একাত্তরের এই দিনে বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠে সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ১১:৩৩

আজ ১৪ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) সিরাজগঞ্জ হানাদারমুক্ত দিবস। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে আজকের দিনে মুক্ত হয় সিরাজগঞ্জ শহর। এদিন সকাল ১০টায় বিজয়ের গর্বে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা তাদের প্রিয় শহরের দখল নেন। ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে উল্লাসে মেতে ওঠে বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি শহর ও শহরতলীর আশপাশ থেকে হাজার হাজার কৃষক-শ্রমিক-জনতা জাতীয় পতাকা হাতে শহরে প্রবেশ করে। বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠে সিরাজগঞ্জবাসী।

গাজী জহরুল ইসলাম ও সিরাজগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার গাজী আশরাফুল ইসলাম চৌধুরী জানান, একাত্তরের ৯ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ শহরকে হানাদারমুক্ত করার লক্ষ্যে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রথমেই সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের শৈলাবাড়ী পাক বাহিনীর ক্যাম্প দখলের চেষ্টা করেন তারা। প্রচণ্ড যুদ্ধে ওইদিন শহীদ হন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাহমুদ। পাকবাহিনীর অত্যাধুনিক অস্ত্রের সাথে টিকে থাকতে না পেরে পিছু হটেন মুক্তিযোদ্ধারা। ক্লান্ত মুক্তিযোদ্ধারা ১০ ডিসেম্বর বিশ্রাম নেন। ১১ ও ১২ ডিসেম্বর দফায় দফায় আক্রমণ চালাচ্ছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। ১৩ ডিসেম্বর থেকেই হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সিরাজগঞ্জ শহরকে হানাদার মুক্ত করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। তিনদিক থেকে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মোজাম্মেল হক ও ইসহাক আলীর নেতৃত্বে পূর্ব দিক থেকে, সোহরাব আলী ও লুৎফর রহমান দুদুর নেতৃত্বে পশ্চিম দিক থেকে, আমির হোসেন ভুলু ও জহুরুল ইসলামের নেতৃত্বে উত্তর দিক থেকে আক্রমণ করে। এছাড়াও দক্ষিণ দিক থেকে ইসমাইল হোসেন ও আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ ব্যুহ গড়ে তোলেন। ওইদিন রাত তিনটা পর্যন্ত প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা কায়দায় সাড়াশি আক্রমণে টিকতে না পেরে পাক হানাদার বাহিনী ট্রেনযোগে ঈশ্বরদীর দিকে পালিয়ে যায়।

১৪ ডিসেম্বর ভোরে শহরের ওয়াপদা অফিসে পাকবাহিনীর মূল ক্যাম্প দখলে নেন মুক্তিযোদ্ধারা। ওইদিন কওমী জুটমিল, মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে উড়িয়ে দেয়া হয় জাতীয় পতাকা। সম্পূর্ণরূপে পাক হানাদার মুক্ত হয় সিরাজগঞ্জ। সিরাজগঞ্জ মুক্ত হবার পর মহুকুমা প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়া হয় ইসমাইল হোসেনকে (বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী) এবং মুক্তিযুদ্ধে সিরাজগঞ্জে সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয় মরহুম আমির হোসেন ভুলুকে।

জেলা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার গাজী সোহরাব আলী সরকার বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে সিরাজগঞ্জে সেদিন যারা মুক্তিযোদ্ধাদের এক কাতারে সমবেত ও সংগঠিত করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম মরহুম আমির হোসেন ভুলু, তৎকালীন মহুকুমা প্রশাসক (এসডিও) শহীদ শামসুদ্দিন, মরহুম আব্দুল লতিফ মির্জা, মরহুম গাজী লুৎফর রহমান অরুন, গাজী আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, গাজী জহুরুল ইসলাম, আলাউদ্দিন সেখ, ইসমাইল হোসেন, ইসহাক আলী, আবু মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া, আব্দুল হাই তালুকদার, মরহুম এম এ রউফ পাতা, বিমল কুমার দাস, শফিকুল ইসলাম শফি, ফিরোজ ভুইয়া, মরহুম টিএম শামীম পান্না, মেজর মোজাফ্ফর, মরহুম মঞ্জুরুল হক তৌহিদ, আব্দুল বাছেদ খান, ফজলুল মতিন মুক্তা, সোহরাব আলী সরকার, ইসমাইল হোসেন প্রমূখ।

সিরাজগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গাজী শফিকুল ইসলাম শফি জানান, ৯, ১১, ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর চার দিনব্যাপী যুদ্ধ চলে। এ যুদ্ধে শহীদ হন ইঞ্জিনিয়ার আহসান হাবিব কালু, সুলতান মাহমুদসহ ছয়জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এর আগে ৭১ সালের এপ্রিল মাসে পাক হানাদার বাহিনী সিরাজগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্প স্থাপন করেই নানা রকম নির্যাতন জুলুম ধর্ষণ অগ্নিসংযোগে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে সমগ্র শহর। নিষ্ঠুর ও জঘন্য পৈশাচিকতা ছড়িয়ে পড়ে শহরতলীসহ গ্রামীন জনপদেও।

তিনি বলেন, ১৭ জুন ৭১ সিরাজগঞ্জের বেসরকারি সাব সেক্টর পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের নেতৃত্বে কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাটে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এরপর থেকে বাঘাবাড়ি, নওগাঁ, বরইতলী, বাগবাটি, ঘাটিনার ব্রীজ, ছোনগাছা, ভাটপিয়ারী, শৈলাবাড়ী, ব্রহ্মগাছা, ঝাঐলসহ বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। নিহত হয় সহস্রাধিক পাক হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর এবং আলশামস বাহিনী।

(ঢাকাটাইমস/১৪ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :