ভারতীয়দের উদ্ভট কল্পনাবিলাস

প্রভাষ আমিন
| আপডেট : ০১ মার্চ ২০১৮, ০৮:১০ | প্রকাশিত : ০১ মার্চ ২০১৮, ০৮:০৬

১৯৪৭ সালের আগে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান অভিন্ন ছিল, ছিল ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট। ব্রিটিশরা যেতে বাধ্য হওয়ার আগে ভারত ভেঙে ভাগ করে দিয়ে যায়। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট স্বাধীন হয় অদ্ভূত রাষ্ট্র পাকিস্তান। একদিন পর ১৫ আগস্ট স্বাধীন হয় ভারত। অদ্ভূত রাষ্ট্র পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্ব ছিল ১১শ মাইল। কিন্তু মানসিক দূরত্ব ছিল লক্ষ যোজন। জন্মের পর থেকে পাকিস্তানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেনাবাহিনী শাসিত।

বরাবরই পাকিস্তানের ক্ষমতার আসল উৎস সেনাবাহিনী। পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের নাম সবাই জানে, এমনকি আইএসআইয়ের প্রধানের নামও বেশ পরিচিত। দ্বিজাতি তত্ত্বের অসারতা বুঝতে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের বেশি দিন লাগেনি। ৫২এর ভাষা যে চেতনার উন্মেষ, ‘৭১এ তার চরম বিকাশ হয়। ২৩ বছরের মুক্তিসংগ্রাম আর নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠন। কিন্তু ‘৭৫এর পর উল্টে যায় চাকা। আবার পাকিস্তানি ভূত চেপে বসে। জিয়া এবং এরশাদ ক্যান্টনমেন্ট থেকে এসে পাকিস্তানি স্টাইলে দেশ চালান। পাকিস্তানে প্রায় পুরো সময় এবং বাংলাদেশের দীর্ঘসময় সেনাশাসন থাকলেও পাকিস্তানের চেয়ে একদিনের ছোট ভারত কিন্তু দারুণ ব্যতিক্রম। গত ৭১ বছরে ভারতের রাজনীতির সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা ছিল না বললেই চলে। পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তপ্ত সীমান্ত এবং একাধিক যুদ্ধের কারণে এমনিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী যথেষ্ট সক্রিয়; কিন্তু সেটা যুদ্ধের ময়দানে, রাজনীতির মাঠে ভারতের সেনাবাহিনী বরাবরই আড়ালে থাকে।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে ভারত আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। তাই তখনকার কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা ছাড়া আর কোনো ভারতীয় সেনাপ্রধান ছাড়া আর কারো নাম আমাদের জানা নেই। এই প্রথম একজন ভারতীয় সেনাপ্রধানের নাম আলোচনায়। তার নাম বিপিন রাওয়াত। তিনি নজিরবিহীনভাবে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। যা নিয়ে তুমুল সমালোচনা তার দেশেই। তবে ভারতীয় সেনাপ্রধান তার দেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বললে আমাদের আপত্তি থাকতো না। কিন্তু বিপিন রাওয়াত যা বলেছে, তা চরম আপত্তিকর, উদ্ভট, ঔদ্ধত্যপূর্ণ। একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দাবি করছি, বাংলাদেশ সরকারও যেন তার আপত্তিকর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি করে।

তার আগে দেখে আসি ভারতীয় সেনাপ্রধান কী বলেছিলেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি নয়া দিল্লিতে এক সেমিনারে বিপিন রাওয়াত বলেন, ‘আমাদের পশ্চিমা প্রতিবেশীর কারণে পরিকল্পিতভাবে অবৈধ অভিবাসন চলছে। তারা সব সময় এই এলাকাকে (ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল) নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করবে এবং সেটা নিশ্চিত করতে চাইবে। বিভিন্ন মাত্রায় ছায়াযুদ্ধ চালাতে চায় তারা। আমি মনে করি, আমাদের উত্তরের প্রতিবেশীর সমর্থন নিয়ে পশ্চিমা প্রতিবেশী এই ছায়াযুদ্ধের খেলাটা ভালোই খেলে। এ এলাকাকে অস্থির রাখতে চায় তারা।’

জেনারেল রাওয়াত কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি। কিন্তু বুঝতে অসুবিধা হয় না ভারতের উত্তর প্রতিবেশী চীন, পশ্চিম প্রতিবেশী পাকিস্তান। তার মানে হলো চীনের সহায়তায় পাকিস্তান বাংলাদেশি মুসলমান অনুপ্রবেশকারীদের ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যে, বিশেষ করে আসামে পাঠাচ্ছে। এটাকে জেনারেল রাওয়াত বলছেন পাকিস্তানের ছায়াযুদ্ধ। জেনারেল রাওয়াতের অভিযোগ, বাংলাদেশের মুসলমানদের ঠেলে পাঠিয়ে পাকিস্তান আসামের জনবিন্যাসে পরিবর্তন আনতে চায়। নিজের বক্তব্যের যুক্তি হিসেবে বিপিন রাওয়াত বলেন, আগে আসামের চার-পাঁচটি জেলা ছিল মুসলিমপ্রধান। এখন সেখানে মুসলমানদের আধিক্য আট-নয়টি জেলায়। তিনি আরও বলেন, ‘এআইইউডিএফ (অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) বলে একটা দল আছে। খেয়াল করে দেখুন, বিজেপি বছরের পর বছর যে গতিতে বেড়েছে, ওরা আসামে তার চেয়েও দ্রুত বেড়েছে।’

সেনাপ্রধানের এই নজিরবিহীন রাজনৈতিক বক্তব্যে তোলপাড় ভারতেও। তবে আমার সেটা নিয়ে বক্তব্য নেই। আমার আপত্তি শুধু বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা নিয়ে। এমনিতে রাওয়াতের বক্তব্য অবাস্তব, অকল্পনীয়। পাকিস্তান চীনের সহায়তায় বাংলাদেশের মুসলমানদের আসামে ঠেলে পাঠাচ্ছে। একটু চিন্তা করে দেখুন, কী রকম অসম্ভব কল্পনা। পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ভৌগোলিক দূরত্ব ১১শ মাইল। আর পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক এখন সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে খারাপ। তাই পাকিস্তানের পক্ষে বাংলাদেশের কাউকে আসামে ঠেলে পাঠানো অসম্ভবকেও ছাড়িয়ে যায়। আর বাংলাদেশ থেকে মুসলমানরা ভারতে অনুপ্রবেশ করবে, এটা বিপিন রাওয়াত ছাড়া আর কোনো পাগলেও বিশ্বাস করবে না।

এটা ঠিক ৪৭ এ দেশভাগের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে এ অঞ্চল থেকে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে ভারতে গেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এই প্রবণতা কমলেও একেবারে বন্ধ হয়নি। এখনও বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে হিন্দুদের কেউ কেউ নীরবে দেশত্যাগ করেন। কিন্তু বাংলাদেশের মুসলমানরা ভারতে যাচ্ছে, তাও আসামের মতো পিছিয়ে পড়া রাজ্যে; এটা কল্পনা করতেও সাহস লাগে। বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে গতিতে এগুচ্ছে, তাতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া সাত রাজ্যের লোকজন বাংলাদেশে আসতে চাইলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক এখন সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে খারাপ হলেও ভারতের ক্ষেত্রে উল্টো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দুই দেশই নিজেদের স্বার্থটা বুঝে নিতে পেরেছে। নিষ্পত্তি হয়েছে অনেক অমীমাংসিত বিষয়। আওয়ামী লীগ একটা বিষয় ভারতকে আশ্বস্ত করতে পেরেছে, বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে কাউকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টির সুযোগ দেয়া হবে না। শুধু মুখের কথা নয়, বাংলাদেশ সত্যি সত্যি এটা প্রমাণ করেছে। তাই ভারতও নিশ্চিন্তে থাকতে পারছে। জেনারেল রাওয়াত যদি ১২ বছর আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এই অভিযোগ করতেন, তাহলে ধারণাগতভাবে হলেও কেউ বিশ্বাস করতে পারতেন। কারণ তখন পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ ছিল। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য আসা ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়েছিল চট্টগ্রাম বন্দরে।

গত ১০ বছরে বাংলাদেশ ভারতের পরীক্ষিত বন্ধু। কিন্তু ভারত সে বন্ধুত্বের মর্যাদা রাখেনি। এখনও তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা পাইনি। সীমান্তে মানুষ হত্যার ঘটনা প্রায়ই বেদনার্ত করে আমাদের। আর জেনারেল রাওয়াতের কাল্পনিক অভিযোগ বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বকে উপহাস করছে। যদি রাওয়াতের অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহলে বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্ব থাকবে না। পাকিস্তান হবে আমাদের মিত্র। এখন তার বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণের দায়িত্বও তার। সেনাপ্রধানের মতো দায়িত্বশীল পদে থেকে এ ধরনের আজগুবি কথা বলা যায় না। প্রমাণ করতে না পারলে জেনারেল রাওয়াতকে অবশ্যই তার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে এবং ক্ষমা চাইতে হবে।

কয়েকদিন আগে আসামে এক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেখানে বাঙালি মুসলমানদের অনেককে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে। বলা হচ্ছে, তারা বাংলাদেশ থেকে গেছে। যদিও যাদের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে, তাদের অনেকে তিন পুরুষ ধরে আসামে বসবাস করছেন। জেনারেল রাওয়াতের উসকানিমূলক বক্তব্য আসামের সেই উদ্দেশ্যমূলক রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া বিতর্কের আগুনে ঘি ঢালবে।

ভারতের সেনাপ্রধান যখন দিল্লিতে সেমিনারে বক্তব্য রাখছিলেন, তখন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের খাদ্য ও সরবরাহমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বেনাপোল জিরো পয়েন্টে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ২০ বছরের মধ্যে গোটা বাংলা এক হয়ে যাবে। তার বক্তব্য শুনে আমার মনে হয়েছে তিনি বোধহয় পুরোপুরি সুস্থ নন বা তিনি কল্পনায় ১০০ বছর আগের বাস্তবতায় ফিরে গেছেন। কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী দুই বাংলাকে এক করার কথা ভাবলেও ভাবতে পারে। কিন্তু রাজ্য সরকারের মন্ত্রীর মতো দায়িত্বশীল কারো পক্ষে এমন উদ্ভট বক্তব্য রাখা সম্ভব, এটাই ভাবতে অসম্ভব মনে হচ্ছে।

বেনাপোল জিরো পয়েন্টে আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানটি খুবই আবেগের ছিল। কারণ বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষ একত্রে সেখানে ভাষা শহীদদের স্মরণ করেছেন। অস্থায়ী শহীদ বেদীতে ফুল দিয়েছেন। দুই বাংলার মানুষের এ মিলনমেলায় বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, যশোর জেলার সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার, কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী, জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন, বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল হক, পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের শিল্পী ফাতেমাতুজ্জোহরা, কিরণ চন্দ্র রায় এবং ভারতের শিল্পী অনুপম রায় সংগীত পরিবেশন করেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ভারতের লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় এবং বাংলাদেশের আবৃত্তিকার জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়।

আমার খালি অবাক লাগছে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক যখন ২০ বছরের মধ্যে গোটা বাংলা এক হয়ে যাবে বলছিলেন; তখন সেখানে উপস্থিত দুই বাংলার এতজন সুস্থ ও সম্মানিত তার প্রতিবাদ করেননি কেন?

এটা ঠিক, বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গ একসময় অভিন্ন বঙ্গ ছিল। ব্রিটিশ শাসনের আগে বিহার এবং উড়িষ্যাও বাংলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রশাসনিক এলাকা হিসেবে বড় হয়ে যাওয়ায় ১৯০৫ সালে বঙ্গ ভঙ্গ হয়। কিন্তু প্রচণ্ড গণআন্দোলনের মুখে ১৯১১ সালে বঙ্গ ভঙ্গ রদ হয়। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় বঙ্গ আবার ভঙ্গ হয়। পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানে এবং পশ্চিমবঙ্গ ভারতে যুক্ত হয়। পূর্ববঙ্গ পরিণত হয় পূর্ব পাকিস্তানে। পরবর্তীকালে একাত্তরের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ নামক একটি নতুন দেশের সৃষ্টি হয়। অভিন্ন বাংলা এখন ৭১ বছরের পুরোনো ইতিহাস।

এটা ঠিক বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের একটা ঐতিহাসিক, কূটনৈতিক, ইমোশনাল, সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। ভাষার ঐক্য তো রয়েছেই, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের টানটা নাড়ির। ১৯৪৭ সালে পুরোপুরি ভেঙে গেলেও দুই বাংলার মানুষের রক্তের সম্পর্কটা এখনও রয়ে গেছে। দেশভাগের সময় বা পরে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ওপার বাংলা থেকে অনেকে পূর্ব পাকিস্তানে এসেছেন। আবার এপার বাংলা থেকে সংখ্যালঘুদের অনেকেই ভারতে চলে গিয়েছেন বা চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। যতই বাধ্য হন, তাদের শেকড় তো বাংলাদেশেই। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মানুষেরা কলকাতায় পরিচিত ‘বাঙাল’ হিসেবে। এই বাঙালদের অনেকেই রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্যে অনেক উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। কিন্তু তারা ভুলে যাননি বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের প্রতি তাদের টানটা রয়েই গিয়েছে। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা কৃতজ্ঞতার। এই কৃতজ্ঞতা জন্মের। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত আমাদের সরাসরি সহায়তা করেছে। বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার পরিচালিত হয়েছে কলকাতা থেকে। ভারত আমাদের শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে, খাইয়েছে। তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দৃঢ় কূটনৈতিক পদক্ষেপ বাংলাদেশকে অনেক বিপদ থেকে বাঁচিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ভারত সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে পাকিস্তানের পরাজয় নিশ্চিত হয়। একাত্তরের এই অপরিসীম সহায়তা আমরা কোনোদিন ভুলিনি, ভুলবো না।

কিন্তু ভারতকে মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ এখন একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। আর পশ্চিমবঙ্গ ভারতের একটি রাজ্য মাত্র। আবেগের টেবিলে ঠিক আছে, কিন্তু কূটনৈতিক টেবিলে ঢাকার সঙ্গে নয়া দিল্লির আলোচনা হবে; কলকাতার এখানে কোনো ঠাই নেই। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গোটা বাংলা এক হয়ে যাওয়ার যে স্বপ্ন তা ২০ বছরে কেন ২০ কোটি বছরেও পূরণ হবে না। বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছে যাচ্ছে। ভারতের একটি রাজ্যের মন্ত্রী কী বললেন, না বললেন; তা শোনার সময় নেই আমাদের। তবে ভারতের সেনাপ্রধান আর রাজ্য মন্ত্রী তাদের কল্পনার রাশ টানলে ভালো হয়।

প্রভাষ আমিন: বার্তাপ্রধান, এটিএন নিউজ

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :