নড়াইলে মধুমতির ভাঙনে দিশেহারা চার শতাধিক পরিবার

ফরহাদ খান, নড়াইল
 | প্রকাশিত : ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৯:০৯

নড়াইলের মধুমতি নদীর অব্যাহত ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন লোহাগড়া উপজেলার মঙ্গলপুর ও চাপুলিয়া গ্রামবাসী। নদী ভাঙনে নিঃস্ব এই দুই গ্রামের চার শতাধিক পরিবার। প্রায় ১৫ বছর ধরে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে নদীতে পানির চাপ না থাকলেও ইতোমধ্যে ভেঙেছে দুটি গ্রামের বসতবাড়ি, গাছপালাসহ কৃষি জমি। বিশেষ করে মধুমতি নদী ভাঙনের শিকার নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার চরমঙ্গলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং চাপুলিয়া বাবুচ্ছন্নাৎ দাখিল মাদরাসা টিকিয়ে রাখার দাবি করেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী।

মঙ্গলপুর গ্রামের ইসহাক আলী ঢাকাটাইমসকে বলেন, মধুমতি নদীগর্ভে আমাদের এলাকার ২০০ বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। এখন চরমঙ্গলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ভাঙছে। মুক্তিযোদ্ধা মোল্যা তমসিল আলী জানান, প্রায় ১৫ বছর ধরে মঙ্গলপুর গ্রামটি ভাঙছে। ভাঙনের কারণে অনেকে পথের ভিখারি হয়ে গেছে। আমরা খুব দুর্ভোগে আছি। বিশাল খেলার মাঠটির চৌদ্দআনা (বেশির ভাগ) মধুমতি নদীগর্ভে চলে গেছে।

কোটাকোল ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মুজিবার রহমান বলেন, আগে এখানে প্রায় এক হাজার ৮০০ ভোটার ছিল। নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে বর্তমানে প্রায় এক হাজার ২০০ ভোটার আছেন। এছাড়া মধুমতি নদী ভাঙনে গাছপালা, কৃষি জমিসহ বিস্তীর্ণ এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন এই জনপ্রতিনিধি।

চরমঙ্গলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহাবুদ্দিন মোল্যা ঢাকাটাইমসকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মধুমতি নদী ভাঙতে ভাঙতে এখন বিদ্যালয়ের কাছাকাছি চলে এসেছে। বিদ্যালয় মাঠটি প্রায় বিলীন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা খেলাধূলা করতে পারে না। নদীতে পড়ে যাওয়ার ভয়ে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে আসতে দিতে চান না। যে কারণে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। শিক্ষার্থী সাকিবসহ অন্যদের দাবি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভাঙন প্রতিরোধে যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শাহাদাত হোসেন বলেন, ১৯৮৫ সাল থেকে লোহাগড়া উপজেলার মঙ্গলপুর গ্রামটি ভাঙছে। ইতোমধ্যে ইটভাটা, বাড়িঘর, রাস্তাঘাটসহ অনেক ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে।

হাসান বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে পাশের বড়দিয়া এলাকায় কয়েক বছর আগে বক্ল ফেলা হলেও মঙ্গলপুরে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এদিকে, নড়াইলের কোটাকোল ইউনিয়নের চাপুলিয়া বাবুচ্ছন্নাৎ দাখিল মাদ্রাসা, ফসলি জমি, গ্রামের কাঁচা রাস্তাসহ বাড়িঘর সম্প্রতি মধুমতি নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। এছাড়া চাপুলিয়া এলাকার প্রায় ৩০০ বাড়ি ভাঙনের হুমকিতে আছে। নভেম্বরের প্রথম দিকে নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধ ভাবে বালুকাটায় চাপুলিয়া এলাকার মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। যদিও লোহাগড়া উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে গত ১২ নভেম্বর চাপুলিয়া এলাকায় মধুমতি নদী থেকে অবৈধ বালুকাটা বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় ভাঙন প্রতিরোধের দাবিতে সম্প্রতি এলাকাবাসী চাপুলিয়ায় মানববন্ধন করেন।

চাপুলিয়ার আমিরুল ইসলাম বলেন, চাপুলিয়া মাদ্রাসা থেকে খাশিয়াল খেয়াঘাট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার অংশে বালুকাটায় দুই বছর ধরে মধুমতি নদী ভাঙছে। এতে চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৩০০ বাড়িঘরসহ গ্রামের ভেতরের কয়েকটি রাস্তা ভাঙনের হুমকিতে আছে। চাপুলিয়া বাবুচ্ছন্নাৎ দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মোল্যা বাবুল হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, মাদ্রাসাটি ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে। তবে, মধুমতি নদীর ভাঙনে মাদরাসাটি হুমকি মুখে।

অপর শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র দাস বলেন, মধুমতির করালগ্রাসে এলাকার কৃষি জমি, বসতবাড়ি, কবরস্থানসহ বিভিন্ন জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু কাটায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

মাদ্রাসার সাবেক সুপার হাবিবুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, মাদ্রাসার প্রায় ছয় বিঘা জমির মধ্যে ইতোমধ্যে চার বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

চাপুলিয়ার হুমায়ুন কবীর বলেন, এবার বর্ষা মওসুমে মধুমতি নদীতে আমাদের বাড়ির বেশির জায়গা ভেঙেছে। কোনোভাবে বসত ঘর দাঁড়িয়ে আছে। এখন শুষ্ক মওসুমে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ না করলে আমরা কোথায় যাবো?

রাজু জানান, চাপুলিয়া গ্রামের কাঁচা রাস্তাটি প্রায় দুই বছর আগে নদীগর্ভে চলে গেছে। বুলু বিশ্বাস বলেন, নদী ভাঙনে নিঃস্ব লোকজন এখন কোথায় যাবে? আমরা গরিব মানুষ যাওয়ার জায়গা নেই। দুই বিঘা জমি রেখে নতুন বাড়ি করার উপায় নেই!

কোটাকোল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আবু হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমাদের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙছে। ভাঙনের কবলে পড়ে আমরা মধুমতি নদীর ও-পার থেকে এ-পারে চলে এসেছি। এখন যেখানে বসবাস করছি, সেখানেও ভাঙছে। ভাঙন প্রতিরোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ চাই।

কাজলি বেগম বলেন, আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি। কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাই না। নারগিস বেগম বলেন, কেউ আমাদের খোঁজ-খবর রাখে না। বসত ভিটা ছাড়া অন্য জায়গা-জমি নেই, আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো?

পানি উন্নয়ন বোর্ড নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানেওয়াজ তালুকদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, লোহাগড়া উপজেলার মঙ্গলপুর ও চাপুলিয়া এলাকার ভাঙন প্রতিরোধে প্রস্তাব পাঠানো হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে আরও খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/৩১ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :