গোপালগঞ্জে কবি গান

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৫:৩৮

রাতে আলো-আধারে কবিয়ালদের তাত্ত্বিক যুক্তি-তর্ক শুনতে জড়ো হন হাজারো নারী-পুরুষ। প্রাচীনতম এই গান শুনতে ছুটে আসেন নতুন প্রজন্মের মানুরাও। প্রখ্যাত দুই কবিয়ালের গান শুনতে গোপালগঞ্জ জেলাসহ আশপাশের জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক শ্রোতা উপস্থিত হন। অনেকেই আবার প্রথমবারের মত কবিগান শুনতে হাজির হন।

মঙ্গলবার রাতে গোপালগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কবি গান। উপমহাদেশের প্রখ্যাত কবিয়াল ও বাংলাদেশ কবি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনি শংকর সরকার ও সঞ্জয় সরকার এ কবিগানে অংশ নেন। গভীর রাত পর্যন্ত এ গান অনুষ্ঠিত হয়।

ড. মহানাম ব্রত ব্রহ্মচারী মহারাজের ১১৪তম জন্ম-জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে শহরের খাটরা সার্বজনীন কালী বাড়িতে মহানাম সেবক সংঘ গোপালগঞ্জ শাখা এ গানের আয়োজন করে।

ওই দিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত খাটরা সার্বজনীন কালিবাড়ির খোলা ময়দানের মাঝখানে বানানো মঞ্চে দুই কবিয়ালের বাক-বিতন্ডা আর তর্ক-বিতর্কের যুদ্ধে লিপ্ত হয়। শ্রোতারা মন্ত্র-মুগ্ধের মতো নির্ঘুম রাত জেগে এই যুক্তিতর্ক উপভোগ করেন।

কবি গানের এ দৃশ্য এখন শুধুই কাল্পনিক হলেও সমাজের শিকড় সন্ধানী কিছু মানুষ এখনও এ কবি গানকে খুঁজে বেড়ান মনের অজান্তে। যেখানে এই গানের খবর শোনেন সেখানে চলে যান ছুটে। তাইতো আয়োজকরা আগামীতেও কবি গান আয়োজন করবেন বলে আশা করেছেন।

এক সময় এ অঞ্চলের শ্রোতারা কবি বিজয় সরকারের গান মন্ত্র-মুগ্ধের মতো শুনতেন। তখন মানুষের বিনোদনের একটি বড় মাধ্যম ছিল কবি, জারি, সারি গান। তার মধ্যে কবি গান ছিল অন্যতম। কালের আবর্তে এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় এসব গানের শ্রোতা একদিকে যেমন কমে গেছে, তেমনি গায়কও কমে গেছে।

গান শুনতে আশা অমর চন্দ্র হীরা, হরেন্দ্রনাথ মন্ডল, অন্যান্য ভক্ত, প্রত্যাশা মন্ডল, শিপ্রা বিশ্বাস, নির্ম্মলা মন্ডল, অনুপম ভক্ত, বিনয় বিকাশ মজুমদার, পপি মন্ডল ও মিঠুন বালাসহ বেশ কয়েকজন শ্রোতার সাথে কথা হলে তারা বলেন, কবি গান শুনলে সমাজের ভালো মন্দ জানা ও শেখা যায়। ধর্মও শিক্ষা পাওয়া যায়। অনেক আগে বেশি করে কবি গান হতো আমরা শুনতাম। এখন আর বেশি হয় না। তাই শুনতেও পারি না। যেখানে কবি গানের খবর পাই সেখানে চলে যাই।

বাংলাদেশ কবি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, মনিশংকর সরকার বলেন, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরবঙ্গ ও ভাটি অঞ্চলে কবিগানটা চলে। কবিগানে বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস ও ধর্ম নিয়ে আলোচনা করা হয়। এখানে ভালো মন্দ দুটো দিক তুলে ধরা হয়। কারণ শুধু ভালো বললে মানুষ সেটা গ্রহণ নাও করতে পারে এই জন্য মন্দ দিকটা বলে মানুষকে ভালোর দিক বুঝানো হয়। কবি গান যদি বেশি বেশি শোনা হয়, তাহলে মানুষের লেখাপড়া না করেও জ্ঞানার্জন সম্ভব। তাই সরকারি বা বেসরকারিভাবে যদি এই কবি গানকে ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়, তাহলে কবি গানের মাধ্যমে দেশ আরো উন্নত হতো বলে তিনি জানান।

জন্ম-জয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহবায়ক উত্তম কুমার মন্ডল বলেন, বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য ও সম্প্রীতির বন্ধন ধরে রাখতে আমরা এই কবি গানের আয়োজন করেছি। আগামীতেও এই ধরনের বাংলার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিগুলো পর্যায়ক্রমে পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

(ঢাকাটাইমস/২৭ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :