কোটা সংস্কারে রিট
‘আপনি তো সাংঘাতিক লোক’
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার চেয়ে করা রিটের পক্ষে লড়া আইনজীবীকে ‘সাংঘাতিক লোক’ বলেছেন বিচারপতি।
সোমবার বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আবেদনটি নিয়ে শুনানির এক পর্যায়ে আদালত এই মন্তব্য করে।
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতিতে সংবিধানের লংঘন এবং বৈষম্যমূলক দাবি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আনিসুর রহমান মির,ঢাকাস্থ কুমিল্লা সাংবাদিক সমিতির সদস্য সচিব দিদারুল আলম ও দৈনিক আমাদের অর্থনীতির সিনিয়র সাব এডিটর আব্দুল ওদুদ এই রিট আবেদনটি করেছিলেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
শুনানির শুরুতে রিটকারীর আইনজীবী বলেন, ‘আমরা রিটে কোটা প্রথা কেন সংস্কার করা হবে না- তার নির্দেশনা চেয়েছি।’
জবাবে আদালত বলে, ‘এগুলো (কোটা পদ্ধতি প্রণয়ন) হয়েছে ১৯৯৭ ও ২০১১ সালে। এসব এখন বলছেন কেন?’
আইনজীবী একলাছ উদ্দিন বলেন, ‘যখন কোটা নির্ধারণ হয়, তারপরও কয়েকবার তা সংস্কার হয়। বুদ্ধিজীবীরাসহ অনেকেই এ কোটার বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছেন। নারী, মুক্তিযোদ্ধা, উপজাতীসহ অনেক কোটা রয়েছে।’
তখন বিচারক বলেন, ‘এসব সরকারের পলিসি। এগুলো কি সরকারের নজরে নেই?’।
আইনজীবী বলেন, ‘আমি শুধু রুল চাচ্ছি এ কোটার কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিরাও সুবিধা পাচ্ছেন।’
তখন বিচারক জানতে চান, কোটার দ্বারা কোনো ভায়োলেশন (সংবিধান লংঘন) হয়েছে কি না। আর আইনজীবী তখন সংবিধানের ১৯ অনুচ্ছেদের লংঘনের দাবি করেন।
বিচারক এরপর জানতে চান, যারা রিট করেছেন তারা কোটা নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়েছেন কি না।
জবাবে আইনজীবী জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিটকারী শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি সামনে পরীক্ষা দেবেন। অন্য দুজন সাংবাদিক।
পরে আদালত আইনজীবীকে বলেন, ‘আপনি বলতে চান, আমি আইনে পাস করেছি এখন ডাক্তার হতে চাই? তিনি তো এখনো সংক্ষুব্ধ হননি। এটা ভবিষ্যতের বিষয়। এখনও তিনি পরীক্ষা দেননি। তার আগেই তিনি রিট করেছেন?’
‘কোটা আছে, কি আছে না- সেটা সরকারের পলিসি। আপনি সংক্ষুব্ধ কি না, ক্ষতিগ্রস্ত কি না- তা হওয়ার আগেই আদালতে এসেছেন? আপনি তো সাংঘাতিক লোক।’
পরে রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট বেঞ্চ। পরে একলাছ উদ্দিন ভূইয়া সাংবাদিকদের বলেন, তারা এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে পশ্চাদপদ বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য কোটার পাশাপাশি নারী ও জেলা কোটা রয়েছে। সব মিলিয়ে কোটার সংখ্যা ৫৬ শতাংশ। নানা সময় দেখা গেছে সরকারের শেষ বছরে কোটা পদ্ধতি বাতিল বা সংস্কার চেয়ে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীদের একাংশ। গত ফেব্রুয়ারিতেও এই আন্দোলন শুরু হয়েছে।
সবশেষ ৪ মার্চ রাজধানীর শাহবাগে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ’ এর ব্যানারে। তারা সরকারি চাকরিতে কোটা ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পেলে সাধারণ প্রার্থীদের থেকে নিয়োগ দেয়া, কোটায় কোনো বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেয়া, নিয়োগ পরীক্ষায় কোনো একাধিক কোটার ব্যবহার না করা এবং সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অভিন্ন বয়সসীমা নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছে।
নানা সময় দেখা গেছে আন্দোলনকারীরা মূলত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কোটার বিষয়টি মানতে চাইছে না। তাদের দাবি, এই ৩০ শতাংশ কোটার জন্য তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। আবার মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে আপত্তি উঠায় এরও বিরূপ প্রতিক্রিয়া আছে দেশে।
ঢাকাটাইমস/০৫মার্চ/এমএবি/ডব্লিউবি