বিক্রির পর কিশোরীকে উদ্ধার, সালিসে তাকেই জুতাপেটা

সাগর হোসেন তামিম, মাদারীপুর প্রতিনিধি
| আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ২১:২০ | প্রকাশিত : ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ২০:১১

মাদারীপুর পৌর শহরে মধ্য খাগদি এলাকায় এক কিশোরীকে বিক্রি করে দেয়ার পর খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করেছে স্বজনরা। পরে যে যুবক বিক্রি করে দিয়েছেন এবং যাকে উদ্ধার করা হয়েছে, তাদেরকে নিয়ে বসে সালিশ মীমাংসার নামে ওই কিশোরীকে প্রকাশ্যে জুতাপেটা করা হয়েছে। এই নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা এবং একজন পৌর কাউন্সিলরসহ কয়েকজন।

কিশোরীকে বিক্রি করে দেয়ার ঘটনাটি মানবপাচার হলেও সালিশকারীরা বিষয়টি নিয়ে থানায় যায়নি। আর এই ঘটনার পর মেয়েটির পরিবার পড়েছে বিপাকে।

ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। বুধবার তা ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রশাসন এবং পুলিশের কর্মকর্তারা একে দেখছেন, আইন অমান্যের সামিল হিসেবে। তারা এই ঘটনায় যুবকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা দরকার বলে জানিয়েছেন।

নির্যাতিতার পরিবার ও স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, ১৮ ডিসেম্বর সোমবার দুপুরে শহরের মধ্য খাগদি এলাকার এক কিশোরীকে ফুসলিয়ে নিয়ে যায় একই এলাকার হাসান শরীফ নামে একটি ছেলে। এরপরে মেয়েটিকে তামান্না নামে এক নারীর কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়।

বিষয়টি ওই কিশোরীর পরিবার জানতে পেরে মাদারীপুর সদর উপজেলার খাগছাড়ার করমের বাজার থেকে শুক্রবার উদ্ধার করে। পরে কিশোরীর পরিবার স্থানীয়দের জানালে মঙ্গলবার বিকালে বিষয়টি নিয়ে সালিস মীমাংসায় বসে।

সালিসে উপস্থিত ছিলেন মাদারীপুর পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আইয়ুব খান, ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজাম খান, সাবেক কাউন্সিলর সামসুল হক খান, স্থানীয় প্রভাবশালী সেলিম মীরা, খবির খান, মাদারীপুর লিগাল এইড এসোসিয়শনের সালিশ কর্মী আকলিমা বেগমসহ শতাধিক লোকজন।

সালিসদার আইয়ুব খান ও মুজাম খানের সিদ্ধান্তে ওই কিশোরীকে দোষী দাবি করে ১০টি জুতার বাড়ি দেয়ার নির্দেশ দেন। হাসান শরীফকে জুতার বাড়ির পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। নির্দেশ পেয়ে সালিসে উপস্থিত আকলিমা বেগম ওই কিশোরীকে জুতাপেটা করে।

ঘটনার পর থেকে কিশোরীর পরিবার রয়েছে নিরাপত্তাহীনতায়। লোকলজ্জার ভয়ে বাড়ির বাইরে বের হতে পারছে না। ঘটনাটি জানতে ওই পরিবারের কাছে যাওযা হলে সাংবাদিকদের সাথে মুজাম খান হুমকি দেয়।

লাঞ্ছিতা কিশোরীর ভাই ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমার বোনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বিক্রি করে দেয় হাসান। এরপর আমরা বোনকে উদ্ধার করি। পরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়ার নামে আমার বোনকে জুতাপেটা করেছে। আমরা গবির দেখে বিচার পাওয়া তো দূরের কথা বরং আমার বোনকেই সবার সামনে শারিরীকভাবে আঘাত করা হয়।’

লাঞ্ছিতা ওই কিশোরী বলেন, ‘আমার অনেক বড় ক্ষতি করেছে ওরা। এর বিচার তো পাইনি উল্টো সালিশের নামে আমাকে জুতাপেটা করেছে। আমি এর বিচার চাই।’

সালিসদার ও স্থানীয় আওয়ামীগ নেতা মুজাম খান বলেন, ‘ওই মেয়ের চরিত্র খারাপ। সালিসে দোষী প্রমাণ হওয়ায় আমার জুতা পেটা করেছি।’

এ ব্যাপারে স্থানীয় কাউন্সিল আইয়ুব খানের সাথে যোগাযোগ করতে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে স্থানীয় সালিসদার আকলিমা বেগম বলেন, ‘সালিশে সিদ্ধান্ত হয় জুতা পেটা করার। সালিসদাররা জুতা পেটার নির্দেশ দিলে আমি নির্দেশ পালন করেছি। আমি জোরে জোরে না পিটিয়ে আস্তে পিটিয়েছি। আমি কাউন্সিলর ও সালিসদারদের নির্দেশ পালন করেছি।’

তবে মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক গোলাম মাওলা আকন্দ বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় সালিশযোগ্য নয়। এরপর সালিশে জুটার পেতার অভিযোগ উঠছে এক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক হলে দলীয়ভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’ মাদারীপুর পুলিশ সুপার সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি আমার জানা নেই। যদি ওই কিশোরীর পরিবার থেকে অভিযোগ দেয়া হয় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশকে অবহিত করেছি। দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে। এধরনের ঘটনা সালিশে মীমাংসাযোগ্য নয়। সালিশ মীমাংসার নামে যারা কিশোরীকে জুতা পেতা করেছে তারা গর্হিত অন্যায় করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ঢাকাটাইমস/২৭ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :