রাজনীতির ইতিহাসে বিষ দিয়ে হত্যার যতো চেষ্টা
বিষ দিয়ে মারার সর্বশেষ প্রচেষ্টা ঘটেছে ব্রিটেনে। রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার কন্যা কোনো অজ্ঞাত বিষের ক্রিয়ায় এখন হাসপাতালে৷ কিন্তু রাজনীতির ইতিহাসে বহু ব্যক্তিকে বিষ দিয়ে মারার চেষ্টা বহুবার হয়েছে। এর মধ্যে কোনো ঘটনা কখনো সফল, কখনো অসফল৷ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হলো:
সের্গেই স্ক্রিপাল
৬৬ বছর বয়সি সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপালকে ব্রিটেনের স্যালসবেরি শহরের একটি শপিং মলের সামনে অজ্ঞান অবস্থায় একটি বেঞ্চের উপর পাওয়া যায়৷ তিনি কোনো অজ্ঞাত বিষের শিকার হয়েছেন বলে পুলিশের ধারণা৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কভ এই পরিস্থিতিকে ‘দুঃখজনক’ বললেও যোগ করেছেন যে, ‘(ঘটনার) কারণ কী হতে পারে অথবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কী করেছেন, সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’
কিম জং নাম
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বৈমাত্রেয় ভাই কিম জং নাম ২০১৭ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে প্রাণ হারান৷ দৃশ্যত দুই মহিলা তার মুখে ভিএক্স নামের একটি রাসায়নিক মাখিয়ে দিয়েছিলেন৷ গতমাসে মালয়েশিয়ার একটি আদালতে অভিযুক্তদের বিচার চলার সময় জানা যায় যে, আক্রান্ত হওয়ার সময় কিম জং নাম-এর পিঠের ব্যাগে ভিএক্স বিষের ডজন খানেক অ্যাম্পুল ছিল৷
আলেক্সান্ডার লিটভিনেঙ্কো
সাবেক রুশ গুপ্তচর লিটভিনেঙ্কো দেশ ছেড়ে ব্রিটেনে আশ্রয় নেবার পর সাংবাদিকতা শুরু করেন এবং রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস এফএসবি ও পুতিনের বিরুদ্ধে দু'টি বই লেখেন৷ ২০০৬ সালের ২৩শে নভেম্বর দু'জন সাবেক কেজিবি কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাতের পর লিটভিনেঙ্কো অসুস্থ হয়ে পড়েন ও পরে হাসপাতালে প্রাণত্যাগ করেন৷ সরকারি তদন্তে দেখা যায় যে, তেজস্ক্রিয় পলোনিয়াম-২১০ বিষের ক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে৷
ভিক্টর কালাশনিকভ
সোভিয়েত কেজিবি গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক কর্নেল ভিক্টর কালাশনিকভ তখন সাংবাদিক হিসেবে সস্ত্রীক বার্লিনে বসবাস করছিলেন৷ ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে কালাশনিকভ ও তার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়৷ সেখানে তাদের রক্তে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৭ ও ৫৬ মাইক্রোগ্রাম পারদ পাওয়া যায়৷ স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তে এক থেকে তিন মাইক্রোগ্রাম পারদ থাকা নিরাপদ৷পরে এক সাক্ষাৎকারে কালাশনিকভ বলেন, ‘মস্কো আমাদের বিষ দিয়েছে।’
খালেদ মেশাল
১৯৯৭ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর তারিখে ইসরায়েলের গুপ্তচর বিভাগ হামাস নেতা খালেদ মেশালকে হত্যা করার চেষ্টা করে৷ কথিত আছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্বয়ং নাকি হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ মেশাল জর্ডানের আম্মানে অবস্থিত হামাসের কার্যালয় থেকে বেরোনোর সময় দু'জন ইসরায়েলি গুপ্তচর তার কানে কোনো বিষাক্ত পদার্থ স্প্রে করে৷ মেশাল অক্ষতই থাকেন এবং পরে ঐ দুজন ইসরায়েলি গুপ্তচরকে ধরাও সম্ভব হয়৷
গেয়র্গি মার্কভ
১৯৭৮ সালে বুলগেরীয় সরকারবিরোধী মার্কভ বিবিসি-তে কাজ শেষ করে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন– হঠাৎ কিছু একটা তার থাই ফুঁড়ে দেয়৷ ওদিকে মার্কভ দেখেন, এক পথচারী তার ছাতা মাটি থেকে তুলছে৷ ছুঁচ ফোটার জায়গাটা ফুলে উঠে চারদিনের মধ্যে মার্কভ প্রাণ হারান৷ ময়না তদন্ত বলে, একটি শূন্য দশমিক দুই মিলিগ্রাম রিসিন বিষের পেলেট থেকে মার্কভের মৃত্যু ঘটেছে৷ পথচারীর ছাতা থেকেই পেলেটটা ছোঁড়া হয়েছিল, বলে অনেকের বিশ্বাস৷
গ্রেগরি রাসপুতিন
রুশ বিপ্লবের ঠিক আগে রাসপুতিন একজন আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন গুণীন হিসেবে পরিচিত ছিলেন৷ ১৯১৬ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গের ইয়ুসুপভ প্রাসাদে আসেন প্রিন্স ফেলিক্স ইয়ুসুপভের আমন্ত্রণে৷ প্রিন্স ইয়ুসুপভ তাকে পটাসিয়াম সায়ানাইড বিষ মাখানো কেক খেতে দেন ও সায়ানাইড মাখানো পাত্রে সুরা পরিবেশন করেন৷ সেই বিষাক্ত কেক ও সুরা থেকে রাসপুতিনের কিছুই হয় না৷ অতঃপর রাসপুতিনকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷
সূত্র: ডয়চে ভেলে
ঢাকাটাইমস/৮মার্চ/একে/ডিএম