১৯৭১ সালে ২রা মার্চ ও পতাকা কাহিনি

প্রকাশ | ০৫ মার্চ ২০১৮, ২২:০১ | আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৮, ২২:২৪

অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী

০২/০৩/২০১৮ অন্তত দিনটি দৈনিক পত্রিকায় ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ সম্পর্কে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এই পত্রিকাগুলো হোল দৈনিক কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও দৈনিক সংবাদ। কালের কণ্ঠে আ.স.ম আবদুর রবের একটি নিবন্ধ ও শাহজাহান সিরাজের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। প্রথমোক্তটি লেখক নিজে, দ্বিতীয়টি সাক্ষাৎকারে ভাষ্যগুলো শাহজাহান সিরাজের স্ত্রী রাবেয়া সিরাজের প্রদত্ত। আ.স.ম রব ভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে শুরু ও শেষ করলেও এক পর্যায়ে তিনি ২রা মার্চ ১৯৭১ সালের কথা টেনেছেন।

তিনি বলেন ‘আমি ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তোলন করেছিলাম।’ ছাত্রলীগের তদানীন্তন সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী এটাকে বড়জোর পতাকা প্রদর্শন বলে মনে করেন আর ঢাকসুর তদানীন্তন সাধারন সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখন ২৩ মার্চকে পতাকা উত্তোলন দিবস হিসাবে চিহ্নিত করতে আগ্রহী ছিলেন। উত্তোলনের ব্যাপারে কিছু আনুষ্ঠানিকতা থাকে। নূরে আলম সিদ্দিকী মনে করেন এসব আনুষ্ঠানিকতা অতিক্রম করে পতাকা উত্তোলিত হলে ছাত্রলীগের সভাপতি হিসাবে সেটা তারই কথা ছিল। মাখন মনে করেন সে চার নেতার সিদ্ধান্তে ২৩ মার্চ পতাকা প্রদর্শন ও বঙ্গবন্ধু তা উত্তোলন করেছেন। শাহজাহান সিরাজ ১৯৭১ সালে আতিকুর রহমানকে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে আ.স.ম রবকে পতাকা উত্তোলক হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। এবারে কালের কণ্ঠে তার পক্ষে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে রাবেয়া সিরাজ একটু ভিন্ন কথা বলেছেন। এই পতাকাটা মূলত জয় বাংলা বাহিনীর পতাকা ছিল যা ২রা মার্চ বাংলাদেশ এর পতাকা বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন ‘১৯৬৯ সালের ৭ জুন এই পতাকা নিয়ে কুচকাওয়াজ করার জন্য স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী ছাত্র পরিষদে সিদ্ধান্ত হয়’। এখানে একটি ভুল লক্ষণীয়; আসলে তারিখটা ছিল ১৯৭০ সালের ৭ জুন এবং উপলক্ষ ছিল ৬ দফা দিবসে বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জ্ঞাপন। তিনি বলেন, যে ইকবাল হলের ১০৬ নম্বর কক্ষে এই পতাকাটা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন ভাষ্যে হলের নাম অভিন্ন থাকলেও কক্ষের নম্বর কখনও ১১৮, ১১৬ কিংবা ১০৩ উল্লিখিত হয়েছে। পতাকা তৈরির ধারণা নিয়ে ভিন্নজনের ভিন্নমত ছিল এমনকি কাজী আরেফ ও হাসানুল হক ইনুর মধ্যে লক্ষণীয় পার্থক্য ছিল। হাসানুল হক ইনু ও আবদুল  কুদ্দুস মাখনের মতে ২৩ মার্চকে আনুষ্ঠানিক পতাকা উত্তোলন দিবস বলা যায়। কেননা, সেদিন সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের মাধ্যমে পতাকা তোলা হয়েছিল। পতাকা তৈরির জন্যে কে কাপড়, কে রং তুলি এনেছেন এবং কীভাবে এনেছেন তা নিয়ে বিস্তর মতভেদ রয়েছে। পতাকার রং নিয়ে বিতর্ক ছিল, ছিল বাংলাদেশের মানচিত্র পতাকার মধ্যখানে  সংস্থাপনের পক্ষ-বিপক্ষ। শেষোক্ত ব্যাপারে কাজী আরেফের ধারণাই জয়ী হলো। সিরাজুল আলম খান মোটেই পতাকা তৈরির পক্ষে ছিলেন না।

রাবেয়া সিরাজ আরও বলেন ‘আগর তলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে সদ্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুকে স্যালুট দেয়ার জন্যে তড়িঘরি এই পতাকা তৈরি শুরু  হলো। শাহজাহান সিরাজের হয়ে আরো বলা আছে ‘এই পতাকা নিয়ে ১৯৬৯ সালে পল্টন ময়দানে আমরা বঙ্গবন্ধুকে মার্চ পাস্টসহ স্যালুট দিলাম। সেটিই তাকে দেয়া হলো প্রথম আনুষ্ঠানিক সম্মাননা, বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন। ১৯৬৯ সালের ৬ জুনের সেই সভায় আমি প্রথম জয় বাংলা ব্যানার দেখেছি।’

এই উক্তিগুলোর কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। আমি তখনও ছাত্রলীগের সদস্য ছিলাম এবং পরবর্তী জীবনে পতাকা কাহিনি নিয়ে যেটুকু জেনেছি তাতে এসব উক্তির অসারত্ব খুঁজে পাচ্ছি। হয়ত শাহজাহান সিরাজের অসুস্থতায়ই তার জন্যে দায়ী। এটা বলছি এ’কারণে যে ১৯৯০ সালে শাহজাহান সিরাজের একটি সাক্ষাৎকারের বক্তব্যের সাথে আমি পরিচিত আছি। স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক সম্পর্কে বলতে গিয়ে রাবেয়া সিরাজ যা বলেছেন তা শুধু অসত্য নয়, বিভ্রান্তি কর। তিনি বলেছেন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন আইনের ছাত্র শাহজাহান সিরাজ তখন ঢাকসুর জি.এস আর নূরে আলম সিদ্দিকী ভিপি।’

ইতিহাসের কোনো সূত্র থেকে এই উক্তির স্পষ্টতা বা সত্যতা খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনকি রাবেয়া সিরাজ বি.এল.এফ গঠন সম্পর্কে যে মতামত দিয়েছেন তাও ভিত্তিহীন। তিনি বলেছেন ‘বি.এল.এফ ১৯৬৯ সালে গঠিত হয়’। আমি নিজে বি.এল.এফ এর সদস্য ছিলাম এবং ১৯৭১ সালে তার নাম পরিবর্তিত রাখা হয় মুজিব বাহিনী। আমি শীর্ষ অবস্থানে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি বলে নির্দ্ধিধায় বলতে পারি বি.এল.এফ ষাটের দশকের প্রথম ভাগে গঠিত হয়েছিল।

 আবারও আ.স.ম. রব প্রসঙ্গে ফিরে আসি। কেননা তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনে লেখা দিয়েছেন এবং সংবাদ পত্রিকায় তাকে নিয়ে খবর পরিবেশিত হয়েছে। তিনি বলেছেন ‘২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় ঢাকসুর ভিপি হিসাবে আমি সর্বপ্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করি। আমার পাশে ছিলেন আবদুল কুদ্দুস মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী ও শাহজাহান সিরাজ।’ পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নিউক্লিয়াসের না স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের ছিল এই নিয়ে আলোকপাত করার আগে বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত রবের লেখার প্রসঙ্গে আসি।

আ.স.ম রব এর লেখার শিরোনাম হচ্ছে ‘পতাকা উত্তোলন ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের মৃত্যু পরোয়ানা’। তিনি অনেক কথার মাঝে বলেন ১৯৭১ সালে ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান পূর্ব ঘোষিত সংসদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার পর গর্জে উঠল ছাত্র জনতা’। ....

‘২রা মার্চ  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাঙ্গনে ছাত্র জনতার সমাবেশের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করি। সে মোতাবেক রাতে নিউক্লিয়াসের বৈঠকে ২রা মার্চ স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করার সিদ্ধান্ত হয়।’ নিউক্লিয়াসের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্র জনতার এক বিশাল সামবেশে মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে আমি স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করি’। তারপর তিনি লিখেন ‘এই পতাকারও পেছনে ইতিহাস রয়েছে। ১৯৭০ সালের ৭ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল (বর্তমান জহুরুল হক হল) ১১৬ নম্বর কক্ষ’। ....আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এই কক্ষে বসে পতাকা তৈরির পরিকল্পনা করি।’ তিনি পতাকার অভ্যন্তরে বাংলাদেশের মানচিত্র সংস্থাপনের জন্য শিব নারায়ণ দাস ও কামরুল আলম খানকে কাপড় সংগ্রহের ভার দিয়েছিলেন। রংয়ের যোগানদান বা সেলাইকারীর নামোল্লেখে তিনি বিরত থাকেন। তিনি আরো বলেন ‘উত্তোলনের পর থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’। সর্বশেষ বাক্যটি ঐতিহাসিক সত্যের ব্যত্যয় কেননা স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১লা মার্চ গঠিত হয়। তাই ১লা মার্চের পর সেই পরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়া অন্য সব সিদ্ধান্ত প্রশ্নবোধক; যা নূরে আলম ও মাখন মনে করেন।

১৯৯১ সালে আতিকুর রহমানের বইয়ে পরিবেশিত কাজী আরেফ আহম্মদ শাহজাহান সিরাজের মতই আ.স.ম রবকে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক মনে করেন। আরেফ বলেন ‘মানচিত্র খচিত বাংলাদেশের মূল পতাকার পরিকল্পনা হয়েছিল ১৯৭০ সালের ৬ জুন রাতে। মরহুম শেখ মুজিবুর রাহমানের অনুমোদন নিয়েই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের জয় বাংলা বাহিনীর ব্যটেলিয়ান পতাকা হিসাবেই এই পতাকা সেদিন তৈরি হয়’ স্বাধীনতার স্বপ্নকে সামনে রেখে। ১৯৭০ সালের ৭ জুন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানই এই পতাকা তুলে দেন রবের হাতে। রব সাক্ষাৎকারে বলেছেন ‘শেখ সাহেবের কাছে হাটু মুড়ে বসে আমি জয় বাংলা বাহিনীর পতাকাটা আস্তে আস্তে এক দিক থেকে খুলে ছিলাম। পতাকাটা পুরো খোলার পর শেখ সাহেব জিহ্বায় কামড় দিলেন’। যাক, পতাকা তার হাতে দিলাম। তারপর কাজী আরেফের ভাষ্যে এই পতাকা ইকবাল হলে নিয়ে আসা হয় এবং এই পতাকাটাই আ.স.ম রব ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় (আসলে গাড়ী বারান্দার উপরে) প্রদর্শন করে। এই পতাকার ডিজাইন সম্পর্কে রব বিস্তারিত বলেছেন।

‘রাত ১২টার সময় সিদ্ধান্ত হোল পতাকা তৈরির ব্যাপারে। বিভিন্নজনের সাহায্য নিয়ে এই পতাকা সে রাতেই সম্পন্ন করা হয়। এটাই হলো স্বাধীন বাংলার পতাকা।’

১লা মার্চ স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের তিন নেতার সিদ্ধান্তেই এই পতাকা বাংলাদেশের পতাকা হিসাবে উত্তোলনের সিদ্ধান্ত হয়। কাজী আরেফের মতে এই সিদ্ধান্ত হয় স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সভায়। এই সব উক্তির ব্যাপারে নূরে আলম সিদ্দিকী দ্বিমত পোষন করেন এবং রবীন্দ্রনাথের দুই বিঘা জমির কয়েক লাইনের প্যারোডি বানিয়ে তিনি তার জবাব দেন। মাখনও সহমত প্রকাশ করতেন। তার ভাষ্যমতে পতাকাটা বহন করে আনলে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেনের হাত থেকে তা গ্রহণ করেন আ স ম আবদুর রব। তবে অন্য একটি সূত্রে বলা আছে জাহিদের হাত থেকে নয়, জগন্নাথ কলেজ ছাত্রলীগ শাখার সাধারণ সম্পাদক নজরুলের হাত থেকে রব সভা চলাকালীন অবস্থায় পতাকাটি গ্রহণ করেন’। সেখানে চার নেতার সবাই উপস্থিত থাকলেও দুই নেতা তার বিপরীত কথা বিভিন্ন সভায় দিয়েছেন বা দিয়ে যাচ্ছেন।

জাহিদ প্রসঙ্গে ফিরে আসা বোধ হয় বাঞ্চনীয়। জাহিদের মতে ১৯৭০ সালের ৭ জুন (৬ দফা দিবসের দিন) পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় ৬ জুন সন্ধ্যায় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আহসান উল্লাহ হলের এক কক্ষে। জহুর বাহিনীর পক্ষ থেকে একটি স্বতন্ত্র ‘সিম্বোলিত পতাকা’ বঙ্গবন্ধুকে প্রদান করার সিন্ধান্ত হয়। 

জহুর বাহিনীর পতাকার কাপড়, রং ও জমিন নিয়ে সিদ্ধান্তটা হলে তার রূপায়ন সে রাতেই করা হয়। যদিও জাহিদ পতাকার আকৃতি, রং ইত্যাদি নিয়ে সাদৃশ্য থাকলেও জাহিদের সাথে অন্তত ধারণাগত বৈসাদৃশ্যও কিন্তু রয়েছে। যেমন অন্যদের মতে পতাকা তৈরি হয়েছে ইকবাল হলে আর জাহিদ এর মতে তা হয়েছে আহসানউল্লাহ হলে। ১৯৭০ সালের ৭ জুন ব্যান্ডের তালে তালে সেই পতাকা নিয়ে পল্টন ময়দানে নজরুল ও জাহিদ উপস্থিত হয়। জাহিদ বলেন পূর্ব নির্ধারিত প্রোগ্রাম অনুযায়ী আ.স.ম রব সামরিক কায়দায় অভিবাদন সহকারে সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পতাকাটি বঙ্গবন্ধুকে উপহার দেন, বঙ্গবন্ধুও অভিবাদন সহকারে পতাকাটি গ্রহণ করেন। জাহিদ লিখেন, ‘বঙ্গবন্ধু তৎকালিন ছাত্রলীগের মত ও ধারা সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত ছিলেন এবং আ স ম রবের দিকে মুচকি হেসে শেখ কামালের হাতে পতাকাটি দিয়ে দেন’। শেখ কামাল পতাকাটি নিজের কাছে কিংবা বাসায় রাখতে নিরাপদ মনে না করে জাহিদকে তা ফিরিয়ে দেন। প্রায় ৮ মাস পরে জাহিদ এই পতাকাটি তার ঘরে পুনঃআবিষ্কার করেন এবং পাড়ার ছেলেদের নিয়ে প্রসেশন করে ২রা মার্চের বটতলার সমাবেশে বিলম্বে এসে হাজির হন। ‘মিলিটারী প্রহরীদের উৎসুক চোখের সামনে দিয়ে স্লোগান  দিতে দিতে আমরা রমনাপার্ক এবং রেসকোর্স ময়দানের মাঝখান দিয়ে কোনাকুনি হেঁটে বিশ্ববিদ্যালয়ে বটতলার সভাস্থলে গিয়ে উপস্থিত হই’।

ইতোমধ্যে সভার বক্তাগণ বিশাল দর্শকের সুবিধার্থে বক্তৃতাস্থল পরিবর্তন করে। জাহিদ লিখেছেন ‘সভার মাঝখান দিয়ে হেঁটে সিঁড়ির ছাদের নিচে গিয়ে পতাকাটি উপরে ছাদে দাড়ানো আ স ম রবের হাতে তুলে দেই। রব পতাকাটি হাতে নিয়ে উপরে তুলে ধরে দোলাতে থাকেন’। তারপর আবেগ তাড়িত নেতা ও জনতা সভার পরিসমাপ্তি টেনে বিকালের সভার ঘোষণা দেন। বিকালে হরতালের মধ্যে ছাত্র-জনতা সকালে প্রদর্শিত পতাকার বড়, মধ্যম ও ছোট সংস্করণ নিয়ে পল্টন ময়দানের ছাত্রসভায় উপস্থিত হয়।

৩রা মার্চ এই পতাকা আবার প্রদর্শিত হয়। জাহিদ শেষে লিখেছেন, ‘মার্চ মাসের মাঝামাঝি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে দেশের প্রতিষ্ঠিত শিল্পী কামরুল হাসানকে দিয়ে মাঝখানের সূর্যসহ সম্পূর্ণ পতাকার আনুপাতিক মাপ নিয়ে ডিজাইন করিয়ে নেয়া হয় এবং জন সাধারনের জ্ঞাতার্থে দেশের পত্র-পত্রিকায় ছাপিয়ে দেওয়া হয়। এই পতাকাটিকেই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সম্মতিক্রমে ২৩ মার্চ বাংলাদেশ দিবসে’ উত্তোলিত হয়। এই পতাকা বঙ্গবন্ধুকে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করলে তিনি নিজ ভবনে তা উত্তোলন করেন। অবশ্য বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হলে পর মাঝখানে আঁকা বাংলাদেশের মানচিত্রটি তুলে নেয়া হয়। 

এ দিয়ে কি প্রমানিত হয় না যে, দু’ তারিখে পতাকা উত্তোলন হয়নি, জাহিদের হাত থেকে নিয়ে তা রব প্রদর্শন করেন এবং পতাকা উত্তোলনের একক কৃতিত্ব তিনি বা তার নেতা সিরাজুল আলম খানের একক প্রাপ্য নয়। কাজী আরেফ ও আবদুল রাজ্জাক এর ভাষ্য মতে এ’সব কিছুই বঙ্গবন্ধুর পূর্ব অনুমোদন নিয়েই করা হয়েছিল। পাদটীকায় বলছি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী হিসেবে আমি ২রা মার্চ কলা ভবনে উপস্থিত থেকে সবই অবলোকন করি। তবে আমি বাক-বিতণ্ডার অংশীদার হতে চাই না। 

তথ্যসূত্র:

১)      আতিকুর রহমান ‘জাতির পিতা ও পতাকা কাহিনী’, আগামী প্রকাশনী, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ১৯৯১

২)      আবদুল মান্নান চৌধুরী, ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রাসঙ্গিক কথা’, আগামী প্রকাশনী, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১৫

৩)     শেখ মুহাম্মদ জাহিদ হোসেন ‘মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগ ও বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বি.এল.এফ), অঙ্কুর প্রকাশনী, ঢাকা, ২০০২

৪)      ২রা মার্চ, ২০১৮ সালের দৈনিক কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও দৈনিক সংবাদ পত্রিকা

অধ্যাপক . আবদুল মান্নান চৌধুরী: মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর উপাচার্য