জাপানে শিশু শিক্ষার্থীদের দিনকাল

হাসিনা বেগম রেখা, জাপান
 | প্রকাশিত : ১০ মার্চ ২০১৮, ২১:৪৭

শিশুবান্ধব দেশ হিসেবে জাপান বিশ্বে স্থান করে নিয়েছে। এখানে শিশুদের জন্য সুযোগ-সুবিধা তাদের সুস্থ মস্তিস্ক বিকাশের উপযোগী হিসেবেই গণ্য। সব কিছুতেই শিশুদের প্রাধান্য সব চেয়ে আগে। শিশুদের খেলাধুলার জন্য যেমন উন্মুক্ত মাঠ রয়েছে, তেমনি প্রতিটি শপিংমল, হল- এমনকি রেস্তোরাঁগুলোতেও শিশুদের জন্য ভিন্ন কর্নার রয়েছে। আর সরকারিভাবে তো খেলাধুলার জন্য জিমনেশিয়াম, আর্ট সেন্টারসহ অন্যান্য সকল কিছুই রয়েছেই।

আজ আমি জাপানে শিশুদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার পদ্ধতি নিয়ে জানাতে চাই।

জাপানে সরকারিভাবে বর্ষ শুরু হয় এপ্রিল থেকে, শেষ হয় মার্চ মাসে। সে শিক্ষাবর্ষ, অর্থবর্ষ কিংবা কর্মবর্ষ যা-ই হউকনা কেন।

জাপানে ছয় বছরের জন্য প্রাথমিক এবং তিন বছরের জন্য নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা বাধ্যতামূলক। সব শিশুর বেলায় তা প্রযোজ্য। যতো দুর্গম এলাকা বা কঠিন পরিস্থিতি হউক না কেন- সরকারই তার ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।

জাপানে কোন শিক্ষা বোর্ড নেই। এখানে বাধ্যতামূলক শিক্ষাস্তরে কোন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয় না কোন শিক্ষার্থীকে। শিক্ষার কাঠামোগত স্তর বিন্যাসগুলো অত্যন্ত যুগোপযুগী এবং বাস্তবসম্মত। সরকারি কিংবা বেসরকারি উভয় পর্যায়ে শিক্ষাব্যবস্থা এক ও অভিন্ন। এমন কি রাজ পরিবারে জন্ম নেয়া সদস্যদের জন্যও বাধ্যতামূলক শিক্ষাগ্রহণ অপরিহার্য। বিশেষায়িত বিদ্যালয় রয়েছে বিশেষ কারণে। তারপরও কোন শিক্ষার্থীকে ঝরে পড়তে দেয়া যাবে না- এইটাই জাপানের বাধ্যতামূলক শিক্ষা পদ্ধতির নিয়ম।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গাইডলাইন অনুসারে স্কুল এডুকেশন ল’১৯৪৭ এর ভিত্তিতে পরিচালিত হয় সরকারি ও বেসরকারি উভয় শিক্ষাব্যবস্থা। তা শুরু হয় ১ এপ্রিল থেকে।

ছয় বছর পূর্ণ হলে একটি শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযুক্ত হয়। সরকারই চিঠির মাধ্যমে পূর্বে তা জানান দিয়ে থাকে। এপ্রিল মাসের দুই তারিখ থেকে পরবর্তী এপ্রিল মাসের এক তারিখে জন্ম নেয়া প্রতিটি শিশুই একই শিক্ষাবর্ষের হিসেবে পরিগণিত।

স্থানীয় প্রশাসন চিঠির মাধ্যমে এলাকার কয়েকটি বিদ্যালয়ের বিস্তারিত জানিয়ে অভিভাবকদের জানান দিয়ে থাকে। অভিভাবকরা নিজেদের পছন্দের বিদ্যালয়ে শিশুটিকে নিয়ে যান শিক্ষক এবং বিদ্যালয়ের সাথে পরিচিতি করানোর জন্য। যদিও সব শিশুই আগে থেকেই জেনে থাকে সে কোন বিদ্যালয়ে পড়তে যাচ্ছে। সরকার নির্ধারিত বিদ্যালয়ের বাইরে পড়াতে ইচ্ছুকদের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য।

এখানে একটি শিশু শিক্ষাজীবন শুরু করা মানে উৎসবমুখর পরিবেশ। উৎসবমুখর পরিবেশেই তারা শিক্ষাজীবন শুরু করে থাকে। নিজ পরিবার, এলাকার বিভিন্ন সংগঠন, জনপ্রতিনিধি সর্বক্ষেত্র থেকেই তাদের অভিনন্দন জানানো হয়ে থাকে। দেয়া হয় বিভিন্ন উপহারসামগ্রী।

আমি যেই এলাকাটিতে থাকি, তার নাম হচ্ছে কিতা সিটি। টোকিওর সর্ব উত্তরে এর অবস্থান। এইটি একটি স্থানীয় সরকারি বাসা। বিল্ডিংটিতে মোট ৩৮০টি পরিবারের বসবাস।

প্রতিদিন নিয়ম করে সকাল ৮টায় বিভিন্ন বয়সের ৯জন শিক্ষার্থী বাসার নিচে জড়ো হয়ে ৮টা ১০মিনিটে লাইন ধরে একটি নির্ধারিত পথ ধরে বিদ্যালয়ে যায়।

আমি নতুন এসেছি। তাই কৌতুহলবশত খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম- এটাই নাকি এখানকার নিয়ম। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এলাকা অনুযায়ী একই স্থানে জড়ো হয়ে দলবেঁধে লাইনধরে বিদ্যালয়ে যায়। দলনেতা নির্ধারিত হয় সিনিয়রিটির উপর। প্রতিবছর ক্লাস শুরুর আগেই সবকিছু নির্ধারণ করে দেন অভিভাবক-শিক্ষক সংগঠন বৈঠক করে। সবাইকে হেঁটেই যেতে হয়। ধনি-গরিবের কোন ভেদাভেদ নেই।

সবার পেছনে থাকে একটি ব্যাগ। যেটার ভেতর তাদের প্রয়োজনীয় পাঠ্যপুস্তকগুলো থাকে। তাকে জাপানিজ ভাষায় রানদো সেরু বলা হয়ে থাকে। সবারটা একই। তবে, রঙ ভিন্ন ভিন্ন। শিশুদের পছন্দ মতো। সাধারণত নানা-নানি, দাদা-দাদি কিনে দিয়ে থাকেন এ ব্যাগ।

প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীর পেছনের ব্যাগে আবার একটি হলুদ ব্যাজ লাগানো থাকে, যাতে করে সবাই তাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে থাকে। তার পাওয়ার খুব বেশি। এমনকি সে যদি সিগন্যাল না মেনে রাস্তা পার হতে থাকে, চালক গাড়ি থামাতে বাধ্য। যদিও কোন শিশুই তা করে না। কারণ, প্রাথমিক শিক্ষার পূর্বে শিশুদের কিন্ডারগার্টেন অথবা ডে কেয়ার সেন্টারে ভর্তি করানো হয়। পাবলিক এবং ডে-কেয়ার সেন্টার এক থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের গ্রহণ করে। কিন্ডারগার্টেনে খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষা দেয় এবং উচ্চারণের শিক্ষা দেয়। আর তারা এমন শিক্ষা দান করে, যাতে একটি শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির পর মানিয়ে নিতে পারে।

বিদ্যালয়েই প্রধান শিক্ষক স্কুলের প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে অভিবাদনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের গ্রহণ করে থাকেন। শিক্ষার্থীরাও অভিবাদনের জবাব দিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে হয়।

জাপানে শিক্ষাব্যাবস্থায় শারীরক, মানষিক ভয়ভীতি দেখানোর কোন সুযোগ নেই। খেলাধুলার মাধ্যমে বাস্তবিক এবং মানবিক শিক্ষায় শিক্ষিত করাই মূল উদ্দেশ্য থাকে।

জাপানিজ শিক্ষাব্যবস্থা হচ্ছে, ছয় বছরের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিন বছরের জন্য নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তিন বছরের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুই অথবা চার বছরের বিশ্ববিদ্যালয়।

(ঢাকাটাইমস/১০মার্চ/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

প্রবাসের খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :