‘উন্নয়নের জন্য কুমিল্লা-২ থেকে নির্বাচন করব’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ১১:০৩ | প্রকাশিত : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৮:৪১

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্মানজনক ‘অসলো বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড ২০১৪’ পেয়েছেন তিনি। নিটল-নিলয় গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা আহমাদ এশীয় মুসলিম নারীদের মধ্যে প্রথম, যিনি এ পুরস্কার পেলেন। তিনি বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট। এবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দেয়া কর বাহাদুর পরিবার সম্মাননা পেয়েছে তার পরিবার। স্বামী আবদুল মাতলুব আহমাদ। নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি। সেলিমা আহমাদ ব্যবসায়ে যেমন সফল তেমনিভাবে পারিবারিক জীবনেও সফল। এবার তিনি রাজনীতিতে আসছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি কুমিল্লা-২ (হোমনা ও তিতাস) আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

এ সফল নারী উদ্যোক্তার সফল হয়ে ওঠা এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি কথা বলেছেন ঢাকাটাইমসের সঙ্গে। আলাপে ছিলেন জহির রায়হান। ছবি তুলেছেন শেখ সাইফ।

ঢাকাটাইমস: আপনি অনেক কিছুর সঙ্গে যুক্ত। ঘরে-বাইরে সব ক্ষেত্রেই সফল। সব দিক কীভাবে সামলাচ্ছেন?

সেলিমা আহমাদ: বিশেষ করে বাংলাদেশের একজন নারীর তার ঘর-সংসারও দেখতে হয়। তার যে পেশা আছে সেই পেশার দায়িত্বও পালন করতে হয়। আমার তো অনেক ভূমিকা- আমি একজন মা, একজন স্ত্রী, শ্বশুরবাড়ির বউ, আবার বাপের বাড়ির মেয়ে। তার সঙ্গে আমার এতবড় একটা কোম্পানি যেখানে পাঁচ হাজারের বেশি কর্মচারী-কর্মকর্তা। মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছি। উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনেক দায়িত্ব আছে। সেখানে প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার কাজ করতে হয়। কাজগুলো সরকার ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার সমন্বয় করে করতে হয়। গত ১৭ বছরে ৪৭ হাজার নারী উদ্যোক্তার উন্নয়ন করেছি। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সেই কাজগুলো করতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছি। তার পর এখন আমি কুমিল্লা-২ আসনের জন্য নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এরপরও আমাকে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ওয়ার্কশপে যেতে হয়। মাসে কমপক্ষে ৪ বার বিদেশে যেতে হয় বিভিন্ন সভা-সেমিনারে। উদ্যোক্তা উন্নয়নে কাজ করার জন্য। এগুলো ম্যানেজ করে নিতে হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী করলে আসলে একসঙ্গে কাজ করা যায়। সময়টাকে খুবই পরিকল্পিতভাবে ভাগ করতে হয়।

আমি ম্যানেজমেন্টের ছাত্রী, সময়কে কিভাবে সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায় সেটা শিখেছি। একজন হয়তো যে কাজ করতে এক মিনিট লাগবে সে এক মিনিটে আমি দুটা কাজ করি। ওই দক্ষতার প্রয়োজন হয়। আর একটা বিষয়, আলসে হওয়ার জায়গা নেই। মানসিকভাবে বা শারীরিকভাবে কষ্ট আমাদের জীবনে কম-বেশি থাকবে। কিন্তু সেটা আমাদের পেশাগত জীবনে যেন প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। এ কষ্ট যেন আমাদের কাজকে দাবাতে না পারে। এই কৌশলকে আয়ত্ত করতে হবে। অনেক সময় মন খারাপ থাকলেও কৌশলে আমাদের কাজ করতে হবে। ব্যবসায়ী নেতা যারা আছে পুরুষ-নারী সবার বেলাই তাদের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যে কোনো কাজ দক্ষতার সঙ্গে করতে হলে স্বাস্থ্যকে ঠিক থাকতে হবে। আমাকে শরীরের প্রতি সচেতন থাকতে হবে।

ঢাকাটাইমস: আপনার পরিবারে সবাই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ব্যবসায়ী পরিবার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। পারিবারিক জীবন নিয়ে জানতে চাই।

সেলিমা আহমাদ: আমার স্বামী সব সময়ই চাইতো যে আমরা যেন দুপুরের খাবার পরিবারের সবাই একসঙ্গে খাই। সেটাই হতো। একটা সময় আমরা একসঙ্গেই দুপুরের খাবার খেতাম। তবে এখন ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় সময় দেয়ার কারণে সেটা সম্ভব হয় না। তবে এখনো চেষ্টা করি বিশেষ করে ছুটির দিন পরিবারের সবাই একসঙ্গে খাবার খেতে। আর আমার সন্তানরা জন্ম থেকেই মা-বাবাকে দেখছে ব্যবসা করতে। অনেকে বাবাকে এক ভূমিকায় দেখে মাকে অন্য ভূমিকায় দেখে। কিন্তু আমার সন্তানরা দুজনকে ব্যবসায় দেখছে। সুতরাং এটা তাদের রক্তের মধ্যেই চলে গেছে।

আমার নাতিরা দেখছে দাদা-দাদিকে কাজ করতে, বাবাকে কাজ করতে। এখন ছেলের বউরাও কাজ করছে। ওরাও দেখি এই ব্যবসার মধ্যেই আছে। এটা একটা সাপ্লাই চেইনের মতো। আলহামদুলিল্লাহ ওটাই হয়েছে। আমার ছেলেদের গর্বের সঙ্গে বলতে পারি তারা খুবই আর্টিকুলেটেড। আমরা মূল্যবোধ জাগাতে চেষ্টা করি। আমার বড় ছেলে শ্রেষ্ঠ করদাতা (৪০ বছরের নিচে) সেটা পেয়েছে। এটা আমাদের নীতির মধ্যেই। আমরা আমাদের কর নিয়মমতো পরিশোধ করি।

ঢাকাটাইমস: এবার তো কর বাহাদুর পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।

সেলিমা আহমাদ: আমরা মনে করি এই দেশ আমাদের অনেক দিয়েছে। এদেশে একটা গাড়িই যদি না চলতো, আমাকে রাস্তাঘাট না করে দিতো আমি তো ব্যবসায়ই করতে পারতাম না। যে ১০ টাকা মুনাফা করলাম এই সরকারের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য, জনগণের জন্য তাহলে এই ১০ টাকা থেকে এক টাকা আমি কেন দিব না। এ কর দেয়া একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। একজন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব। এটা যে বড় কিছু কাজ করে ফেলেছি তা নয়, এটাই করা উচিত। আমার যেটা করছি এটাই স্বাভাবিক মনে করি। যারা করে না, সেটা অস্বাভাবিক, এটা হওয়া উচিত নয়।

ঢাকাটাইমস: এনবিআরের কার্যক্রম নিয়ে কিছু বলুন।

সেলিমা আহমাদ: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবারই প্রথম কর বাহাদুর পরিবার সম্মাননা দিল, এ জন্য তাদের ধন্যবাদ। আমি মনে করি অনেক ট্যাক্সের বিষয় আছে আমাদের জানা থাকে না। কর আইনজীবীরা সেটা দেখে। তারা যদি কোনো ক্লায়েন্টকে ভুল তথ্য দেয়, আর তার জন্য ক্লায়েন্ট যদি বিপদে পড়ে এটা প্রমাণিত হলে কর আইনজীবীকেও যেন আইনের আওতায় আনা হয়। অনেক সময় এর জন্য ট্যাক্সপেয়ার বিপদে পড়ে। কিন্তু যার কারণে বিপদে পড়লো তার কিন্তু কোনো বিচার নেই। সেই জায়গাটা যেন দেখা হয়। তাহলে কর আইনজীবীদের একটা জবাবদিহি থাকবে।

ঢাকাটাইমস: আপনি একজন সফল ব্যবসায়ী। এখন আবার সংসদ নির্বাচন করতে চান। এ নিয়ে আপনার পরিকল্পনা জানতে চাই।

সেলিমা আহমাদ: নির্বাচনে যাওয়ার পেছনে আমার এলাকার উন্নয়নের বিষয়টিও মাথায় এসেছে আগে। আমি দেখেছি আমার এলাকায় একেবারেই উন্নয়ন নেই। একেবারেই কাজ হয়নি। একজন এমপির কাজ না করতে পারার আমি কোনো কারণ দেখি না। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কাজ হবে না তাও আমি বিশ্বাস করি না। সেখানে আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিনিধি আজ পর্যন্ত জয়ী হতে পারেনি। জননেত্রী শেখ হাসিনা এত ভালো ভালো কাজ করছেন তার সুফল কেন আমাদের এলাকায় নিয়ে আসতে পারছি না। আমি একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ী হিসেবে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে সফল হয়েছি। সুতরাং আমার এলাকায় এমন উদ্যোগ নিব, যে উদ্যোগে জনগণ সুফল পাবে।

কিছু বিষয় আমার চোখে পড়েছে, নারীদের বিষয়। আমি যে জিনিস দেখেছি, কোনো রাজনীতিবিদ সেটা দেখেনি, কারণ তিনি একজন নারী নন। নারী হিসেবে যেসব জিনিস আমার অসুবিধা হয় সেটা কিন্তু একজন পুরুষ কখনও বুঝবে না। যেমন নারীরা যখন নদীতে গোসল করে এরপর নদীর পারেই কাপড় পাল্টায়। তাদের জন্য কাপড় পরিবর্তনের কোনো ঘর নেই সেখানে। এটা একজন নারীর জন্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর। তো এমন অনেক ছোট জিনিস আছে আমি দেখি। আমি চিন্তা করি এই জায়গায় আমি থাকলে তো আমার খুবই কষ্ট হতো। সে জন্যই আমি ওখানে কাজ করতে চাই। এমন অনেক কিছু আছে যেটা নারীদের সমস্যা। অনেক বৃদ্ধ আছে যাদের চিকিৎসার অভাব আছে। শিশুদের জন্য শিশু পার্ক করা, তাদের জন্য মানসম্পন্ন স্কুল করা। রাস্তাঘাট অবকাঠামো উন্নয়নের ব্যাপার তো আছে, এগুলো তো করতেই হবে। (কাল দ্বিতীয় কিস্তি)

(ঢাকাটাইমস/২৯ডিসেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :