মঞ্চ নাটকে নিয়মিত থাকব

তানজিলা প্রিমা
 | প্রকাশিত : ০৬ মার্চ ২০১৮, ২১:৫৩

শাহীন খান―ছোটপর্দার একসময়ের জনপ্রিয় নায়ক। মঞ্চের দুর্দান্ত অভিনয়শিল্পী। এখন থিতু জেমকন গ্রুপে। জেমকন ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল প্রোডাক্টস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। নিত্যপণ্যের বিপণি মীনাবাজারের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা। তার সঙ্গে কথা বলেছে এই সময়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তানজিলা প্রিমা। ছবি তুলেছেন শেখ সাইফ

একটা সময় আপনি শিল্প-সংস্কৃতির জগতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ওখান থেকে সরে এসে এখন করপোরেট সেক্টরে এর কারণ কী?

ওখান থেকে সরে এসে, এই কথাটি ঠিক নয়। আমি যখন থিয়েটার করতাম বা টেলিভিশনে কাজ করতাম তখনকার সময় যেমন ছিল, এখন সেটা নেই। তখন যারা অভিনয় করতেন, তারা সবাই অভিনয়ের পাশাপাশি অন্য একটি পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অভিনয় তখন ছিল প্যাশন, পেশা নয়। টেলিভিশনের কলাকুশলী যারা ছিলেন তারা কখনোই অভিনয়কে পুরোপুরি পেশা হিসেবে নেননি। সে সময়টায় অভিনয়কে আসলে পেশা হিসেবে নেওয়ার মতো কোনো সুযোগও ছিল না। আমি দীর্ঘ একটা সময় দেশের বাইরে ছিলাম। ফিরে আসার পর দেখলাম অভিনয় ততদিনে জীবিকা নির্বাহের একটা পেশায় পরিণত হয়েছে। যারা অভিনয় জগতের সঙ্গে জড়িত তারা অভিনয়কে পুরোদস্তুর জীবিকা হিসেবেই নিয়েছেন। ইন্ডাস্ট্রিটা আমার চোখের আড়ালে তৈরি হয়ে গেছে ততদিনে। এখন আমি যে পেশায় আছি, এটা আমেরিকা থেকে আসার আগে নিশ্চিত করেই দেশে এসেছিলাম। যেহেতু আমাকে জীবন ধারণ করতে হয়, তাই শুধুমাত্র অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিয়ে সেটা সম্ভব ছিল না। যদি এমন হতো মাসে দুটো নাটকের কাজ করলেই আমার জীবনধারণ বেশ ভালোভাবে হয়ে যাবে, তাহলে সেটা অন্য ব্যাপার ছিল। কিন্তু পেশার কারণে যদি মাসের ৩০ দিনই দেখা শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়, সেটা আমার পক্ষে সম্ভব না।

তাহলে কি বলা যায়, আপনি ঠিক খাপ খাওয়াতে পারছিলেন না?

আসলে ঠিক তা নয়। আমি যখন দেশে ফিরে এসেছি, আর এসেই দেখলাম সবাই এখন অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত। কোনো দম ফেলার সময় নেই। এই বিষয়কে ঠিক গ্রহণ করতে পারছিলাম না। আগে থেকেই টেলিভিশন, থিয়েটার করেছি ভালো লাগা থেকে, ভালোবাসা থেকে। পেশা হিসেবে নিতে চাইনি। আর কিছু না করে শুধু অভিনয় করাটাকেই আমি ঠিক উপভোগও করতে পারতাম না আসলে।

এখন তো বিষয়গুলো অন্যরকম হয়ে গেছে এই পরিবর্তন কিভাবে দেখেন?

পরিবর্তন তো হয়েছেই। ইতিবাচক আর নেতিবাচক দুই ধরনেরই পরিবর্তন এসেছে। আমার সহকর্মী যারা অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিচ্ছেন, তারা এখান থেকে যা উপার্জন করছেন সেটা দিয়ে বাড়ি-গাড়ি মেইনটেইন করেও অত্যন্ত সচ্ছল থাকা যাচ্ছে এটা একটা ইতিবাচক ব্যাপার। এটা নব্বইর দশকে যখন টেলিভিশনে অভিনয় করতাম তখন চিন্তাও করতে পারতাম না। আমরা বাইরে চাকরি করতাম। সন্ধ্যার সময় টেলিভিশনে গিয়ে নাটকের রেকর্ডিং করতাম। সামান্য সম্মানী ছিল টেলিভিশনে। এটা যে কখনো কারো পেশা হতে পারে বা সচ্ছলভাবে থাকা যেতে পারে অভিনয় করে এই ব্যাপারটা হলো ইতিবাচক দিক। আর নেতিবাচক দিক আমি যেটা দেখতে পাই তা হলো, নাটকের জন্য অভিনেতার প্রস্তুতি নেওয়া হয় কম। এখন আর তেমনভাবে সেটি হয় বলে আমার মনে হয় না। একজন অভিনেতা আজ এই নাটকের শুটিং করছেন তো কাল ওই নাটকের। আমরা নাটকের শুটিংয়ের আগে মহড়া করতাম, চরিত্র বুঝতাম। একটা এক ঘণ্টার নাটকের জন্য আমরা ৬-৭ দিনও কাজ করেছি। আর এখন তো এক দিনেই নাটকের কাজ শেষ হয়। মাসের ২৫-২৬ দিনই একজন ব্যস্ত থাকছেন শুটিং নিয়ে। অবশ্য যারা অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিয়েছেন তাদের কোনো কিছু এখানে করারও নেই আসলে।

এখন কী ভালো নাটক হচ্ছে না?

নাটক যেমনটা ছিল আগে সেরকম ঠিক নেই আসলে। আমি বলব না আগে থেকে অনেক খারাপ হয়েছে। এখন অনেক ভালো নাটক হচ্ছে, ব্যতিক্রমধর্মী কিছু নাটকও হচ্ছে, নাটকের বিষয়ে বৈচিত্র্য এসেছে। আবার একই সঙ্গে খুব তাড়াহুড়ো করে অল্প বাজেটের নাটকও তৈরি হচ্ছে। তাড়াহুড়োয় চরিত্রটার ওপর সুবিচার করা যায় না, কাজটায় অনেক ছাড় দিতে হয়। অবশ্য এখানে নির্মাতাদের দোষ দিয়েও লাভ নেই। কারণ কাজের জন্য তাদেরকে যে টাকা দেওয়া হয় তা আসলে যথেষ্ট নয়। ওই টাকা থেকেই শিল্পীদের সম্মানী, কলা-কুশলীদের পারিশ্রমিক- এসব কিছুরই ব্যবস্থা করতে হয়। এতে করে যে ফলাফল আসে এটা আমার পছন্দ না। নাটকের মান তো এতে একটু হলেও কমছে। এখন মাঝেমধ্যেই আমরা ভালো নাটক দেখি। যদি ভালোভাবে ইনভেস্ট করা যেত তাহলে আমরা আরো অনেক ভালো নাটক পেতাম।

টিভি নাটক দেখা হয়? এই সময়ের কোনো নাটক ভালো লেগেছে?

নাটক আসলে ওইভাবে দেখা হয় না আমার। তবে যখন শুনি অমুক নাটকটা খুব ভালো হয়েছে তখন সেটা দেখি। যেমন একটা নাটক মনে খুব দাগ কেটেছে। ঈদের নাটক, বিকেল বেলার পাখি, ফজলুর রহমান বাবু অভিনয় করেছেন। নাটকটি খুবই ভালো লেগেছে আমার কাছে। আবার আরেকটি নাটক দেখলাম চিকন পিনের চার্জার। ব্যতিক্রম লেগেছে আমার কাছে। এই নাটকটিই যদি আরেকটু সময় নিয়ে করা যেত তো আরো ভালো হতো।

কাদের অভিনয় লাগে?

এখন আমাদের অনেক ভালো ভালো অভিনেতা আছেন, যারা অনেক ভালো কাজ করছেন। তবে একজনকেই যে সব সময় ভালো লাগে তা নয়। ব্যাপার হচ্ছে কোনো একটি নাটকে কোনো অভিনেতার অভিনয় ভালো লাগে। সেভাবে উল্লেখ করতে হলে মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, ফজলুর রহমান বাবুÑ এমন আরো অনেকেই আছেন। একজনকে উল্লেখ করে, যে তারই নাটক ভালো লাগে সেভাবে বলা যাবে না।

আপনার যখন নাটকে বিচরণ ছিল, সেই সময়ের কথা কী মনে পড়ে?

তা তো পড়েই। সময়টা খুবই মিস করি। আমরা যখন নাটক করতাম তখন আগে মহড়াই চলত ৭-৮ দিন। সকল কলাকুশলী মিলে একটা পরিবারের মতো ছিলাম। হাসি-ঠাট্টা-আড্ডা চলত। এখন আর সেটা দেখি না। হয়তো যারা সিরিজ নাটকে অভিনয় করেন তারা অনেকদিন একসঙ্গে কাজ করার পর একটা পরিবারের মতো হয়ে যায়। তবে এখন বেশিরভাগ কাজই তো হয় ভাগ করে করে। আমি একটা সিরিজ নাটকে কাজ করেছিলাম। পুরো শুটিংয়ে আমি কখনোই নাটকের অন্যান্য চরিত্রে কাজ করছেন যারা তাদের দেখিনি। আমি প্রায় ১০০ পর্বের মতো কাজ করেছি। নাটকে প্রায় ২৫ জনের মতো অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু আমি শুধু আমার সঙ্গে যে দু-তিন জনের কাজ ছিল তাদেরই দেখেছি। এই দুটো জিনিস তুলনা করলে ফেলে আসা সময়টার জন্য খারাপ তো লাগেই।

মঞ্চের যুবরাজ খালেদ খান সবার প্রিয় শক্তিমান একজন নাট্যব্যক্তিত্ব ছিলেন আপনার বড় ভাই সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আপনার বিচরণে তার প্রভাব কতটা ছিল? তাকে অনুসরণ করতেন?

আসলে উনি নিজে একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী ছিলেন। তারপরও তিনি আমাকে মানা করতেন মিডিয়ায় কাজ করতে। কিন্তু আমি বলব যে তাঁর একটা প্রভাব তো ছিলই আমার ওপর। তাঁকে দেখেই চিন্তা করতাম আমি নাটকে অভিনয় করব।

নাট্যাঙ্গন নিয়ে নতুন কোনো পরিকল্পনা আছে?

আমি আসলে বিদায়ই নেইনি কখনো। আবার টেলিভিশনে চাইলেই আমি এখন কাজ করতে পারব না। চাকরি করে নাটকের শুটিং করাটা খুবই কঠিন আমার জন্য। আমি কিছু নাটক করেছিও মাঝে। তবে সেগুলোর শুটিং করতে হয়েছে ছুটির দিনে। আফসানা মিমির একটি নাটকে কাজ করেছিলাম। আমার মনে আছে শুধু আমার জন্যই শুক্রবার শিডিউল রাখতে হয়েছিল, যেখানে শুক্রবার ওদের প্রোডাকশন হাউস বন্ধ থাকে। আমার জন্য অন্যদের অসুবিধা হোক এটা আমার কাছে অস্বস্তিকর একটি বিষয়। তবে মঞ্চে নিয়মিত হওয়ার ইচ্ছা আছে। যেহেতু মহড়া এবং প্রদর্শনী দুটোই হয় সন্ধ্যার পর তাই আমার জন্য সুবিধাজনক। আমি নতুন করে আমাদের নাগরিক নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। বেশ কিছু কাজ করেছি। সামনে মঞ্চ নাটকে নির্দেশনা দেওয়ারও ইচ্ছা আছে।

আপনাকে ধন্যবাদ

এই সময় পরিবারের সবাইকে শুভেচ্ছা।

(ঢাকাটাইমস/০৬মার্চ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে সরকারকে ভারসাম্যমূলক নীতি-উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে’: ড. আতিউর রহমান

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

বীমা খাতে আস্থা ফেরাতে কাজ করছি: আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :