কাফনের কাপড় জড়িয়ে অনশনে বেরোবির চার কর্মচারী
৫৮ মাস ধরে বকেয়া থাকা বেতন প্রদান ও চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে কাফনের কাপড় গায়ে জড়িয়ে অনশন শুরু করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) চার কর্মচারী। এছাড়াও ১০ দফা দাবিসংবলিত ব্যানার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ইউনিয়ন প্রশাসনিক ভবনে টানালে প্রশাসন তা খুলে ফেলেছে। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কর্মচারীরা।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার দপ্তরের সামনে অনশনে বসা এই চার কর্মচারী দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবে না বলেও শপথ নিয়েছেন।
বিভিন্ন দপ্তরে কাজ করেও ৫৮ মাস ধরে বেতন ভাতা না পাওয়া কর্মচারীরা হলেন- আছমা খাতুন, আমেনা খাতুন, মিজানুর রহমান ও মোশারফ হোসেন।
২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাত্র চার মাস পর্যন্ত বেতন পাওয়ার পর হঠাৎ বেতন ভাতা বন্ধ হয়ে যায় অনশনে থাকা চার কর্মচারীর। পরে ওই বছরের মে মাস থেকেই ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই নিয়োগ হওয়ায় বেতন বন্ধ হয়ে যায় পদের অতিরিক্ত ৩৩৩ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর। পর্যায়ক্রমে অতিরিক্ত জনবলের নিয়োগ স্থায়ী হলেও বাদ পড়েন অনশনে থাকা এই চার কর্মচারী। এরপর বিভিন্ন সময় এই দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে ঘোরাঘুরি করেও তাদের দাবির বিষয়ে প্রশাসন কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলেও জানান তারা।
অনশনে থাকা আছমা খাতুন বলেন, ‘নারীদের অধিকার আদায়ে যখন সরকার এগিয়ে এসেছে। সেই নারী দিবসেই কাফনের কাপড়ে আমরা। আমরা বিভিন্ন মহলে তদবির করেও কোন কাজ হচ্ছে না। আমাদের অধিকার কী আদায় হবে না?।
মিজানুর রহমান বলেন, কাজ করেও ৫৮ মাস ধরে বেতন পাই না। এখন পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমাদের পীঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অনশন চলবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইব্রাহীম কবীর বলেন, অনশনে থাকা কর্মচারীদের প্রতি প্রশাসন পজিটিভ। কিন্তু তাদের নতুন বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ পেতে হবে।
এদিকে একইদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা ১০ দফা দাবি সম্বলিত ব্যানার প্রশাসনিক ভবনে টানালে তা খুলে ফেলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে কর্মচারীদের মধ্যে।
জানা যায়, ৫৪ জন কর্মচারীর চাকরি স্থায়ী হলেও ৪৪ মাসের বকেয়া বেতন, আপগ্রেডেশন-প্রমোশন নীতিমালা বাস্তবায়ন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ফাইল আটকে রাখার অভিযোগে উপাচার্যের একান্ত সচিব আমিনুর রহমানের অপসারণসহ বিভিন্ন দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে ব্যানার লাগায় কর্মচারীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আতিউর রহমান পুলিশের সহায়তায় কর্মচারীদের দাবি সম্বলিত এ ব্যানার খুলে নেন।
ব্যানার খুলে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী প্রক্টর আতিউর রহমান বলেন, দাবি যৌক্তিক বা অযৌক্তিক সে প্রশ্ন নয়। ব্যানারটিতে কোন পক্ষের নাম না থাকায় খুলে নেয়া হয়েছে।
বেরোবি কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শাহিন বেগ বলেন, ব্যানারে নাম ছিল না এটা ঠিক। তবে যৌক্তিক দাবি জেনেও প্রশাসনের এমন আচারণ শোভনীয় নয়। তারা দাবি আদায়ে কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
সামগ্রিক বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
(ঢাকাটাইমস/৮মার্চ/প্রতিনিধি/এলএ)