ছাড়াই নাচছেন, ছবিতে এ দৃশ্য দেখাতে আমাদের সঙ্কোচ হয় না। অথচ বাস্তবে রাজপুত রমণীরা আজও ঘোমটা প্রথা মানেন। রাজপুত সমাজে তাদের আলাদা মর্যাদা দেয়া হয়।’

বলিউডের ‘পদ্মাবতী’ সেই মর্যাদার অবমাননা করেছে। এই যুক্তিতেই গুজরাটের বিজেপি সরকার রাজ্যে ছবিটির বিরোধিতা করেছে। রাজস্থানের বাইরে এই গুজরাটেও রাজপুতরা যথেষ্ট প্রতিপত্তিশালী। রাজ্যের বহু নেতা-রাজনীতিক-শিল্পপতি থেকে ক্রিকেট তারকা রবীন্দ্র জাদেজা, অনেকেই রাজপুত। আর তাদের আবেগকে উস্কে দিতেই যে এই সিদ্ধান্ত, তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই।

তবে সমাজবিজ্ঞানী ও গুজরাট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক রঞ্জনা ঢোলাকিয়া বলছিলেন, ‘ছবিটা কেউ দেখেইনি, অথচ সবাই ধরেই নিচ্ছে ওতে অমুক আছে বা তমুক আছে এবং রাজপুতদের অপমান করা হয়েছে।’ এটা যে গুজরাটের নির্বাচনের কারণেই, তা নিয়ে তার অন্তত কোনো সন্দেহ নেই।

তবে গুজরাট রাজ্যের একটা বড় অংশের জনমত যে ‘পদ্মাবতী’ ছবিটির বিরুদ্ধে, সেটা অবশ্য সহজেই টের পাওয়া যায়। গুজরাট নির্বাচনে প্রায় প্রতিটি বিষয়ে বিজেপির বিরোধিতায় সরব হলেও ‘পদ্মাবতী’র প্রশ্নে কিন্তু কংগ্রেসেরও অবিকল একই সুর।

গুজরাট কংগ্রেসের মুখপাত্র মনীশ দোশীর কথায়, ‘রানি পদ্মাবতীর আত্মত্যাগ ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। আমরা নতমস্তকে তাকে প্রণাম করি। সেই ইতিহাসকে দুমড়েমুচড়ে পেশ করে কেউ একটা জাতির আবেগকে আহত করবে, তা তো মানা যায় না।’

অনেকেরই ধারণা, চলতি মাসে গুজরাটে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সেটা আগেভাগে মাথায় রাখলে ‘পদ্মাবতী’র নির্মাতারা ছবির মুক্তিও হয়তো এ সময়ে ফেলতেন না! সূত্র: বিবিসি

ঢাকাটাইমস/১৩ডিসেম্বর/এএইচ