বাগদা ফার্ম সংগ্রাম: ১৬ জানুয়ারি উত্তরবঙ্গে অবস্থান কর্মসূচি
উত্তরবঙ্গের সব জেলা-উপজেলার শহীদ মিনারে সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্মের সংগ্রামের প্রতি সংহতি জানিয়ে আগামী ১৬ জানুয়ারি অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী প্রধানের স্মরণসভায় এ ঘোষণা দেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন।
সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ, জনউদ্যোগ, কাপেং ফাউন্ডেশন, ব্রতী, আইইডি, আসক, নাগরিক উদ্যোগ, নিজেরা করি, ব্লাস্ট ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এটি আয়োজন করে।
সরেন বলেন, ‘শাহজাহান আলীর মৃত্যুতে চিনিকল কর্তৃপক্ষসহ শাসকশ্রেণির অনেকেই হয়তো ভাবছেন বাগদা ফার্মের আন্দোলন এবার থিতিয়ে পড়বে। কিন্তু আমরা তাদের জানাতে চাই একজন শাজাহান আলী মরলেও সংগ্রামের জন্য হাজার শাহজাহান জন্ম নিয়েছে।’
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ঐক্যন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়নের উপদেষ্টা দিবালোক সিংহ, শাহজাহান আলীর জ্যেষ্ঠ ছেলে জাফরুল্লাহ প্রধান প্রমুখ।
শাহজাহান আলীর জ্যেষ্ঠ ছেলে জাফরুল্লাহ প্রধান বাবার স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘আমার শৈশব থেকে দেখেছি আব্বা কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি। সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আমরা ছোটবেলা থেকেই আব্বার মুখে শুনেছি, কোনো দিন মিল বন্ধ হলে আমরা আমাদের বাপ-দাদার জমি ফেরত পাব। কিন্তু এখন ফেরত তো পেলাম না বরং নানা ধরনের হুমকিধমকি ও মামলার শিকার হচ্ছি।’
ঐক্যন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘শাহজাহান আলী প্রধান কৃষকশ্রেণি থেকে গড়ে ওঠা একজন নেতা ছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন নিপীড়িতদের কোনো জাত নেই। সে সাঁওতাল হোক বা বাঙালি হোক। তাই তো তিনি বাঙালি-সাঁওতাল মিলে আন্দোলন করেছেন। সাঁওতালদের সাথে রাত কাটিয়েছেন।’
বাগদা ফার্মে সাঁওতালদের ওপর যে হামলা হয়েছে সেটি একধরনের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বলে মন্তব্য করেন ন্যাপ নেতা। তিনি বলেন, ‘নাসিরনগরে, লঙ্গদুতে যে সহিংসতা সেগুলোও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। রাষ্ট্র যদি এগুলো আমলে না নেয় এবং এ ধরনের সন্ত্রাসবাদ বন্ধ না করে তাহলে এর পরিণাম একদিন রাষ্ট্রকেই ভোগ করতে হবে।’ বাগদা ফার্মে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে সেখানে সাঁওতাল-বাঙালিদের পুনর্বাসন করার প্রহসন চলছে বলে অভিযোগ৯ করেন তিনি।
সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘যারা ন্যায়ের পক্ষে গরিব মানুষের পক্ষে কাজ করেন ও জীবন উৎসর্গ করেন তাদের এ রাষ্ট্র স্মরণ করে না। বরং যারা টাকা-পয়সা লুট করে, ব্যাংক ডাকাতি করে সেসব ভিআইপি মানুষজন রাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।’
সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্মের ন্যায়সঙ্গত ও আইনসঙ্গত আন্দোলন এখনো শেষ হয়নি উল্লেখ করে সেলিম বলেন, ‘এ সংগ্রামের একজন লড়াকু সৈনিক হিসেবে শাহজাহান আলী প্রধানের রেখে যাওয়া সংগ্রাম আগামী দিনে সেখানকার অসমাপ্ত ভূমি আন্দোলনকে আরো বেগবান করে তুলতে প্রেরণা হয়ে থাকবে।’
বাংলাদেশ এখন ধনীক শ্রেণির হাতে নিয়ন্ত্রিত বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। তিনি বলেন, ‘সেখানে গরিব মেহনতি মানুষের কথা শোনার কেউ নেই। শাহজাহান আলী ক্যান্সারে মারা গেছেন, চিকিৎসা করতে পারেননি।’
বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়নের উপদেষ্টা দিবালোক সিংহ বলেন, ‘বাগদা ফার্মের ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে আন্দোলন-সংগ্রামের কোনো বিকল্প নেই। আন্দোলন করেই শাহজাহান আলী প্রধানের অসমাপ্ত কাজকে আগামী দিনে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
(ঢাকাটাইমস/২১ডিসেম্বর/এএকে/মোআ)