‘জঙ্গলের ভেতর’ কোনো বাড়িতে রাখা হয়েছিল উৎপলকে

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২০ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৭:৫৩

৭০ দিনের বন্দিদশা কাটিয়ে মুক্ত জীবনে ফেরা সাংবাদিক উৎপল দাস জানেন না, কারা তাকে ধরে নিয়েছিল। তিনি বলেছেন, একটি অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল। সব সময় সে দরজা বন্ধ থাকত। আর এই সেখান থেকে রাতে শেয়ালের ডাক শোনা যেতো। এ থেকে তার ধারণা, জঙ্গলের মধ্যে কোনো বাড়িতে রাখা হয়েছিল তাকে।

গত ১০ অক্টোবর ধানমন্ডির স্টার কাবাবের সামনে থেকে অজ্ঞাত পরিচয় অপহরণকারীরা তুলে নিয়েছিল বলে জানিয়েছেন উৎপল। বলেন, তোলার সময় প্রথম দিকে তাকে চড়থাপ্পড় মারা হয়। পেছন থেকে গাড়িতে তোলায় তিনি কারও চেহারা দেখতে পাননি।

এই সাংবাদিকের তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে ১২ অক্টোবর মতিঝিল থানায় প্রথম সাধারণ ডায়েরি করেন তার কর্মস্থল অনলাইন সংবাদপত্র পূর্ব পশ্চিম বিডির সম্পাদক। পরে আরেকটি জিডি করেন উৎপলের বাবা চিত্তরঞ্জন দাস।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উৎপলকে নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় একটি ফিলিং স্টেশনের সামনে গাড়ি থেকে নামিয়ে যাওয়া হয়। পরে পুলিশকে স্থানীয় একজন খবর দিলে তারা নিয়ে যায় তাকে। আর নরসিংদীতে উৎপলের স্বজনদেরকে খবর তারা এসে নিয়ে যায় তাকে।

ঢাকাটাইমসকে উৎপল বলেন, ‘অপহরণের পর আমাকে নিয়ে টিনশেডের নরমাল একটা ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। সেখানে তিন বেলা দরজার নিচ থেকে খাবার দেওয়া হত। ঘরে চৌকি বা খাট না থাকায় ফ্লোরে থাকতে হতো।’

-আপনাকে কোত্থেকে কীভাবে তুলে নেয়া হয়?

- ‘১০ অক্টোবর দুপুরে ধানমন্ডি স্টার কাবাবের সামনে একটি চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে চা পান করছিলাম। পিছন থেকে চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এর আগে একটি ফোনে আমি কিছু টাকার বিষয়ে কথা বলেছিলাম।’

-সেখান থেকে কোথায় নেয়া হয়, তারা কিছু বলেছিল?

-‘সেখান থেকে প্রায় ৩ ঘন্টার মতো সময় আমাকে গাড়িতে করে একটি ঘরে নিয়ে রাখা হয়। টিনের চালার দেয়ালে ঘেরা স্যাঁতস্যাঁতে ঘরটিতে রাখা হয়েছিল। পরে মুখোশ করে পরে আমার কাছে একজন বলেছিল, তুই তো ফোনে টাকা চেয়েছিস, আমাদের কিছু টাকা দিয়ে দে তোকে ছেড়ে দেবো। ‘তখন আমি ধারণা করেছিলাম ধামনন্ডি এলাকায় সেই ফোনের রেফারেন্স ধরেই অপহরণ করা হয়েছে।’

-যেখানে নেয়া হয়েছিল, সেই জায়গাটা কোথায় তা কি বুঝতে পেরেছিলেন?

-‘এটা বুঝিনি। তবে রাতের বেলায় সেখানে শেয়ালের হাঁক শোনা যেত। মনে হতো কোনো একটি জঙ্গলের ভেতরে এই ঘরে রাখা হয়েছে।’

-প্রায় আড়াই মাস একই জায়গায় ছিলেন? সেখানে আপনার সঙ্গে কেমন আচরণ করা হয়েছে?

-‘যেখানে রাখা হয়েছিল সেখানে নিয়মিত ঘরের দরজা বাইরে থেকে লক করা থাকতো। খাবার দেয়া হতো দরজার নিচের দিকে খালি জায়গা দিয়ে। এভাবেই কেটেছে ২ মাস ১০।’

-অপহরণকারীদের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে?

- ‘আমার কাছে প্রথম থেকে শুধু কয়েকবার টাকার বিষয়ে কথা হয়েছে। তারা আর কোনো বিষয়ে কোনো কথাই বলেনি।’

-আপনি কীভাবে ভুলতা এলেন?

-গতকাল মঙ্গলবার রাতে রূপগঞ্জের ভূলতা এলাকার একটি সিএনজি স্টেশনের পাশে ফেলে রেখে যায়। তখনো প্রায় চার ঘন্টার একটা চোখবাঁধা অবস্থায় গাড়িতে থাকতে হয়েছে।’

উৎপলের বোন বিনিতা রানী গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তারা ভাইয়ের খবর শুনে তার মোবাইলে ফোন দেন। উৎপল তখন জানান, তিনি আছেন ভুলতায়।

‘সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সাংবাদিক ভাইদের চেষ্টায় আমরা ভাইকে ফিরে পেয়েছি। আমরা সবার কাছে কৃতজ্ঞ, সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’

উৎপলের মুক্তির জন্য কেউ টাকা চেয়েছিল কি না জানতে চাইলে বিনিতা বলেন, ‘একমাস আগে এক লোক ফোন করে বলেছিল, সে নাকি উপপরিদর্শক (এসআই) রিপন তালুকদার। উৎপলকে মুর্মুর্ষ অবস্থায় টাঙ্গাইলে পাওয়া গেছে, তার চিকিৎসার পেছনে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে, এই কথা বলে সে টাকা পাঠাতে বলে।’

‘তখন আমরা তাকে বলি টাকা পাঠানোর জন্য আমাদের সময় দেন। কিন্তু সে বার বার টাকা পাঠানোর জন্য তাগাদা দেয়। এক ঘণ্টা পর আমরা জানতে পারি ওইটা মিথ্যা একটা খবর।’

উৎপলের বোন জানান, তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে জিডি করার পর উৎপলের ফোন থেকে কল করে এক লোক এক লাখ টাকা দাবি করে। পরদিন আবার আবার টাকা চাওয়া হয়।

এ ব্যাপারে মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর ফারুক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে উৎপল দাসের মুঠোফোনে কথা হয়েছে। তাকে অপহরণের বিষয়ে তেমন কোন তথ্য আমাকে দিতে পারেনি। তবে আমি তাকে বলেছি সুস্থ হয়ে ঢাকায় এসে আমার দেখা করতে। ওই সময়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। তবে যেহেতু এ ঘটনায় কোন মামলা হয়নি। তাই উৎপল দাসকে আদালতে তোলা হবে না।’

ঢাকাটাইমস/২০ ডিসেম্বর/এএ/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

গণমাধ্যম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

গণমাধ্যম এর সর্বশেষ

সাংবাদিক মিনার মাহমুদের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

সাংবাদিক সাব্বিরের ওপর নৃশংস হামলায় ঢাকাস্থ গাজীপুর সাংবাদিক ফোরামের নিন্দা

বাংলানিউজকর্মী মিথুনের ক্যানসার চিকিৎসায় এগিয়ে এলো বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন

আজ ভোরের পাতা সম্পাদকের পিতার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী

সাংবাদিক মোহসিন কবিরকে মারধরের ঘটনায় ডিআরইউর প্রতিবাদ

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ সাংবাদিককে বহিষ্কারের নিন্দা বিএফইউজের

ডিইউজে নির্বাচন: সোহেল-তপু সভাপতি, আকতার সম্পাদক

ঈর্ষান্বিত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফাঁসানো হচ্ছে ঢাকা টাইমস সম্পাদককে

শেরপুরের সাংবাদিক রানাকে কারাদণ্ডে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ

নকলায় সাংবাদিককে কারাদণ্ড: আইন ও সালিশ কেন্দ্রের উদ্বেগ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :