রোহিঙ্গাদের তাড়াতে মরিয়া কাশ্মির
ভারতের কাশ্মিরে বসবাসকারী বেশ কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে দেশ থেকে তাড়ানোর জন্য সেখানে নতুন করে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়েছে। খবর বিবিসির।
গত কয়েকদিনে কাশ্মিরে প্যান্থার্স পার্টির মতো রাজনৈতিক দল, বজরং দলের মতো উগ্র হিন্দু সংগঠন বা প্রাক্তন সেনা-কর্মীদের সংগঠন এই দাবিতে আলাদাভাবে বিক্ষোভ দেখিয়েছে।
আর এদিন কাশ্মির চেম্বার অব কমার্সও রোহিঙ্গাদের তাড়ানোর জন্য খবরের কাগজে পাতাজোড়া বিজ্ঞাপন দিয়েছে।
গত মাসে কাশ্মিরের কাছে একটি সেনা শিবিরে জঙ্গি হামলার পর থেকেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নতুন করে এই অভিযান শুরু হয়েছে, যদিও রোহিঙ্গারা বলছেন কাশ্মিরে তারা আসলে রাজনৈতিক চক্রান্ত আর অপপ্রচারের শিকার।
হোলির পরদিন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবিতে কাশ্মিরের প্রাণকেন্দ্রে বিক্ষোভ দেখিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী দল প্যান্থার্স পার্টি।
দলের নেতা বলওয়ন্ত সিং মানকোটিয়া বলছিলেন, ‘কাশ্মিরের সব সংগঠন ও সুশীল সমাজ এখন একমত যে রোহিঙ্গাদের যত দ্রুত সম্ভব বের করে দিতে হবে। তারা শুধু নিরাপত্তার জন্যই হুমকি নয়, তারা আমাদের তরুণ সমাজকে মাদক সরবরাহ করছে - মানব পাচার ও আরও নানা অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে।’
আর শুধু রোহিঙ্গারাই নন, কাশ্মিরে আক্রমণের নিশানায় এখন কথিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরাও।
বজরং দলের নেতা রাকেশ শর্মার কথায়, ‘কেন্দ্রীয় সরকারও এটা সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে মেনে নিয়েছে যে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিরা দেশের জন্য বিপজ্জনক। আমাদের বিশ্বাস, গত মাসের ১০ তারিখে সানজুয়ান সেনা ছাউনিতে হামলার ঘটনাতেও রোহিঙ্গাদের হাত ছিল।’
ওই হামলার পর ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও বলেছিলেন, জইশ-ই-মোহাম্মদের জঙ্গিরা ওই আক্রমণ চালানোর সময় 'সম্ভবত স্থানীয় কিছু মানুষের সাহায্য পেয়েছিল'।
এরপরই কাশ্মিরে অনেকে ধরে নিয়েছেন, এই 'স্থানীয়'রা রোহিঙ্গা শরণার্থী ছাড়া কেউ নয়। কাশ্মিরে প্রাক্তন সেনা সদস্যদের মিছিল থেকেও দাবি উঠেছে, সেনা ক্যাম্পের আশেপাশে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিদের কিছুতেই রাখা চলবে না।
সেনাবাহিনীর সাবেক প্যারাট্রুপার বীরবাহাদুর সিংয়ের কথায়, ‘এরা বাহিনীর সুরক্ষার জন্য বিপজ্জনক - কারণ তারা স্লিপার সেলের মতো কাজ করছে। এদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের দেশে ফেরত পাঠানো ছাড়া উপায় নেই।’
এর মধ্যে কাশ্মির চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজও কাগজে বিরাট বিজ্ঞাপন দিয়ে বলেছে, ওই অঞ্চলের শান্তি ও সুস্থিরতার জন্যই কাশ্মিরকে রোহিঙ্গামুক্ত করতে হবে। গোটা শহর জুড়েও রোহিঙ্গা খেদানোর দাবিতে পোস্টার পড়েছে।
আর নানা দিক থেকে এই প্রবল চাপের মুখে আরও কোণঠাসা অবস্থায় পড়েছেন কাশ্মিরের রোহিঙ্গারা।
দিল্লিতে তরুণ রোহিঙ্গা ছাত্র আলি জোহর বিবিসিকে বলছিলেন, ‘গত দুবছর ধরেই এ জিনিস চলছে, তবে এখন তার তীব্রতা আরও বেড়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো পর্যন্ত কাগজে রোহিঙ্গা তাড়াতে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে।’
‘কাশ্মিরে আমার সব বন্ধুবান্ধব ভয়ে ফোন পর্যন্ত বন্ধ করে রেখেছে। সেখানে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে আমাদের বিরুদ্ধে যা-তা বলা হচ্ছে - এমন কী রোহিঙ্গারা মানুষখেকো, কাশ্মিরের বাচ্চাদের খেয়ে নেবে - এ সব বলাও বাকি থাকছে না!’
রোহিঙ্গাদের ভারত থেকে বিতাড়নের বিষয়টি এখনও ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। কিন্তু কাশ্মির যেন তার আগেই ঠিক করে ফেলেছে, সেখানকার রোহিঙ্গাদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলে অন্তত তাদের কাশ্মির-ছাড়া করতেই হবে!
(ঢাকাটাইমস/৫মার্চ/এসআই)