ছাত্রলীগের কমিটিতে ছাত্রদল কর্মী, হত্যা মামলার আসামি

ইফতেখার রায়হান, টঙ্গী (গাজীপুর)
| আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৯:৫৩ | প্রকাশিত : ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৮:২৬

গাজীপুরের টঙ্গীতে ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী, হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি ও বিবাহিতদের দিয়ে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার তথ্য পাওয়া গেছে। এ নিয়ে ফেসবুকসহ নানাভাবে সমালোচনা করছেন ছাত্রলীগেরই একাংশের নেতাকর্মীরা। তারা ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন।

পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের তোলা নানা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের কমিটি ঘোষণার কথা জানিয়েছেন গাজীপুর ছাত্রলীগের একজন নেতা।

সোমবার সন্ধ্যায় গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী থানার ৫২, ৫৪, ৫৫ ও ৫৬ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। টঙ্গী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদি হোসেন কানন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক মোশিউর রহমান সরকার বাবু স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে আগামী এক বছরের জন্য এ কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে।

১৫ বছর পর ঘোষণা করা টঙ্গী থানার ৫৪নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে মেহেদী হাসান পলককে। তিনি ছাত্রদলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতারা। তিনি বিবাহিত- এমন তথ্যও পাওয়া গেছে।

বছরপাঁচেক আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাজীপুর সফরের সময় টঙ্গী থানা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে তাকে স্বাগত জানিয়ে যে মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়, সেখানে পলকের উপস্থিতি স্পষ্ট।

ছাত্রদলের চিহ্নিত কর্মীকে ছাত্রলীগের ওয়ার্ড সভাপতি করার বিষয়ে জানতে চাইলে টঙ্গী ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোশিউর রহমান সরকার বাবু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ছাত্রদলের ব্যানারের সামনে পলকের যে ছবি দেখানো হচ্ছে সেটি গ্রাফিক্সে এডিট করা। সে ছোটবেলা থেকেই আমার সাথে রাজনীতি করে। পলক যদি ছাত্রদল নেতা হয়, তাহলে আমিও ছাত্রদল নেতা।’

তবে পলক যে টঙ্গী থানা ছাত্রদলের নেতা সিরাজুল ইসলাম সাথীর অনুসারী ছিলেন, সেটি নিশ্চিত করেছেন ছাত্রলীগের অনেকেই। ঢাকাটাইমসকে এই ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘টঙ্গীতে আমাদের কমিটি নেই। অনেকেই আমার সঙ্গে ছিল। পলককে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। আর ছাত্রদলের কোনো কমিটিতে পলকের নাম নেই।’

কেবল ছাত্রদলের কর্মসূচিতে পলকের ছবি নয়, তার বিয়ের ছবিও ফেসবুকে ছড়িয়েছে। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিবাহিত কারও দলের কমিটিতে থাকার সুযোগ নেই।

পলকের বিয়ের যে ছবি ফেসবুকে দেয়া হয়েছে সেখানে টঙ্গী ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিও দেখা যায়। আবার পলক যে বিবাহিত এটা স্বীকার করেছেন সরকার বাবু নিজেও।

এসব বিষয়ে জানতে পলকের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

হত্যা মামলার আসামি

৫৫নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত ইব্রাহিম সানি টঙ্গীর আলোচিত মঙ্গল চাঁন হত্যা মামলার আসামি। ২০১৫ সালে ২৩ জুন টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় মঙ্গল চাঁনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সানির বিরুদ্ধে এই মামলা ছাড়াও টঙ্গী থানায় মারামারি ও লুটের অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। একই কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি পারভেজ ঢালীও বিবাহিত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টঙ্গী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে টঙ্গী থানায় একটি মারামারির মামলা রয়েছে বলে জেনেছি। তবে হত্যা মামলার বিষয়টি আমি অবগত নই।’

ছাত্রলীগেই সমালোচনা

ছাত্রলীগের এই তিন ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণার পর থেকে ফেসবুকে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন পদবঞ্চিতরা। এ ক্ষেত্রে তারা প্রতিবাদ জানাতে ফেসবুককে বেছে নিয়েছেন।

‘সত্য কথা’ নামক একটি আইডি থেকে ছাত্রদলের কর্মসূচিতে ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে মনোনীত পলকের অংশগ্রহণ এবং তার বিয়ের ছবি দিয়ে লেখা হয় ‘অভিনন্দন মেহেদী হাসান পলক। বিজয়ের মাসে টাকার কাছে বিক্রি হলো বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কমিটি।’

একই আইডি থেকে ৫৫নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম সানির মামলার অভিযোগপত্রের ছবি প্রকাশ করে লেখা হয়, ‘অভিনন্দন ৫৫নং ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম সানি, এখন আরও চারটা খুন করলেও সমস্যা নাই।’

এসব ছবির নিচে ছাত্রলীগ নেতা রাসেদুল ইসলাম লিখেছেন, ‘ভবিষ্যৎ অন্ধকার. ছাত্রদলে পরিণত হচ্ছে ছাত্রলীগ।’

আরেকজন লিখেছেন, ‘তৈলবাজি আর টাকার কাছে ত্যাগী আর পরিশ্রমীরা আবারও পরাজিত।’

৫৪নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সদস্য শফিক তালুকদার শাওন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘২০০৭ সাল থেকে আমি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত। ছাত্রদলের ভয়ে সে সময় এখানে ছাত্রলীগ করার মতো লোক পাওয়া যেত না। কিন্তু ঝুঁকি নিয়ে মিটিং মিছিল করতাম। কিন্তু আজকে যখন কমিটি দেয়া হয় তখন নেতার অভাব নেই। যারা দীর্ঘদিন যাবৎ ছাত্রলীগ করেছে তাদেরকে পদবঞ্চিত করে ছাত্রদল থেকে আসা, বিবাহিতদের পদ দেয়া হয়েছে। এটা কখনও মেনে নেয়া যায় না।’

৫৫নং ওয়ার্ডে সহসভাপতি করা মাসুদ রানাও কমিটি নিয়ে ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ আট বছর ধরে আমি ছাত্রলীগের সাথে জড়িত। নিজ হাতে এই ওয়ার্ডে ছাত্রলীগের ঘাঁটি তৈরি করেছি। পছন্দের পদ পাইনি বলে আফসোস নেই। কিন্তু আফসোস হচ্ছে ওয়ার্ডের ভোটার নন এবং হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামিকে কমিটির গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে।’

পদবঞ্চিত নেতাদের অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে পলককে ওয়ার্ড সভাপতি করেছেন টঙ্গী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোশিউর রহমান সরকার বাবু। ২৫ সদস্যের এই কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ অধিকাংশই সরকার বাবু সমর্থিত বলেও জানান তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকার বাবু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে কাউকে পদ দিয়েছি প্রমাণ করতে পারলে রাজনীতি থেকে পদত্যাগ করব। মহানগর ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা ও পরামর্শ করে যারা যোগ্য তাদেরকে কমিটিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে টঙ্গী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদি হোসেন কানন মোল্লার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম দীপ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘অনেকগুলো বিষয় আমাদের নজরে এসেছে। ফেসবুকে বেশ কয়েকজনের বিয়ের ছবি ও ছাত্রদলের মিছিলের ছবি পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে আমরা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আগামী দুই দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৯ডিসেম্বর/আইআর/ডব্লিউবি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :