তিন প্রজন্মের মিলনমেলা

আরিফ আজম, ফেনী
 | প্রকাশিত : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ২২:১২

শ্যাম সুন্দর সিকদার। ফেনী মডেল হাই স্কুলে ১৯৭৫ সালের ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। ছিলেন শিক্ষকও। একই অনুষ্ঠানে হাজির ৫৩ ব্যাচের ছাত্র কাজী গোলাম মাঈন উদ্দিন ও ৫৪ ব্যাচের ছাত্র রফিক রহমান ভূঁইয়া। এদের আরেকজন ২০০২ ব্যাচের শিক্ষার্থী লুৎফুর রহমান খোকন হাজারী। নানান ব্যস্ততায় দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে না এলেও শুক্রবার ফেনী মডেল হাই স্কুলের ৯০ বছরপূর্তি উৎসব তিন প্রজন্মের মিলনমেলায় পরিণত হয়। দিনভর উচ্ছ্বাসে মেতেছিলেন হাজারো নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থী। তাদের সাথে যোগ দেয় বর্তমানরাও। মঞ্চে অতীতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আনমনে আনন্দাশ্রু সংবরণ করতে পারেননি অনেকে। দীর্ঘদিন পর সতীর্থদের পেয়ে অনেকেই মেতেছেন উচ্ছ্বাসে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যকালেই স্মৃতিচারণ করেন বর্তমান ডাক ও টেলি যোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার। তিনি বলেছেন, ‘বাবার কর্মস্থলের সুবাধে ফেনী মডেল হাই স্কুলে ভর্তি হই। নবম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর আমার ইচ্ছে ছিল বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার। কিন্তু তখনো এ স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগের শুরু হয়নি। এ বিষয়ের শিক্ষকও নেই। পাইলট স্কুলে ভর্তির সুযোগ থাকলেও স্যাররা যেতে দেননি। কারণ তাদের সিদ্ধান্ত ছিল আমাকে দিয়েই এ স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ শুরু হবে। পরবর্তীতে আমাকে দিয়েই বিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়েছে। আমিই এ স্কুলের প্রথম ‘ফাস্ট ডিভিশন’ প্রাপ্ত ছাত্র। কয়েকজন শিক্ষকের কথা খুব মনে পড়ে। তাদের মধ্যে অন্যতম একরাম স্যার। আমার মনে পড়ে, একদিন আমি প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়ি। গায়ে প্রচুর জ্বর। স্কুলে আসতে পারিনি। তখন একরাম স্যার খবর নিতে আমার ইলোরা হাউজের পাশের বাসায় দেখতে যান। স্যার সেদিন আমার মাথায় পানিও দিয়েছিলেন। ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক এমন হওয়া উচিত। কয়েক বছর পর আমি স্কুলে শিক্ষকতা করলেও স্যারদের সাথে কখনো সমান চেয়ারে বসতাম না। অফিস কক্ষে একটি টুলে বসেই প্রয়োজনীয় কাজ সারতাম। শ্রেণিকক্ষেও শিক্ষকের চেয়ারে বসতাম না। এই শহরে প্রাইভেট পড়ানো আমার ৫শতাধিক ছাত্র রয়েছে। স্কুলের যে কোন প্রয়োজনে পাশে থাকার অঙ্গিকার করেন স্কুলের এ কৃতি ছাত্র ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব।

এভাবেই স্কুলের অতীত স্মৃতিচারণ করেন কাজী গোলাম মাঈন উদ্দিন, কাজী নুর নবী, নুরুল করিম মজুমদার, মীর হোসেন মীরু, আবুল হাশেম, আবদুল করিম, শহীদ উল্লাহ পাটোয়ারি।

বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। এ বিদ্যালয়ের সাথে তার পরিবারের জড়িত থাকার কথা তুলে ধরে তার বাবা কমিশনার জয়নাল আবদীন দীর্ঘকাল ধরে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ফেনী পৌরসভার মেয়র থাকাকালীন ও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর এ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণসহ বেশকিছু উন্নয়ন করেছেন। এছাড়া ফেনীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা উন্নয়নের চিত্রও তুলে ধরেন নিজাম হাজারী এমপি।

উৎসব উদযাপন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক রফিক রহমান ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য জাহান আরা বেগম সুরমা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সফিউদ্দিন আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দেবময় দেওয়ান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বি.কম, ফেনী পৌরসভার মেয়র হাজী আলাউদ্দিন। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি, ৮৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও উৎসব উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব আশ্রাফুল আলম গিটার অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম এ কালাম। এছাড়া বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রধান শিক্ষক বিষ্ণপদ চক্রবর্তী, ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসমিয়া সুলতানা, ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আল ফয়সাল ফাহিম।

উৎসবকে ঘিরে বিদ্যালয় ছাড়াও শহরের প্রধান সড়ক আলোকসজ্জা ও বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীদের স্মৃতিকথা এবং বিভিন্ন সৃজনশীল ও সহ-শিক্ষা কার্যক্রমের ছবি নিয়ে বের করা হয় ‘ঐকতান’ স্মরণিকা।

অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা হোসেন, কাজী নুর নবী, নেপাল চন্দ্র শীল, কান্তি লাল দাস (কমান্ডার), বেলায়েত হোসেন, মাস্টার আবদুর রহিম, মানু মিয়া পাটোয়ারিকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এছাড়া প্রাক্তন শিক্ষকদের মধ্যে বিষ্ণপদ চক্রবর্তী, একরামুল হক, এসএম রেজা, ননী গোপাল, সন্তোষ কুমার পাল, নারায়ণ চক্রবর্তী, দীপ্ত রানী মজুমদার, রাধানিয়া বসাক, শক্তি পাল সাহা, গোপাল চন্দ্র নাথ, ফেরদৌস আরা বেগম, রতন রানী চক্রবর্তীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মরহুম আবদুল বারী (অনারারী ম্যাজিস্ট্রেট) এর পক্ষে সম্মাননা পদক গ্রহন করেন তার নাতি আতিকুল বারী। শেষ পর্বে প্রাক্তন শিক্ষার্থী হাসিনা আক্তার নিঝুম ও সমর দেবনাথের যৌথ সঞ্চালনায় ফেনীর বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে সংগীত শিল্পী নোলক ও চৈতালী গান পরিবেশন করেন। এছাড়া বিদ্যালয়ে নবনির্মিত শহীদ মিনার উদ্বোধন করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৯ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :