ফতুল্লায় নৈশপ্রহরী খুনের ঘটনায় অবরোধ, অভিযুক্ত আটক
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একজন নৈশপ্রহরীকে খুনের ঘটনায় এলাকাবাসীর সড়ক অবরোধ করলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগে খুনের অভিযুক্ত সেলিম মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ।
এর আগে এলাকায় তাণ্ডব চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে হত্যায় অভিযুক্ত সেলিম মিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে ফতুল্লার দেলপাড়া এলাকায় একটি প্যাকেজিং কারখানার সামনে এসব ঘটনা ঘটে।
এর আগে সেলিম মিয়ার মালিকাধীন ওই কারখানা থেকে নৈশপ্রহরী বৃদ্ধ আবুল কাশেম চৌধুরীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আবুল কাশেম চৌধুরী ফতুল্লা দেলপাড়া এলাকার মৃত ইলমত চৌধুরীর ছেলে। তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
সেলিম মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নিহতের পরিবার জানায়, দেলপাড়া টেম্পুস্টান্ট এলাকায় সেলিম মিয়ার মালিকানাধীন একটি নামবিহীন প্যাকেজিং কারখানা রয়েছে। কারখানায় দীর্ঘদিন নৈশপ্রহরী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন আবুল কাশেম। কারখানার মালিক সেলিম মিয়া আবুল কাশেমের কাছ থেকে প্রায় ৫/৬ লাখ টাকা ঋণ নেন। মূলত বিভিন্ন ঋণদাতাদের কাছ থেকে ওই ঋণের টাকা সেলিম মিয়াকে দেন আবুল কাশেম। সেই টাকা দিয়ে কিছুদিন কারখানা চালান সেলিম মিয়া। পরে টাকার অভাবে ফের কারখানা বন্ধ করে দেন সেলিম।
তবে আবুল কাশেমের পাওনা টাকা দেয়নি সেলিম মিয়া। সেই টাকার জন্য পাওনাদাররা আবুল কাশেমকে চাপ দিতে থাকলে আবুল কাশেমও সেলিম মিয়াকে টাকা পরিশোধ করতে তাগিদ দেন। এর জেরে দীর্ঘদিন ধরে সেলিম মিয়ার সঙ্গে আবুল কাশেমের বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে কারখানায় আবুল কাশেম নৈশপ্রহরীর কাজ ছেড়ে দেয়।
গত ৮ মার্চ সেলিম মিয়া বাড়ি থেকে আবুল কাশেমকে ডেকে নিয়ে ফের কারখানায় কাজ দেন এবং দ্রুত কারখানা চালু করে তার পাওনা পরিশোধ করবেন বলে আশ্বাস দেন সেলিম মিয়া।
নিহতের ছেলে আবু চৌধুরী বলেন, শনিবার সকাল ৮টায় কারখানার তালা খুলে দেয়ার কথা বলে সেলিম মিয়া আমার বাবাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যান। পরে সকাল ১০টার দিকে সেলিম মিয়ার এক লোক এসে বাসায় খবর দেয় আমার বাবাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এসময় ওই কারখানায় গিয়ে দেখি আমার বাবার রক্তাক্ত নিথর দেহ মাটিতে পড়ে আছে।
এলাকাবাসী জানায়, সকাল ১০টার দিকে নিহতের আত্মীয়-স্বজনরা কারখানায় এসে লাশ দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠে। এ সময় কারখানার মালিক সেলিম মিয়াকে মারধর করে এবং সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। তখন পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলে এলাকাবাসী পুলিশের ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে নিহতের লাশ ও আটক সেলিম মিয়াকে নিয়ে যাওয়ার সময় উত্তেজিতরা ফের পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করে। এসময় পুলিশের ধাওয়ায় এলাকাবাসীর পাঁচ থেকে সাতজন আহত হয়েছেন।
কামাল উদ্দিন জানান, পুলিশের গাড়ি টানাহেচড়া করেছে, তবে ভাঙচুর করেনি। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সেলিম মিয়াকে আটক করে নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/১০মার্চ/প্রতিনিধি/জেবি)