বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে পুরুষশূন্য ক্যাঙ্গারু পরিবার

ফয়সাল আহমেদ, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
| আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৬:০৯ | প্রকাশিত : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৮:১৭

গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ক্যাঙ্গারু পরিবারে তৃতীয় ক্যাঙ্গারুর আবির্ভাব ঘটল। এ শাবকটি প্রকাশ্য হওয়ার আগে গত অক্টোবরে মারা যায় এ পার্কের একমাত্র পুরুষ ক্যাঙ্গারুটি। এতে পার্কটি পুরুষ ক্যাঙ্গারুশূন্য হয়ে পড়েছে। জরুরিভাবে সাফারি পার্কে পুরুষ ক্যাঙ্গারু আনা না হলে নতুন প্রজন্মের বংশবৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যাবে জানায় কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি সাফারি পার্কে একটি মা ক্যাঙ্গারু মেয়ে শাবকের জন্ম দিয়েছে। এ নিয়ে পার্কটিতে দ্বিতীয়বারের মতো উন্মুক্ত পরিবেশে ক্যাঙ্গারুর বাচ্চা প্রসব হলো। এর আগে গত বছর মে মাসে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ক্যাঙ্গারু শাবক জন্ম নিয়েছিল। এবার জন্ম নেয়া বাচ্চা ও তার মা উভয়ই ভালো আছে।

২০১৩ সালের আগস্ট ফ্যালকন ট্রেডার্সের মাধ্যমে আফ্রিকা থেকে কিনে আনা হয় একটি পুরুষ ও দুটি স্ত্রী ক্যাঙ্গারু। পরে এদের সাফারি পার্কের বেষ্টনীর ভেতর ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রায় দুই বছর পর ২০১৫ সালে প্রথম ক্যাঙ্গারু শাবক জন্ম নেয়, যেটি পরে মারা যায়। পরে ২০১৬ সালে জন্মের কয়েক মাস পর দ্বিতীয় শাবকটিও মারা যায়। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে পার্কের একমাত্র পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ক্যাঙ্গারুটি মারা গেছে। তার ঔরসজাত সর্বশেষ মাদি শাবকটি জন্ম নিলেও গত মঙ্গলবার সেটি প্রথমবারের মতো প্রকাশ্য হতে দেখা গেছে।

পার্কের ওয়াইল্ডলাইফ সুপারভাইজার সরোয়ার হোসেন খান জানান, পুরুষ ও স্ত্রী ক্যাঙ্গারুর মিলনের কমপক্ষে ৩৩ দিনের মধ্যে অপরিণত লম্বা শাবকটি যোনি বেয়ে থলিতে ডেলিভারি হয় এবং সেখানে থাকা নিপল থেকে দুধ পান করে বড় হতে থাকে। তখন শাবকের চোখ ফোটে না। শরীরে কোনো লোমও থাকে না। বাচ্চাটি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে থলেটিও বড় হতে থাকে। শাবকটির বয়স ৩-৪ মাস হলে থলেতে থাকা অবস্থায় এটি কখনো মাথা, কখনে পা বের করলে আমরা শাবকটি দেখতে পাই। কিন্তু এ সময় বাচ্চাটি মাটিতে নামে না। ছয় মাস বয়স হওয়ার পর বাচ্চাটি মাটিতে নামে এবং আবার থলেতে অবস্থান নিয়ে জীবন যাপন করে।

প্রায় ৮ মাস বয়সে ক্যাঙ্গারু শাবক অনেকটাই স্বাধীনভাবে খাবার খেতে ও চলাচল করতে শেখে। তখন তা আর থলিতে ঢুকে না। তবে এক বছর পর্যন্ত বাচ্চাটি মাঝেমধ্যে মাতৃদুগ্ধ পান করে এবং মায়ের আশপাশে অবস্থান করে।

পুরুষ ক্যাঙ্গারু সাধরণত ২০-২৪ মাসে এবং মাদি ক্যাঙ্গারু ২০-২২ মাসে যৌবনপ্রাপ্ত হয়। তবে পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে এই সময়ের তারতম্য হতে পারে।

বন্য প্রাণী পরিদর্শক মো. আনিসুর রহমান জানান, মারসুপিয়াল গোত্রের এক ধরনের তৃণভোজী স্তন্যপায়ী প্রাণী ক্যাঙ্গারু। এ প্রাণী কেবল অস্ট্রেলিয়া, নিউগিনি, তাসমানিয়ার আশপাশের দ্বীপাঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়। ক্যাঙ্গারুর আদি নিবাস অস্ট্রেলিয়া হলেও সাফারি পার্কে আনা হয় সুদূর আফ্রিকা থেকে।

আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে ভিন্ন পরিবেশ হলেও পার্কে উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে রেড (হলদে লাল) পুরুষ আর ধূসর বর্ণের নারী ক্যাঙ্গারু দ¤পতি প্রায় দুই বছর পর একটি এবং এর প্রায় দেড় বছর পর আরেকটি ধূসর বর্ণের মেয়ে শাবকের জন্ম দিয়েছে। আর এক বছর পর পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যায়। এরা প্রাকৃতিক পরিবেশে ১২ থেকে ১৬ বছর বেঁচে থাকে। তবে সাফারি বাউন্ডে (আবদ্ধ জোন) ২০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।’

বড় ক্যাঙ্গারুগুলো ম্যাক্রোপোডিড পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এরা দুই বছরে তিনবার বাচ্চা দেয়। লাল ও ধূসর ক্যাঙ্গারু আকারে বড় হয়। এদের ২ মিটার দৈর্ঘ্য আর ৮৫ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে। পৃথিবীতে প্রায় ৫০ ধরনের ক্যাঙ্গারু থাকলেও বাংলাদেশে একটি মাত্র প্রজাতির ক্যাঙ্গারু আনা হয়েছে।

সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, সাফারি পার্কে কোনো প্রাণী শাবক প্রসব করলে তাৎক্ষণিকভাবে দর্শনার্থীদের জানানো হয় না। জন্ম নেয়া শাবকগুলোর একটি নির্দিষ্ট বয়স হওয়ার পর তা জনসম্মুখে আনা হয়। বিভিন্ন ধরনের রোগ-বালাই, সংক্রামক ব্যাধি এবং আবহাওয়া ও পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার পরই বিষয়টি সাধারণকে জানানো হয়।

পার্কে নতুন ক্যাঙ্গারু শাবককে মাঝেমধ্যে থলি থেকে বাইরে আসতে ও মায়ের সঙ্গে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। আবার বাচ্চাটিকে থলিতেও অবস্থান করতে দেখা গেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোতালেব হোসেন জানান, ক্যাঙ্গারু বিদেশি পরিবেশের প্রাণী। আমরা এখানে প্রাণীগুলো বিশেষ পরিবেশে বড় করেছি। প্রাকৃতিক পরিবেশের মতোই এই পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিয়েছে বলেই গত বছর ও এই বছর বাচ্চা প্রসব করেছে। কিছুদিন পর বাচ্চাটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে পার্কে পর্যটনের এ মৌসুমে ক্যাঙ্গারু শাবকটি দর্শনার্থীদের অন্য রকম আনন্দ দেবে।

(ঢাকাটাইমস/১৭ডিসেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :