বাসে নারী যাত্রীদের ৯৪ শতাংশ যৌন হয়রানির শিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৬ মার্চ ২০১৮, ১৯:৫৬ | প্রকাশিত : ০৬ মার্চ ২০১৮, ১৯:৫৪
ফাইল ছবি

গণপরিবহন নারীদের জন্য কতটা অনিরাপদ হয়ে উঠেছে সেটি উঠে এসেছে এক জরিপে। এতে দেখা গেছে প্রতি ১০০ জন নারী যাত্রীর ৯৪ জনই যৌন হয়রানির শিকার হন। কিন্তু নারীরা আরও হয়রানির আশঙ্কায় প্রতিবাদও করতে পারেন না।

জরিপে বলা হয়, গণপরিবহনে যাতায়াতে প্রতি ১০০ জনের ৯৪ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আর যারা হয়রানি করেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ৪১ থেকে ৬০ বছর বয়সী পুরুষ। এই হার ৬৬ শতাংশ।

আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ না থাকা, বাসে অতিরিক্ত ভিড়, যানবাহনে পর্যাপ্ত আলো না থাকা, তদারকির অভাবকে (সিসি ক্যামেরা) যৌন হয়রানির মূল কারণ হিসেবে তুলে ধরেছেন গবেষকরা।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ব্র্যাক পরিচালিত ‘নারীর জন্য যৌন হয়রানি ও দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের জেন্ডার, জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি কর্মসূচির সমন্বয়কারী হাসনে আরা বেগম ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)-এর রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট কবিতা চৌধুরী।

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে নারীদের নিরাপত্তাকে কীভাবে আরও জোরদার করা যায় এর সুপারিশ তুলে ধরতে ব্র্যাক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

গবেষণাটিতে সহযোগিতা করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। এটি পরিচালনা করেছেন অধ্যাপক সৈয়দ সাদ আন্দালিব, অধ্যাপক সিমিন মাহমুদ, ফাহমিদা সাদিয়া রহমান এবং কবিতা চৌধুরী।

২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে গবেষণাটি করা হয়। এতে সংখ্যাগত ও গুণগত ভিত্তিতে ৪১৫ জন নারী অংশ নেন। এতে মূলত আলোকপাত করা হয়েছে নগর, উপশহর এবং গ্রাম এলাকায় নিম্ন ও নিম্নমধ্য আয়ের পরিবারের নারীদের সড়ক ও গণপরিবহন ব্যবহারের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার ওপর। জরিপটি পরিচালনা করা হয় ঢাকা, গাজীপুর ও সাভারের বিরুলিয়া এলাকায়।

গণপরিবহন ব্যবহারকারী উত্তরদাতাদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা ১৯-২৫ বছর বয়সী পুরুষদের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। প্রায় ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা ২৬-৪০ বছর বয়সী পুরুষদের উত্ত্যক্তকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

শারীরিকভাবে যৌন হয়রানির মধ্যে রয়েছে ইচ্ছাকৃত স্পর্শ করা বা চিমটি কাটা, কাছ ঘেঁষে দাঁড়ানো বা আস্তে ধাক্কা দেওয়া, নারীদের চুল স্পর্শ করা বা কাঁধে হাত রাখা ইত্যাদি।

ঘটনার শিকার হলে মেয়েরা কী পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন- এই প্রশ্নের উত্তরে গবেষণার জরিপে ৮১ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন তারা চুপ করে থাকে এবং ৭৯ শতাংশ বলেছে তারা আক্রান্ত হওয়ার স্থান থেকে সরে যায়।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, নারীদের শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আগের চেয়ে অগ্রগতি হলেও কর্মক্ষেত্রে এখনো তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তাই গবেষণার সুপারিশের ভিত্তিতে তারা এ ব্যাপারে জনসচেতনতার পাশাপাশি আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের ওপর জোর দাবি জানান।

সূচনা বক্তব্যে ব্র্যাকের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক আহমেদ নাজমুল হোসেইন বলেন, ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সচেতনতার অংশ হিসেবে আমরা গাজীপুর, টাঙ্গাইল মহাসড়কের আশেপাশের ১০০টি স্কুলে কাজ শুরু করেছি। এসব স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সড়ক নিরাপত্তা ও যৌন হয়রানি সম্পর্কে তথ্য জানানো ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।’

অনুষ্ঠানে গবেষণাসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন অধ্যাপক সাদ আন্দালিব।

ব্র্যাকের জেন্ডার, জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি কর্মসূচির প্রধান হাবিবুর রহমান সমাপনী বক্তব্যে বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানে যেসব প্রশ্ন ও সুপারিশ উঠে এসেছে সেগুলোকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড ও বড় পরিসরে গবেষণাকর্ম পরিচালনা করার সময় আমরা অবশ্যই এসব বিবেচনায় নেব।’

(ঢাকাটাইমস/০৬মার্চ/জিএম/ডব্লিউবি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

নারীমেলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা