মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনার নামে খোদ প্রশাসনের চাঁদাবাজি

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ২৩:১৬

বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দিতে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের নামে চাঁদাবাজি চলছে। এ নিয়ে বিভিন্নমহলে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একে চাঁদাবাজি না বলে সবার সহযোগিতায় অনুষ্ঠান করা হিসেবে দেখছেন।

সূত্র বলছে, দুর্গাপুরের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, বড় মাছচাষি, ইটভাটার মালিক, সার ও চালের ডিলার এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে এই চাঁদা চাওয়া হয়েছে। মাথাপিছু সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে। এভাবে অন্তত ১০ লাখ টাকা আদায়ের টার্গেট পূরণের চেষ্টা চলছে।

এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনার নামে এ চাঁদা আদায়ে খোদ মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝেই ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের মাঝেও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলছেন, চাঁদা তুলে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেয়াটা লজ্জাজনক। প্রকৃতপক্ষে নিজেরা লাভবান হতে এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যকে খুশি করতে চাঁদা তুলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে।

দুর্গাপুরের দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনার নামে তার কাছে প্রথমে ১০ হাজার এবং পরে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা চাওয়া হয়। উপজেলা পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর সুমন আলী ফোন করে তার কাছে এই চাঁদা চান। তবে তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

ঝালুকা ইউপির চেয়ারম্যান মোজাহার আলী বলেন, তার কাছেও ফোন করে সুমন পাঁচ হাজার টাকা চেয়েছেন। বলেছেন- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনোয়ার সাদাত ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম তাকে ফোন করে এই চাঁদা চাইতে বলেছেন।

চেয়ারম্যান বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দিতে এভাবে চাঁদাবাজির কোনো মানেই হয় না।

দুর্গাপুরের দেলুয়াবাড়ি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি গোলাম সাকলাইন এখন একজন বড় মাছচাষি। তিনি জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার কাছেও চাঁদা চাওয়া হয়েছে। সাকলাইন বলেন, ‘চাঁদা না দিলে অনেক ঝামেলা। কী করার! দিতে হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার একজন ইটভাটা মালিক জানান, তার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চাওয়া হয়েছিল। তিনি ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘চাঁদা না দিয়ে উপায় আছে? না দিলে কালই ভাটায় প্রশাসন হানা দিবে।’

চাঁদা চাওয়ার বিষয়ে জানতে উপজেলা পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর সুমন আলীর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম তার চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, সুমনের চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই। চাঁদা আদায়ে তিনি তাকে কোনো নির্দেশনাও দেননি।

উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান করার মতো উপজেলা পরিষদের তহবিল নেই। নিয়ম অনুযায়ী, পরিষদের রাজস্বখাতের আয় থেকে এ অনুষ্ঠানে ব্যয় করা হয়। কিন্তু রাজস্ব খাতে উপজেলা পরিষদের তেমন আয় নেই। তাই সবার সহযোগিতাতেই অনুষ্ঠান হবে।

দুর্গাপুরের ইউএনও আনোয়ার সাদাত বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন যৌথভাবেই মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেবে। এ অনুষ্ঠানের জন্য জোর করে কারও কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে না। তবে কেউ খুশি হয়ে সহায়তা করতে চাইলে তা গ্রহণ করা হচ্ছে।’

ইউএনও জানান, আগামী শনিবার বিজয় দিবসের সকারে উপজেলার ৭২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। তাদের হাতে তুলে দেয়া হবে ফুল এবং এক প্যাকেট খাবারসহ কিছু উপহার। এছাড়া সম্মানী হিসেবে প্রতি মুক্তিযোদ্ধাকে দেয়া হবে নগদ ৫০০ টাকা।

ঢাকাটাইমস/১৩ডিসেম্বর/আরআর/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :