বাল্যবিয়ে জয়ী শারমিন এখন মেডিকেল শিক্ষার্থী
বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পাওয়া মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার ভাটোয়াইল গ্রামের সেই শারমিন আক্তার এখন মেডিকেলের ছাত্রী। সেদিন বিদ্যালয়ের প্রিয় শিক্ষক, সাংবাদিক ও স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে ছিলেন শারমিন। বাল্যবিয়ে জয়ী মেধাবী শারমিন ভাটোয়াইল গ্রামের এ যাবতকালের একমাত্র মেডিকেলে পড়া ছাত্রী।
পাঁচ বছর আগে ২০১৩ সালে একমাত্র কন্যা মেধাবী শারমিনকে ৮ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় এক বিত্তবান বয়স্ক ব্যবসায়ীর সাথে বিয়ে ঠিক করেন তার গরিব প্রতিবন্ধী পিতা আলাউদ্দিন। মেধাবী শারমিন বিয়েতে অসম্মতি জানালে তার পিতা-মাতাসহ ছেলে পক্ষ বিয়েতে রাজি করাতে চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন হয়। পরে শারমিন তার বিদ্যালয়ের প্রিয় শিক্ষকদের নিকট বিয়ের অনিচ্ছার কথা জানান। শিক্ষকরা স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা অনিতা মল্লিক ও পুলিশ সহায়তায় বাল্যবিয়ে বন্ধ করে দেন। সে সময় ১৮ বছরের নিচে বিয়ে না দেয়ার অঙ্গীকারও করেন তার পিতা ও মাতা। এ কারণে শারমিনের পিতা ক্ষিপ্ত হয়ে পরবর্তীতে শিক্ষকদের অপমানও করেন।
তবে সাহসী শারমিন প্রতিকূলতার মধ্যেও হাল না ছেড়ে পড়ালেখা চলিয়ে যেতে থাকেন। ২০১৫ সালে ওজগাতী আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে ৪.৪৪ পেয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর ঝিনাইদাহ শিশুকুঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০১৭ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় সে ৩.৮৪ পেয়ে বিজ্ঞান বিভাগে থেকে উত্তীর্ণ হন।
শারমিনের সকল পরিস্থিতি জেনে ঢাকার সাভারের সমাজভিত্তিক গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে বৃত্তি কোঠায় ফিজিওথেরাপি বিভাগে ভর্তি করেন। বর্তমানে তিনি মেডিকেল কলেজের ফিজিওথেরাপির ১ম বর্ষের ছাত্রী।
বাল্যবিয়ে জয়ী মেধাবী শারমিন তার সহযোগিতার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, চিকিৎসক হয়ে সাধারণ মানুষের ও দেশের সেবা করতে চাই। আর কাউকে যেন তার মত সমস্যায় না পড়তে হয়- সে জন্য ভবিষ্যতে কাজ করতে চাই।
শারমিনের মা আলোমতি বেগম বলেন, আমরা না বুঝে ভুল করতে গিয়েছিলাম। তবে এখন আমি খুবই খুশি। শুনেছি, আমাদের এলাকায় আমার মেয়েই প্রথম কোন ডাক্তার হতে যাচ্ছে।
শারমিনের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন বিশ্বাস বলেন, শারমিন খুবই মেধাবী। কিন্তু পরিবেশের কারণে ফলাফল কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। তবু সে আজ ডাক্তার হতে চলেছে, জেনে খুবই ভাল লাগছে। আমি তাকে আশীর্বাদ করি সে ডাক্তার হয়ে যেন মানুষের সেবা করতে পারে।
(ঢাকাটাইমস/২১ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)