রাজশাহীতে বালুর পানিতে ধসছে নদীর পাড়

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৯:২০

রাতের খাবার শেষ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন লিমন হোসেন। হঠাৎ একটি শব্দ কানে আসে তার। তারপর লিমন খেয়াল করেন মাটির মৃদু কম্পন। লিমন ভাবেন, ভূমিকম্প। আতঙ্কে ঘর থেকে বেরিয়েই দেখেন- বাড়ির পাশ থেকে মাটি ধসে গিয়ে মিশছে পদ্মার পানিতে।

গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এভাবেই হঠাৎ ধস নামে রাজশাহী মহানগরীর বুলনপুর ঘোষপাড়া এলাকার পদ্মার পাড়ে। এতে নদীপাড়ের প্রায় ৩০০ ফুট এলাকা ধসে পানিতে নেমে গেছে। অথচ তার পাশেই নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্ক।

বৃহস্পতিবার বিকালে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আগের রাতের ভূমিধস দেখতে ভিড় জমিয়েছেন শতাধিক কৌতূহলী নারী-পুরুষ। হঠাৎ ভূমিধসের খবর পেয়ে আশপাশের মহল্লা থেকে তারা এসেছেন ওই ধস দেখতে। বসতবাড়ির দেয়াল ঘেঁষা এই ধস দেখে আঁতকে উঠছেন তারা।

মুদি দোকানি লিমন হোসেনের বাড়ির পাশ থেকেই ধসে পড়েছে মাটি। লিমন জানান, বুধবার দুই দফায় ধস নামে নদীপাড়ে। এর মধ্যে রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রথম ধস নামে। ঘরের পাশ থেকে মাটি নেমে যেতে দেখে আশপাশের বাড়ির বাসিন্দারা আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে পালান। প্রায় পাঁচ মিনিট পর এই ধস বন্ধ হয়।

এরপর আতঙ্কিত বাসিন্দারা ঘরে ফেরেন। কিন্তু রাত সাড়ে ১১টার দিকে আরেকদফা ধসতে শুরু করে মাটি। তখনও আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন লোকজন। এর প্রায় পাঁচ মিনিট পর এই ধসও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তারা ঘরে ফেরেন। কিন্তু আতঙ্কে সারারাত তাদের কাটে নির্ঘুম।

লিমনের প্রতিবেশী আতিকুল ইসলাম বলেন, নদীপাড়ে তার বিভিন্ন সবজি চাষ করা ছিল। মাটির সাথে সেসব সবজি গাছও পানিতে নেমে গেছে। চোখের সামনে ভয়াবহ এই ধস দেখার পর তার আতঙ্ক কাটছে না এখনো। মনে হচ্ছে- এই বুঝি আবার ধসতে শুরু করলো নদীপাড়।

বুলনপুর ঘোষপাড়া এলাকা থেকে প্রায় কিছুটা পশ্চিমে গিয়ে দেখা যায়, নদীপাড়ে পাহাড়ের মতো স্তুপ করে রাখা হয়েছে বালু। সেই বালু থেকে বেরিয়ে আসছে পানির ক্ষীণ স্রোতধারা। এতে নদীপাড়ের মাটি কাটছে। বালু থেকে বেরিয়ে আসা পানির কারণে দুই পাশের মাটি সরে গিয়ে সিটি করপোরেশনের একটি ড্রেনের প্রায় ৪০ ফুট দেয়াল ভেঙে দেবে গেছে।

এলাকার বাসিন্দা মোশাররফ আলী বলেন, নদীর মাঝ থেকে নৌকায় করে বালু তুলে আনা হয়। এরপর নদীপাড়ে নৌকা এনে মেশিনের সাহায্যে পানির সঙ্গে সেই বালু তোলা হয় ওপরে। ফলে বালুর সঙ্গে ওঠা পানি ফের নদীতেই নেমে আসে। এই পানির কারণেই ভেঙে পড়েছে কংক্রিটের ড্রেনের দেয়াল।

নবাবগঞ্জ ঘোষপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাব্বির হোসেন বলেন, নতুন করে ধস শুরু হওয়ায় অংশটিতে বালু তুলে স্তপ আকারে রাখা হয়েছিল। সেই বালুর স্তপ থেকেও বের হচ্ছিল পানি। আর এ কারণেই ধস নামে নদীপাড়ে। এই ধসে বালুর স্তুপের একটি অংশও নদীতে নেমে গেছে। এখন হঠাৎ ভূমিধস আতঙ্কে রয়েছেন তারা।

জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী মখলেসুর রহমান বলেন, এলাকাটিতে বালু তুলে স্তুপাকারে রাখা হয়। বালুর চাপ এবং সেখান থেকেই পানি বের হয়ে নদীতে নামার কারণে ভূমিধস দেখা দেয়। খবর পেয়ে তারা এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন। ভূমিধস ঠেকাতে নদীর কোলে বালুর বস্তা ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।

মখলেসুর রহমান বলেন, ওই এলাকায় হাই-টেক পার্কের জন্য নদী থেকে বালু তোলা হয়। আবার কয়েকজন ব্যক্তিও বালু তুলে বিক্রি করেন। নদীর পাড় রক্ষায় এসব বন্ধের জন্য তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে অনুরোধ করেছেন। তবে আসছে বর্ষার আগেই বুলনপুর থেকে পশ্চিমে সোনাইকান্দি পর্যন্ত ব্লক দিয়ে নদীপাড় বাধাই করা হবে বলে জানান পাউবোর এই কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/১৭ডিসেম্বর/আরআর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :