উৎপল ফেরার খবরে আশায় সিজারের বাবা

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২১ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৮:০২

নিখোঁজ হওয়ার ৭০ দিন পর ফিরেছেন সাংবাদিক উৎপল দাস। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথের শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান সিজারের খোঁজ মেলেনি এখনও। তবে উৎপলের ফেরার খবরে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন সিজারের বাবা মোতাহার হোসেন। মনে জমেছে বিশ্বাস, ফিরবে তার ছেলেও।

ছেলে হারিয়ে যাওয়ার পর পুলিশের ওপর ভরসা রেখেছিলেন সিজারের বাবা। কিন্তু একেকটি দিন যায়, আর হারিয়ে যেতে থাকে মনের আত্মবিশ্বাস। সেই জায়গায় জাগে ভয়। ছেলের কিছু হয়ে যায়নি তো? এই অবস্থায় উৎপলের ফিরে আসার খবরে হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস আর বিশ্বাস কিছুটা ফিরে পেয়েছেন সিজারের বাবা।

গত ১০ অক্টোবর নিখোঁজ হন অনলাইন নিউজ পোর্টাল পূর্বপশ্চিম বিডি ডট নিউজের প্রতিবেদক উৎপল দাস। এ নিয়ে আলোচনা থামতে না থামতেই গত ৭ নভেম্বর বিকালে নিখোঁজ হন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মুবাশ্বার হাসান সিজার।

মঙ্গলবার গভীর রাতে উৎপলের সন্ধ্যান পাওয়ার খবর গণমাধ্যম থেকে জেনেছেন সিজারের বাবা সাবেক সরকারি কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন। বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘খুব ভাল লাগল যে এতদিন পর হলেও ছেলেটি (উৎপল) তার বাবা-মায়ের বুকে ফিরে এসেছে। আমিও আশা রাখি দ্রুত সময়ে মধ্যে আমার ছেলেটাও ফিরে আসবে।’

মোতাহার বলেন, ‘যে বা যারাই আমার ছেলে সিজারকে নিয়ে গেছেন, তাদেরকে আমি অনুরোধ করব তারা যেন দ্রুত সময়ে মধ্যে আমার ছেলেটিকে ছেড়ে দেয়।’

৭ নভেম্বর সকালে রামপুরার বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে বের হন সিজার। পরে আর বাসায় ফেরেননি। এ ঘটনায় সিজারের বাবা মোতাহার হোসেন খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। কিন্তু পুলিশ এখন পর্যন্ত এই অন্তর্ধানের বিষয়ে কোনো কূল কিনারা করতে পারেনি।

জানতে চাইলে জিডির তদন্ত কর্মকর্তা খিলগাঁও থানার উপপরিদর্শক নগেন্দ্র কুমার দাস ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত সিজারের নিখোঁজের বিষয়ে কোনো সুরাহা করতে পারিনি। আমরা তার মোবাইলের কল লিস্ট ও সিডিআর গোয়েন্দাদের কাছে দিয়ে এসেছি। তারাই এর তদন্ত করবে।’

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পূর্ব বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার আসাদুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘শিক্ষক সিজারকে উদ্ধারের ব্যাপারে আমাদের তদন্ত চলছে। আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আপাতত এরচেয়ে বেশি কিছু বলার নেই।’

উৎপল ও সিজার ছাড়াও গত এক বছরে ঢাকায় ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও কূটনীতিক মিলিয়ে ১০ জনেরও বেশি নিখোঁজের ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

সবশেষ ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বিদেশ থেকে আসা মেয়েকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাতে ধানমন্ডির বাসা বের হয়ে নিখোঁজ হন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও কূটনীতিক মারুফ জামান। তারও কোনো খোঁজ মিলছে না।

সাম্প্রতিক সময়ে নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পাওয়ার ১৯ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার হয়েছেন প্রাবন্ধিক ও কবি ফরহাদ মজহার। তবে পুলিশ তদন্ত করে জানিয়েছে তিনি নিখোঁজ বা অপহৃত হননি। এক নারীর সঙ্গে তার পরকীয়া প্রেম ছিল এবং তার জন্য টাকা যোগাড় করতেই তিনি বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। আর স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা নিতেই অপহরণ নাটক জানান।

ফরহাদ মজবার যেদিন অপহৃত হয়েছিলেন বলে থানায় অভিযোগ করা হয়েছিল, সেদিন খুলনায় মার্কেটে তার একা ঘুরে বেড়ানো, একটি দোকান থেকে মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে টাকা পাঠানোর সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ফাঁস হয়েছে। এ ছাড়া তিনি যে হোটেলে খাবার খেয়েছেন, সেই হোটেল মালিক আদালতে এসে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি যে বাস কাউন্টার থেকে টিকিট কিনে ঢাকায় আসতে চেয়েছিলেন, সেই কাউন্টার ব্যবস্থাপকও আদালতে এসে বক্তব্য দিয়ে গেছেন। আর মিথ্যা মামলা করার অভিযোগে ফরহাদ মজহারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন দিতে যাচ্ছে পুলিশ।

তবে ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায় ফিরে আসলেও তার অন্তর্ধান রহস্যের কোনো কূল কিনারা হয়নি এখনও। ৭৯ দিন অজ্ঞাতবাসে থাকার পর গত ১৬ নভেম্বর বাসায় ফিরেছেন অনিরুদ্ধ। কিন্তু এখনও জানা যায়নি কারা এবং কেন নিয়ে গিয়েছিল এই ব্যবসায়ীকে।

৭০ দিন পর ফেরা উৎপল দাসও জানাতে পারছেন না কারা এবং কেন তাকে তুলে নিয়েছিল। তিনি জানিয়েছেন একটি অন্ধকার ও স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে তাকে রাখা হয়েছিল। সেখানে রাতে শেয়ালের ডাক শোনা যেত। এ থেকে তার ধারণা হয়েছে জঙ্গলের ভেতরে কোনো বাড়িতে রাখা হয়েছিল তাকে।

একইভাবে জানা যায়নি সাত মাস নিখোঁজ থাকার পর মার্চের শুরুতে বাড়িতে ফেরা যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী কোথায় ছিলেন।

ঢাকাটাইমস/২১ডিসেম্বর/এএ/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :