রাজশাহী সীমান্তে বাড়ছে অস্ত্র চোরাচালান

রিমন রহমান, রাজশাহী ব্যুরো প্রধান
 | প্রকাশিত : ১০ মার্চ ২০১৮, ১৪:৩২

রাজশাহী অঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে অস্ত্রের চোরাচালান বাড়ছেই। প্রায়ই রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত এলাকায় অস্ত্রের চালান আটক করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে করছে, নাশকতা, জঙ্গি কার্যক্রম ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে ভারত থেকে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র আমদানি বেড়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভারত থেকে বেশিরভাগ অস্ত্র আসছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে। এরপর তা দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। চালানের পথে কিছু কিছু অস্ত্রের চালান ধরা পড়ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এছাড়া নাশকতার পরিকল্পনার জন্য অস্ত্র নিয়ে গোপন বৈঠকের সময় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এদের মধ্যে জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্যরাও রয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, ধরা পড়া অস্ত্রের বাইরে কী পরিমাণ অস্ত্র বাংলাদেশে ঢুকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছেছে তার হিসাব কারো কাছেই নেই। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ধরা পড়ছে যা তার চেয়ে অনেক বেশি অস্ত্র সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের হাতে পৌঁছে গেছে। এ বছর জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অস্ত্রের চাহিদা বেড়ে গেছে বলে মানে করছেন তারা।

সীমান্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, সীমান্ত এলাকায় আগে একসঙ্গে দুটি থেকে তিনটি অস্ত্র ধরা পড়তো। গত কয়েক মাস ধরে অস্ত্রের তুলনামূলক বড় চালান ধরা পড়ছে। বড় চালানগুলোর বেশিরভাগই এসেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে। আগামী নির্বাচনে এসব অস্ত্র ব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই এখন থেকেই এসব অস্ত্র উদ্ধারের পরিকল্পনা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সীমান্তে কাজ করছেন সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দারাও আরও তৎপর হয়েছেন।

গত এক মাসে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলায় বিপুল অস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এর মধ্যে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর পুঠিয়ায় অস্ত্র ও গান পাউডারসহ তিন জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তাদের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, আট রাউন্ড গুলি, চারটি হাতবোমা, ৫০০ গ্রাম গানপাউডার ও বোমা তৈরির নানা সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। একই দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ছয় রাউন্ড গুলি ও দুটি ম্যাগজিনসহ এক অস্ত্র চোরাকারবারীকে গ্রেপ্তার করে বিজিবি। এর আগের দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গান পাউডারসহ এক জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২০ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট থেকে চারটি পিস্তল, ২০ রাউন্ড গুলি ও আটটি ম্যাগাজিনসহ এক অস্ত্র চোরাকারবারিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর তানোর থেকে গানপাউডার ও বোমা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ তিন জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ১৫ ফেব্রুয়ারি শিবগঞ্জ থেকে পাঁচ শুটারগানসহ এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মাসের প্রথম দিন এক ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর কাশিয়াডাঙ্গা থেকে গানপাউডার ও বোমা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ দুই জেএমবির সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিবগঞ্জ উপজেলা থেকে চারটি শুটার গানসহ একজনকে গ্রেপ্তার করে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ। এর আগে গত বছরের ১২ নভেম্বর শিবগঞ্জ উপজেলার চাকপাড়া সীমান্তে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল, চারটি রিভলবার, চারটি ম্যাগাজিন, ১৮ রাউন্ড গুলি ও একটি রামদাসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে বিজিবি। এর দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ২৮ নভেম্বর নামো-চাকপাড়া সীমান্ত থেকে আরো নয়টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে বিজিবি।

এছাড়া শুধু রাজশাহীতে গত এক বছরে র‌্যাব ও পুলিশ ৮৪টি ভারতীয় পিস্তল, দেশি পিস্তল ১৫টি, বিদেশি রিভলবার নয়টি, শুটার গান ১২টি, পাইপগান দুটি, ৪২৭ রাউন্ড গুলি, ১৫২টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করেছে। এছাড়া গত এক বছরে রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে অভিযান চালিয়ে শুধু র‌্যাব ৮২টি পিস্তল, বিদেশি রিভলবার সাতটি, দেশি পিস্তল একটি, শুটার গান ১১টি, পাইপ গান দুটি, গুলি ৩৬৬ রাউন্ড ও ১৩৮টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করেছে।

এদিকে রাজশাহী জেলা পুলিশ ১১টি পিস্তল, দুটি রিভলবার, ৪৪ রাউন্ড গুলি ও ৯টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করেছে। রাজশাহী মহানগর নগর পুলিশ উদ্ধার করেছে দুটি বিদেশি পিস্তল, দেশি পিস্তল তিনটি, শুটার গান একটি, ম্যাগাজিন পাঁচটি ও ১৮ রাউন্ড গুলি। এর মধ্যে গত বছর শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আসা ১১০টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি। চলতি বছরের এ পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে আরও ৩০টি আগ্নেয়াস্ত্র।

র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুবুল আলম বলেন, র‌্যাবের অভিযানে গত একবছরে বিপুল পরিমাণ ছোট আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এসব অস্ত্রের বেশিরভাগই নাশকতার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছিলো জঙ্গিরা। র‌্যাব তাদের সেই পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়েছে। জঙ্গিদের ধরতে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

জানতে চাইলে রাজশাহী জেলার পুলিশ সুপার মো. শহীদল্লাহ জানান, তিনি রাজশাহীতে নতুন যোগ দিয়েছেন। তবে এ অঞ্চলে জঙ্গি কার্যক্রমকে ঘিরে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে তিনি জানেন। তাই এ ব্যাপারে তিনি সজাগ রয়েছেন। অস্ত্র উদ্ধারে রাজশাহীতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অভিযানগুলোকে আরো সুসংহত করে পরিচালনা করা হবে।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫৯ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল রাশেদ আলী বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বকচর, শিবগঞ্জের চাকপাড়া, কিরণগঞ্জ, পিরোজপুর, তেলকুপি, আজমতপুর ও চাকপাড়া সীমান্ত দিয়ে বেশি অস্ত্র আসছে। তাই এসব সীমান্তে বিজিবির নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। বেশ কিছু বড় বড় অস্ত্রের চালান ধরাও পড়েছে। ইতোমধ্যে সীমান্তবর্তী এলাকায় তৎপরতা আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে, যাতে চোরাচালানকারী আর অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করতে না পারে।

র‌্যাব-৫ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ সাঈদ আব্দুল্লাহ আল-মুরাদ জানান, আগের চেয়ে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে, যারা ধরা পড়েছে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চোরাচালানের মূল হোতাদের ধরার চেষ্টা অব্যাহত আছে।

শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী বেশ কিছু পয়েন্টে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, অস্ত্রের চোরাচালানরোধে পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিনিয়তই আমরা অস্ত্রের চালানগুলো ধরতে পারছি। এই তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।

(ঢাকাটাইমস/১০ মার্চ/আরআর/ওআর/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :