দিরাইয়ে কিশোরী হত্যা: ছাত্রলীগ কর্মীর বিচারের আশ্বাস পুলিশের

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৯:৩০ | প্রকাশিত : ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৯:২৭

প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে কিশোরী হত্যার চার দিন পেরিয়ে গেলেও গ্রেপ্তার করা যায়নি প্রধান আসামি ছাত্রলীগ কর্মী এহিয়াকে। তবে কিশোরী মুন্নি আক্তারের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে বিচারের আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ। বলেছে, খুনিরা কেউ পালিয়ে বাঁচতে পারবে না।

দিরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল মুন্নি। গত শনিবার পড়ার টেবিলে থাকা অবস্থায় রাত সাড়ে আটটার দিকে বাসায় ঢুকে তাকে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা।

মুন্নির চিৎকার শুনে পাশের কক্ষ থেকে তার মা রাহেলা খাতুন মেয়েকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায় খুনিরা। এ সময়

এহিয়া সরদার নামে এক যুবক এবং তার সঙ্গীদের চিনে ফেলেন মুন্নির মা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, খুনিরা মুন্নির বাড়িতে যাওয়ার সময় দুটি মোটর সাইকেল নিয়ে নিচতলায় অবস্থান করছিল চারজন। মুন্নির বাড়িতে চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা এই চার জনের সঙ্গেই মোটর সাইকেলে করে পলিয়ে যায়।

রক্তাক্ত অবস্থায় মুন্নিকে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ডাক্তার পিয়াস দেব তাকে সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। কিন্তুসিলেট যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় মুন্নির।

মুন্নির স্বজনরা জানিয়েছেন, ইতালি প্রবাসী হিফজুর রহমান ও রাহেলা বেগম দম্পতির ঘরে দুই সন্তান। বড় মেয়ে মুন্নি ও ছোট ছেলেকে নিয়ে রাহেলা পৌর শহরের আনোয়ারপুর মাদানী মহল্লায় তার বাবার বাসার দ্বিতীয় তলায় থাকেন।

সাকিতপুর গ্রামের যুবক ছাত্রলীগ কর্মী এহিয়া স্কুলে যাওয়া আসার পথে মুন্নিকে উত্যক্ত করতেন। এ নিয়ে মুন্নির মা সুনামগঞ্জ র‌্যাব-৯ ও তার মেয়ের স্কুলে লিখিত অভিযোগ করেন। গত ২৬ অক্টোবর দিরাই উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর ইকবাল ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভপাতি আব্দুল হক ও পৌর এলাকার সুজানগর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর মধ্যস্ততায় আর উত্ত্যক্ত না করার বিষয়ে লিখিত মুচলেকা দেন এহিয়া। আর এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য প্রকাশ্যে মুন্নিকে খুন করার হুমকি দেন এহিয়া।

দিরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর ইকবাল বলেন, ‘গত অক্টোবর মাসে নির্বাচনী পরীক্ষার আগে মুন্নিকে উত্যক্ত করার অভিযোগ করেন তার মা রাহেলা বেগম। বিষয়টি নিয়ে আমি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ও কমিটির সভাপতিকে নিয়ে শালিশ বৈঠকে তফাজ্জল হোসেনের মধ্যস্থতায় এহিয়াকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেই। সে যে মেয়েটিকে খুন করে ফেলবে, সেটা আমাদের কারও মাথায় আসেনি।’

হত্যার দুই দিন পর সোমবার বিকালে নিহতের মা রাহেলা বেগম ইয়াহিয়া সর্দার এবং তার এক সঙ্গীকে আসামি করে দিরাই থানায় মামলা করেন। এর পর পুলিশ দ্বিতীয় আসামি তানভির আহমেদ চৌধুরীকে কলেজ রোড়ে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আটক করে। তার বাড়ি উপজেলার আনোয়াপুর গ্রামে। কিন্তু এহিয়া এখনও লাপাত্তা।

মঙ্গলবার মুন্নির বাড়িতে যান দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল। তিনি পরিবারকে বলেছেন, এহিয়াসহ ও তার সহযোগীরা আইনের হাত থেকে কখনো পালিয়ে থাকতে পারবে না। তাকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে। সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার বরকত উল্লাহ খান ঢাকাটাইমসকে বলন, ‘মুন্নি হত্যার ঘটনায় এহিয়ার অবস্থান জানতে তার মা, বোনসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মুন্নির খুনি যেই হোক ছাড় দেয়া হবে না। ইতিমধ্যে সব জায়গায় বার্তা পাঠানো হয়েছে।’

র‌্যাব-৯ সুনামগঞ্জ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার ফয়সাল আহমেদ জানান, এহিয়াকে গ্রেপ্তারে তারাও চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে।’

এহিয়া দিরাইয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত। ছাত্র সংগঠনটির বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাকে আগেভাগেই দেখা যেত। জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সোহেল মিয়া বলেন, ‘সে (এহিয়া) মাঝে মধ্যে আমাদের সাথে মিছিল মিটিংয়ে আসত, কিন্তু ছাত্রলীগের কোন পদধারী নেতা ও সক্রিয় কর্মী নয়।’

দিরাই উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল মিয়া বলেন, ‘আমার জানামতে এহিয়া উপজেলা বা কলেজ ছাত্রলীগের কোন কমিটির সদস্য নয়, তবে মাঝে মাঝে মিছিলে দেখা যেত।’

ঢাকাটাইমস/১৯ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :