ইউপি সদস্যের এ কেমন বিচার

দুলাল হোসাইন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ০০:০৬ | প্রকাশিত : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ২৩:০৮

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে ছেলের বিরুদ্ধে চুরির সন্দেহে বাড়ি-ঘর গুড়িয়ে দিয়ে মা-বাবার হাত-পা বেঁধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্য ও তার সঙ্গীসাথীদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার প্রকাশ্যে উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের ভেবলা গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটে। নিজ ভিটে-মাটি থেকে উচ্ছেদ হওয়া ওই অসহায় পরিবারের সদস্যরা এখন শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

ওই পরিবারের এক শিশুর বইপত্র পুকুরে ফেলে দেওয়ায় স্কুলে দুই দিনের বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি সে। এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি জানায়, ভেবলা গ্রামের ফকির শেখের ছেলে মোবারক হোসেন হান্দুর ঘরে সোমবার দিবাগত রাতে চুরি হয়। এই চুরির ঘটনায় প্রতিবেশী দিনমজুর জালাল উদ্দিনের ছেলে মানিক মিয়ার ওপর সন্দেহ করে। পরে বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য বাদল মিয়াকে জানালে তিনি জালাল উদ্দিনের বাড়িঘর ভেঙে ফেলার নিদের্শ দেন। ইউপি সদস্যের নিদের্শে তার লোকজন মঙ্গলবার দুপুরে জালাল উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দুটি ঘরসহ আসবাবপত্র ভেঙে তাদের উচ্ছেদ করে দেন।

জালাল উদ্দিনের স্ত্রী রূমনী বেগম বলেন, ইউপি সদস্য বাদলের ভাই বাবলু মিয়া, ইলাহীর ছেলে আবদুস সাত্তার ও আব্দুলের ছেলে আলী হোসেনের নেতৃত্বে তাদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে সব মালামাল ভাঙচুর ও লুট করে নেয়। তারা রান্নার চাল-ডাল পর্যন্ত নিয়ে যায়। এ সময় জালাল ও তার স্ত্রীকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করা হয়।

বুধবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিনমজুর জালালের দুটি ঘর ভেঙে তছনছ ও ঘরের সব মালামাল টুকরো টুকরো করে ফেলে রাখা হয়েছে। এ সময় শূন্য ভিটায় মাথায় হাত দিয়ে ওই ভাঙাচোরার ঘর ও আসবাবপত্রের পাশে পাশে বসে কাঁদছিলেন জালালের স্ত্রী। দিনমজুরের শিশুকন্যা জাকিয়া আক্তারের বইপত্র পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আর উচ্ছেদকৃত ঘরের চাল ও টিনসহ কিছু মালামাল ইউপি সদস্য তাঁর বাড়ির পাশে স্তুপ করে রেখেছেন।

ভেবলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়–য়া দিনমজুরের শিশুকন্যা জাকিয়া আক্তার জানায়, তার সব বইপত্র পুকুরে ফেলে দেওয়ায় সে স্কুলে যেতে পারছে না। এমনকি গত বার্ষিক পরীক্ষার দুটি দিতে পারেনি সে।

এ ব্যাপারে দিনমজুর জালাল উদ্দিন জানান, তার ছেলে মানিক ৪-৫ বছর ধরে ঢাকায় রিকশা চালান। কয়েকদিন আগে তিনি বাড়িতে বেড়াতে আসেন। তার চলে যাওয়ার পরদিন চুরি হলেও এ ঘটনায় তার ছেলের ওপর সন্দেহ করে এলাকার কয়েকজন। তিনি বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে চুরির প্রমাণ হলে তাকে শাস্তি দিত। কিন্তু আমি গরিব বলে তারা আমার বাড়ি ঘর এবাবে ভেঙে দিল। এর কি কোনো বিচার নাই।?’।

চুরির যাওয়া বাড়ির মালিক মোবারক হোসেন হান্দু ও তার মেয়ে লিপি বেগম জানান, তারা মানিক মিয়াকে সরাসরি চুরি করতে দেখেননি; কিন্তু এর আগে বেশকিছু চুরিতে তার জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল বলে এই চুরিটাও মানিক করেছে বলে তাদের সন্দেহ।

কেবল সন্দেহ থেকে একটি পরিবারকে শাস্তি দেয়া আর বাড়িঘর ভেঙে দেয়ার মতো বেআইনি আদেশ দেয়ার কারণ জানতে চাইলে ভাটারা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য বাদল মিয়া জানান, ‘বিষয়টি আমার একার সিদ্ধান্ত না। লোকটি তার ছেলেকে এলাকার লোকদের হাতে তুলে না দেওয়ায় সবাই মিলে তার বাড়িঘর ভেঙে ফেলেছে। তাকে সাতদিনের সময় দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ছেলেকে এনে দিলে সব ফেরত দেওয়া হবে।’

এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন বাদল বলেন, ‘ওই ছেলের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে কিছু চুরির অভিযোগ শুনেছিলাম, তবে তার বাড়িঘর ভাঙার বিষয়টি জানি না। এমনটা হয়ে থাকলে ঠিক হয়নি। আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইয়েদ এজেড মোরশেদ আলী বলেন, ‘বিষয়টি আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।’

ঢাকাটাইমস/১৩ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :