জিয়া অরফানেজ মামলায় যুক্তিতর্ক

‘নথি সৃজন করে খালেদার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২১ ডিসেম্বর ২০১৭, ২১:২৪
ফাইল ছবি

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি দুদকের কতিপয় অতি উৎসাহী কর্মকর্তা কাগজপত্র তৈরি করে, ফটোকপি দিয়ে সৃজন করেছেন বলে আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এ মামলায় খালাসের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মান-মর্যাদা ও তার রাজনৈতিক জীবন সুনিশ্চিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা।

আজ বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার পক্ষে দ্বিতীয় দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তার আইনজীবীরা। আগামী ২৬, ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর আবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।

এদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় লিখিত আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য দিয়েছেন খালেদা জিয়া। আদালত তার লিখিত বক্তব্যটি গ্রহণ করেছেন।

পুরান ঢাকার বকশিবাজারের কারা অধিদপ্তরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালতের জজ ড. মো. আকতারুজ্জামানের আদালতে এ দুই মামলার বিচারকাজ চলছে।

যুক্তি উপস্থাপন শেষে খালেদা জিয়ার আইনজীবী আব্দুর রেজ্জাক খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বাদীপক্ষের জবানবন্দি ও জেরার উল্লেখে বলেছি, দুদক নিরপেক্ষভাবে তাদের দায়িত্বপালন করেনি। একজন কর্মকর্তা চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন ফটিকছড়িতে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, তাকে ডেকে এনে বলা হয়েছে, অডিটে অবজেকশন আছে। কিছু কাগজপত্র আপডেট করতে হবে। এভাবে অনেক কাগজপত্র সৃজন করা হয়েছে। সাক্ষীর মুখ দিয়ে এসেছে সৃজন করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে কোনো আমলে কোনো অভিযোগ ছিল না এই মামলা সৃষ্টিতে- এমনটা দাবি করে রেজ্জাক বলেন, ‘কিন্তু দুদক স্বপ্রণোদিত হয়ে অথবা কোনোভাবে কোনো মহল থেকে ইঙ্গিত পেয়ে এই মামলাটি সৃষ্টি করেছে। বেগম খালেদা জিয়াকে তার রাজনৈতিক জীবনে কালিমা লেপন করার জন্য। সাক্ষ্যপ্রমাণে এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’

খালেদা জিয়ার আইনজীবী বলেন, ‘কুয়েতের আমিরের কাছ থেকে টাকা এসেছে। সোনালী ব্যাংক থেকে ডিডি বারবার চাওয়া হয়েছে, ডিডিটা কী, কিন্তু তার মূল কপি দেয় নাই। এটা তাদের দপ্তরে নেই লিখিত আকারে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু দুদকের কতিপয় অতি উৎসাহী কর্মকর্তা এই মামলায় কাগজপত্র সৃজন করে, ফটোকপি দিয়ে মামলার সৃষ্টি করেছেন। ইনশা আল্লাহ বেগম খালেদা জিয়ার মান, মর্যাদা, তার রাজনৈতিক জীবন সুনিশ্চিত হবে খালাসের মাধ্যমে।’

আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান মামলার অভিযোগের বিষয়ে আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি মামলার অভিযোগপত্র, সাক্ষীদের জবানবন্দি ও তাদের জেরা এবং মামলায় দাখিলকৃত বিভিন্ন নথির বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন।

যুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী আদালতে বলেন, ‘এটি একটি সৃজিত মামলা। তিনি (খালেদা)এতিমের অর্থ চুরি করেছেন- এ মামলার কোনো সাক্ষী বা কোনো তথ্য-প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করতে পারেনি দুদক। এ মামলার যেসব ডকুমেন্ট দাখিল করা হয়েছে তার মধ্যে ঘষামাজা আছে, ওভার রাইটিং আছে। প্রসিকিউশনের ডকুমেন্টের মধ্যে কোথাও খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর এবং অনুমোদন নেই। তার রাজনৈতিক জীবনে কালিমা লেপনের জন্য এ অভিযোগ আনা হয়েছে।’

মামলাটি একটি ইতিহাস হয়ে থাকবে উল্লেখ করে আব্দুর রেজ্জাক বলেন, ‘এ মামলায় আমরা সম্পূর্ণভাবে আদালতকে সহযোগিতা করব। মামলাটি একটি রেকর্ড হবে। বিচারে যেন কোনো রকম বিভ্রান্তি না হয়।’ বেগম খালেদা জিয়া যেন ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হন সে বিষয়ে আদালতে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

এ মামলার অভিযোগের বিষয়ে আবদুর রেজ্জাক খান বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া কিভাবে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা সম্পৃক্ত হলেন চার্জে তার কিছু নেই। কোনো সাক্ষী বলে নাই খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং বিদেশ থেকে তার অ্যাকাউন্টে টাকা এসেছে। আর মামলার এফআইআরের সাথে চার্জের কোনো সম্পর্ক নেই। দুদক থেকে এফআইআর তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। এটি একটি ডিফেক্টিভ চার্জ। চার্জ গঠন সঠিক হয়নি। এই অসঙ্গতিপূর্ণ চার্জের মামলার বিষয়বস্তুর কোনো মিল নেই।’

এ সময় আদালত বলেন, ‘ডিফেক্টিভ চার্জ বলছেন, এর বিরুদ্ধে আপনারা হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগে যাননি।’

জবাবে রেজ্জাক খান বলেন, ‘আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ বলতে পারেন না চার্জ সঠিকভাবে হয়েছে। চার্জ সঠিকভাবে প্রস্তুত হয়েছে- এটা হাইকোর্ট বা আপিল বিভাগের বলার বিষয় নয়।’

যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে রেজ্জাক খান বলেন, এ মামলার প্রথম অনুসন্ধান কর্মকর্তা নূর আহমেদের অনুসন্ধান রিপোর্টের পর আর এ মামলা থাকে না। এ মামলার অভিযোগের তালিকায় খালেদা জিয়ার নাম নেই। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট একটি প্রাইভেট ট্রাস্ট। এটা সরকারি সম্পত্তি নয়। তাই দুদক আইনে কোনো অপরাধ হয়নি।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীর যুক্তি উপস্থাপনের সময় দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল উপস্থিত ছিলেন। আদালত থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামীতে আমরা এসব যক্তির পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করব।’

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হন। বেলা ১১টা ১৩ মিনিটে বিচারক তার এজলাসে আসন গ্রহণ করেন। বেলা সোয়া ১টা থেকে সোয়া ২টা পর্যন্ত বিরতি শেষে আবার যুক্তিতর্ক শোনেন আদালত। বিকাল ৪টায় আজকের মতো মুলতবি করা হয় আদালত।

এই মামলায় আজ তৃতীয় দিনের মতো যুক্তি উপস্থাপন হলো। গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষ তাদের যুক্তি উপস্থাপন করে। এরপর গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার যুক্তি উপস্থাপন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।

খালেদা জিয়ার শুনানি উপলক্ষে আদালত অঙ্গনের চারপাশে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিয়োজিত ছিলেন। আদালতে প্রবেশ গেটে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য আর্চওয়ে স্থাপন করা হয়।

আদালতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, রুহুল কবীর রিজভী, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ উপস্থিত থেকে যুক্তিতর্ক শোনেন।

আইনজীবীদের মধ্যে সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দীন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

গত ৫ ডিসেম্বর এই মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে খালেদা জিয়ার বক্তব্য শেষ হলে আদালত যুক্তি উপস্থাপনে জন্য ১৯, ২০ ও ২১ ডিসেম্বর সময় বেঁধে দেন।

দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এই মামলা করে দুদক। খালেদা জিয়া ছাড়াও তার বড় ছেলে তারেক রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদকে আসামি করা হয় মামলায়। আসামিদের মধ্যে খালেদা জিয়া, সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে আছেন। আর তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান পলাতক।

মামলা হওয়ার এক বছর পর তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দেন। এরও পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ অভিযোগ গঠন করলে খালেদাসহ ছয় আসামির বিচার শুরু হয়।

(ঢাকাটাইমস/২১ডিসেম্বর/এমএবি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আদালত এর সর্বশেষ

আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি

কক্সবাজারে কতজন রোহিঙ্গা ভোটার, তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট

সাউথ এশিয়ান ল' ইয়ার্স ফোরাম ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল চ্যাপ্টারের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন

আদেশ প্রতিপালন না হওয়ায় চট্টগ্রামের ডিসি এসপিসহ চার জনকে হাইকোর্টে তলব

১১ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানি ২৯ জুলাই

২৮ দিন পর খুলল সুপ্রিম কোর্ট

ব্যবসায়ী নাসিরের মামলা: পরীমনিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি

বোট ক্লাব কাণ্ড: পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন

সেই রাতে ৮৭ হাজার টাকার মদ খেয়েছিলেন পরীমনি, পার্সেল না দেওয়ায় তাণ্ডব

বোট ক্লাব কাণ্ড: প্রতিবেদন দিল পিবিআই, ব্যবসায়ী নাসিরের মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন পরীমনি?

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :