২০ বছর কারাবাসের পর নারী দিবসে জামিন
এক শিশুকে অপহরণের অভিযোগের মামলায় ২০ বছর আগে কারাগারে যাওয়া এক নারীকে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম.ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই জামিন দেন।
একই সঙ্গে ওই নারী জামিনে বের হয়ে তার আত্মীয়-স্বজনকে না পেলে তাকে সামাজিকভাবে পুনর্বাসনের জন্য কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক এবং সমাজ সেবা অফিসারকে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
আদালতে আবেদনকারী আইনজীবী ছিলেন ফজলুর রহমান। আর আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. শফিউল্লাহ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের রামু উপজেলার পূর্ব ধেচুয়া এলাকার জনৈক ইসমাইলের স্ত্রী এবং কাদির হোসেনের মেয়ে মনোয়ারা বেগম ওরফে মোতাহেরা বেগম ওরফে খুরশীদা বেগম ১৯৯৮ সালের ১৩ জুন কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলাংজা এলাকায় যান। জনৈক মো. আবুল কালামের বাড়িতে গিয়ে মনোয়ারা বলেন, ‘আমি আত্মীয়ের বাড়ি খুঁজতে আসছি। কিন্তু পাইনি। যদি রাতে থাকতে দেন তাহলে ভালো হয়।’ এরপর তাকে কালামের বাড়িতে থাকতে দেওয়া হয়।
পরদিন সকালে কালামের মেয়ে কক্সবাজার প্রিপারেটরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী রাজিয়া (৮) স্কুলে যায়। এদিকে সকালে মনোয়ারাও বিদায় নিয়ে বের হন। কিন্তু দুপুরের পর রাজিয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে এক লোকের মাধ্যমে কালাম জানতে পারেন রাজিয়াকে পাচারের উদ্দেশ্যে মনোয়ারা অপহরণ করে নিয়ে যায়। ১৭ জুন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ব্রিজের গোড়ায় পুলিশের কাছে রাজিয়াসহ আটক হন মনোয়ারা। পরবর্তী সময়ে এ ঘটনায় করা মামলায় ২০০১ সালের ২৭ নভেম্বর কক্সবাজারের বিচারিক আদালত ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন অধ্যাদেশের ১২ ধারায় মনোয়ারাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
আজ আদালতে আইনজীবী শফিউল্লাহ বলেন, মনোয়ারা বেগম দরিদ্র, গরিব। তার উকিল নিয়োগের সামর্থ্য নেই।
আদালত বলেন, বয়স কত? জবাবে আইনজীবী বলেন, তখন ২৫ বছর ছিল। এখন ৪৫ হয়েছে। আদালত বলেন, বাবা-মা আত্মীয় স্বজন আছে? জামিন দিলে কই যাবে? সে কি বিবাহিত? আইনজীবী বলেন, ঘর বাড়ি আছে। গরিব ও দরিদ্র তো। তাই হয়তো যোগাযোগ নেই।
পরে আদালত বলেন, আজ তো নারী দিবস। কিন্তু তার দীর্ঘ কারাবাস বিবেচনায় তাকে জামিন দিলাম। আর জামিনে মুক্তির পর মনোয়ারা যদি মনে করে তার সামাজিক পুনর্বাসন দরকার তাহলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও সমাজ সেবা অফিসার তাকে পুনর্বাসন করবেন।
এ ছাড়া এ রকম যারা দীর্ঘ কারাবাসে আছে তাদের মুক্তির পর যদি সামাজিক পুনর্বাসন দরকার হয় তাহলে সরকার সেটা করবেন বলে পর্যবেক্ষণ দেয় আদালত।
(ঢাকাটাইমস/০৮মার্চ/এমএবি/জেবি)