চট্টগ্রাম কারাগারে ধারণক্ষমতার চারগুণ বেশি বন্দী!

প্রকাশ | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ১১:৫৭

ইব্রাহিম খলিল, ঢাকাটাইমস

চট্টগ্রাম কারাগারে এখন ধারণক্ষমতার চারগুণ বেশি বন্দী রয়েছে। এই কারাগারে বন্দী ধারণক্ষমতা এক হাজার ৮৫৩ জন। অথচ বর্তমানে বন্দীর সংখ্যা ছয় হাজার ৫৭৬ জন।

ধারণক্ষমতার চেয়ে চার হাজার ৭২৩ জন বেশি বন্দী থাকায় জেলকোড অনুযায়ী প্রাপ্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বন্দীরা। খেলাধুলা করতে না পারায় মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অতিরিক্ত বন্দী নিয়ে প্রতিনিয়ত নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষও।

ফলে এ সমস্যা নিরসনে চট্টগ্রামে আরও একটি নতুন কারাগার প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবির।

কারাগার সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ধারণক্ষমতা এক হাজার ৮৫৩ জন। এরমধ্যে এক হাজার ৮৫৩ জন পুরুষ ও ১০৫ জন নারী। বর্তমানে এর স্থলে বন্দী আছে ছয় হাজার ৫৭৬ জন। এখানে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৪২ জন বন্দীর মধ্যে ৪০ জন পুরুষ ও দুইজন নারী। কয়েদি আছে ৬২৬ জন পুরুষ ও ৩৯ জন নারী। হাজতি আছে পাঁচ হাজার ৬১৮ জন পুরুষ ও ২৪৭ জন নারী। এছাড়া মায়ের সঙ্গে শিশু আছে ২৬ জন ছেলে ও ২৭ জন মেয়ে।

জেল কোড অনুয়ায়ী প্রতি বন্দীর জন্য ছয় ফুট দৈর্ঘ্য ও ছয় ফুট প্রস্তের জায়গা বরাদ্দ থাকার কথা রয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম কারাগারে সুযোগ-সুবিধা অর্ধেকও পাচ্ছে না বন্দীরা। বন্দী বেশি হওয়ায় একজনের স্থলে কয়েকজনকে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে।

জেল কোড অনুযায়ী দুই হাজার বন্দী ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি কেন্দ্রীয় কারাগারে ন্যূনতম ৩০ একর জমি প্রয়োজন। কিন্তু কারাগারটির বর্তমান ধারণ ক্ষমতা এক হাজার ৮৫৩ হলেও সার্বক্ষণিক পাঁচ হাজার ৫০০ থেকে ছয় হাজার বন্দি অবস্থান করছে।

 

সূত্র জানায়, জমি স্বল্পতার কারণে চট্টগ্রাম কারাগারে নতুন ভবন নির্মাণ করে কিংবা ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের মাধ্যমে ধারণক্ষমতা বাড়ানোরও কোনো সুযোগ নেই। এমনকি স্থান স্বল্পতার কারণে বন্দীদের খেলাধুলার মাধ্যমে মানসিক উৎকর্ষসহ শারীরিকভাবে সুস্থ রাখার মতো কোনো কার্যক্রম পরিচালনাও সম্ভব হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় কারাগার হওয়া সত্ত্বেও সেখানে প্রশিক্ষণ/উৎপাদন বিভাগ পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বন্দীদের অপসারণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখারও কোনো জায়গা নেই।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডিআইজি (প্রিজন) পার্থ গোপাল বণিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, বিভাগের ১১টি কারাগারের মধ্যে বলা যায় সবগুলোতে বন্দী সংখ্যা বেশি। এরমধ্যে চট্টগ্রাম কারগারে ধারণক্ষমতার চার গুণ বেশি বন্দী আছে। এতে বন্দীদের খুব কষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রামে আরও একটি কারাগার প্রতিষ্ঠার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। নতুন কারাগার প্রতিষ্ঠা হলে চলমান এ সমস্যা আর থাকবে না বলে জানান তিনি।

এই কর্মকর্তা বলেন, কারাগারের বন্দী সমস্যা নিরসনে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে ৪১ কিলোমিটার দূরে পটিয়া উপজেলায় ৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করে চার হাজার বন্দী ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি নতুন কারাগার প্রতিষ্ঠা করা হলে এ সমস্যা সমাধান করা যাবে।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবির ঢাকাটাইমসকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে জামিনে যে হারে বন্দী মুক্তি পাচ্ছে এর চেয়ে বেশি বন্দী আসছে। যার কারণে বন্দী সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন। এতে কারাগারের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম কারাগারের অতিরিক্ত বন্দীর চাপ নিরসনে সম্প্রতি নতুন কারাগার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগে। কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন স্বাক্ষরিত ওই প্রস্তাবে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের অবস্থান ও সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। 

(ঢাকাটাইমস/১৪ডিসেম্বর/আইকে/জেবি)