আবার পিছিয়ে কুমিল্লা, কারণ কী?

মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭, ১০:৩২ | প্রকাশিত : ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৯:৪৪
ফাইল ছবি

ধারাবাহিকভাবে পাবলিক পরীক্ষার ফলে ধ্স নেমেছে কুমিল্লা বোর্ডে। গত এইচএসসি, এসএসসির ধারাবাহিকতায় এবার অষ্টম শ্রেণি সাময়িকী জেএসসি ও মাদ্রাসার জেডিসিতেও পিছিয়ে কুমিল্লা বোর্ড।

চলতি বছর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় সারা দেশে পাসের হার কমেছে ১০ শতাংশের মতো। এই খারাপ ফলাফলের জন্য শিক্ষামন্ত্রী দায়ী করেছেন কুমিল্লা বোর্ডকে। এই বোর্ডে পাসের হার কমেছে ২৭ শতাংশ।

কেন বারবার কুমিল্লা পিছিয়ে পড়ছে- কারণ বুঝতে পারছে না খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর খারাপ করার কারণ বের করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষাবোর্ড।

ফলাফলে পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল ছালাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এবার তিন কারণে কুমিল্লা বোর্ডের জেএসসি ফল খারাপ হয়েছে। তার মধ্যে- শহরের স্কুলে ভালো শিক্ষক সংকট, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে ভালো শিক্ষকের অভাব এবং এক কেন্দ্রের শিক্ষক অন্য কেন্দ্রে স্থানান্তরকরণ।’

চেয়ারম্যান বলেন, ‘এবার কুমিল্লা বোর্ডে ইংরেজি ও অংকে বেশি খারাপ ফল এসেছে। ইংরেজিতে ৩৯ দশমিক ৩০ শতাংশ ও গণিতে ১৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ায় কুমিল্লা বোর্ডের ফলে ধ্স নেমেছে।’

চলতি বছর এই বোর্ডে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে এক লাখ ৬৪ হাজার ৪৫৬ জন। প্রতি ১০ শিক্ষার্থীর মধ্যে চার জনই ফেল করেছে এই বিভাগে।

বছরের মধ্যে সর্বনিন্ম ফলাফল

কুমিল্লা বোর্ডের গত পাঁচ বছরের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৩ সালে পাসের হার ছিল ৯০ দশমিক ৪৫ শতাংশ, ২০১৪ সালে পাসের হার ৯৩.৭৫, ২০১৫ সালে পাসের হার ৯২.৫১ এবং ২০১৬ সালে পাসের হার ছিল ৮৯.৬৮ শতাংশ। আর চলতি বছর এটা আরও কমে হয়েছে ৬২ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

পাঁচ বছরের গড় থেকে এ বছর পাসের হার কমেছে ৩০.৯২ শতাংশ এবং জিপিএ ফাইভ কমেছে ১১ হাজার ৮৭২।

চলতি বছর জেএসসি ও জেডিসিতে এই বোর্ড থেকে সর্বোচ্চ জিপিএ পেয়েছে ৮ হাজার ৮৭৫ জন। এর আগে ২০১৬ সালে জিপিএ ফাইভ পেয়েছিল ১৯ হাজার ১৮৬ জন, ২০১৫ সালে ২০ হাজার ৭৪৭ জন, ২০১৪ সালে ১৭ হাজার ২৬৪ জন এবং ২০১৩ সালে ১৬ হাজার ৯৫ জন।

শুধু পাসের হার ও জিপিএ ফাইভ নয়, কমেছে শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। এ বছর শতভাগ পাস করেছে মাত্র ৬১টি প্রতিষ্ঠান। এর আগে ২০১৩ সালে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৩১৪টি, ২০১৪ সালে ৫২৭টি, ২০১৫ সালে ৪৪৫টি ও ২০১৬ সালে ৩৪৮টি।

বোর্ড কর্মকর্তারা যা বলছেন

বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, কুমিল্লা মফস্বলের চাইতে শহরের শিক্ষার্থীরা ভালো করেছে। শহরের স্কুলগুলোতে ভালো মানের শিক্ষক থাকায় এমন চিত্র তৈরি হয়েছে। এক স্কুলের শিক্ষকদের অন্য স্কুলে পরীক্ষার পরিদর্শনের দায়িত্ব দেয়াটাও ফল খারাপ হওয়ার একটি কারণ হতে পারে।

এই শিক্ষা কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘নকলমুক্ত পরীক্ষা আয়োজন করাটাই ছিলো আমাদের মূল লক্ষ্য। সে বিষয়ে আমরা সফল হয়েছি। তবে ফল খারাপ হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ফল খারাপ হওয়ার কারণগুলো খতিয়ে দেখে তা সমাধানে কাজ করবে কুমিল্লা বোর্ড।’

ধারাবাহিকভাবে কেন ফল খারাপ হচ্ছে এমন প্রশ্নে আব্দুল ছালাম বলেন, ‘নানা কারণ রয়েছে এর পেছনে। অন্যতম কারণ হচ্ছে দক্ষ শিক্ষক না থাকা, টেস্ট পরীক্ষা না দিয়ে পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেয়া, ঠিক মতো স্কুলে শিক্ষার্থী উপস্থিতি না থাকা, অভিভাবকদের সচেতনতা না থাকা।’ আমরা গত দুইবছরের ফলাফল খারাপের কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে বলেও জানান শিক্ষাবোর্ড প্রধান।

বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহাদুর হোসেন জানান, এ বছর ৬১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। শূন্য পাসের হার একটি প্রতিষ্ঠান কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার জগতপুর উচ্চ বিদ্যালয়, নয়জন পরীক্ষার্থীর সবাই ফেল করেছে।

বাহাদুর জানান, ইংরেজি ও গণিতে বেশি পরীক্ষার্থী ফেল করায় এ বছর পাসের হার কমেছে। এ বছর ইংরেজিতে ফেল করেছে ৭৬ হাজার ৬৮১ জন এবং গণিতে ফেল করেছে ৪৫ হাজার ৯১৫ জন।

কুমিল্লা বোর্ডের ফলাফলের কারণে সার্বিক ফলাফল খারাপ হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ‘কুমিল্লা বোর্ড ধারাবাহিকভাবে খারাপ করছে। এর প্রভাব সার্বিক ফলাফলে পড়ছে। তবে কেন কুমিল্লা খারাপ করছে সে বিষয়ে আমাদেরকে গভীরে যেতে হবে। এটা নিয়ে গবেষণা করতে চাই। তবে আজকে যেহেতু ফল প্রকাশ হলো আজই তো আর এটা নিয়ে মাঠে নামা সম্ভব না। আমরা এটা নিয়ে মাঠে যাব। পর্যালোচনা করব। সার্বিক ফলাফল নিয়ে আমরা গবেষণা করব।’

এবার ১০টি শিক্ষা বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৪২ জন, যা গত বছর ছিল ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫৯ জন। বেড়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৮৩জন। আর এবার পাস করেছে ২০ লাখ ১৮ হাজার ২৭১জন। যা গত বছর ছিল ২১ লাখ ৮৩ হাজার ৯৭৫ জন। এবার কমেছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৭০৪ জন।

এবার জেএসসি ও জেডিসিতে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার ৬২৮ জন। যা গত বছর ছিল ২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৮৮ জন। কমেছে ৫৫ হাজার ৯৬০ জন।

(ঢাকাটাইমস/৩১ডিসেম্বর/এমএম/ডব্লিউবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :