বিমান বিধ্বস্তে ‘নাই’ হয়ে গেল ‘জনদরদী’ একটি পরিবার

নজরুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৩ মার্চ ২০১৮, ০০:২০ | প্রকাশিত : ১২ মার্চ ২০১৮, ২৩:৪৭
রফিক জামান, সানজিদা হক ও তাদের একমাত্র সন্তান অনিরুদ্ধ

কাঠমান্ডুতে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের বিমানটি বিধ্বস্তের ঘটনায় যেসব বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন, তার মধ্যে আছে ঢাকার এক দম্পতি এবং তাদের একমাত্র সন্তান। এরা হলেন রফিক জামান (রিমু), তার স্ত্রী সানজিদা হক (বিপাশা) এবং এক মাত্র ছেলে অনিরুদ্ধ।

রাজধানীর শুক্রাবাদে একটি বাসায় থাকতেন এই দম্পতি। এই দুর্ঘটনার খবরে সে বাসায় গিয়ে শোকাতুর পরিবেশের কারণে কারও সঙ্গে কথার বলার মতো অবস্থা ছিল না।

তবে পরে বন্ধুদের ভাষ্যমতে তিন জনের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেছেন নিহত রফিক জামানের দুলাভাই অর্ক। তারা নেপালে খোঁজ নিয়ে এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন।

পরে রিমু ও বিপাশার দুই জন বন্ধুর সঙ্গে কথা হয় ঢাকাটাইমস। তারাই প্রকাশ করেন এই দুই জনের জনদরদী মনোভাবের।

রিমুর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন মন জাহিদ। বন্ধুর কথা বলতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।

জাহিদ বলেন, ‘সব শেষ হয়ে গেছে! একটা পরিবার এভাবে চলে যাবে এটা কখনও ভাবতেও পারিনি। আমাদের আড্ডার মধ্যমণি আর আমাদের মাঝে নেই, শুধু রয়ে গেছে সেই বাড়িটি। যেখানে রিমুর সঙ্গে, বিপাশার সঙ্গে কাটানো সময় এখন স্মৃতি। রিমু সারাজীবন ব্যয় করেছে মানব সেবায়।’

সুমনের সঙ্গে রিমুর বন্ধুত্ব কলেজজীবন থেকে। সেই যে নব্বইয়ের দশকে শুরু এখনও সবুজ। ২৯ বছরের বন্ধুত্বের ইতি এভাবেই টানবেন রিমু সেটা মেনে নিতে পারছেন না সুমন। পারার কথাও নয়, কিন্তু সুমনদের যে এটাই মেনে নিতে হয়।

প্রিয় বন্ধুর সম্পর্কে বা তার সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো নিয়ে কথা বলবেন সুমন, সেটা এই মুহূর্তে সত্যি অনেক কঠিন। তারপরও অনেক চেষ্টা করে ভেজা কন্ঠে সুমন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কলেজ জীবন থেকেই সুমনের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব। তখন থেকেই পরিবারটার সঙ্গে মিশে একাকার হওয়া। আমাদের সব বন্ধুদের আড্ডার কেন্দ্রস্থলই ছিল রিমুর বাসা। রিমু খুবই বন্ধুসুলভ ছিল। ও সব সময় মানুষের কল্যাণের কথা ভাবত। সেই মানুষটা এত দ্রুত চলে যাবে আমরা বন্ধুরা এটাই মেনে নিতে পারছি না।’

রফিক জামানের পরোপকারি মনোভাব আর সৃজণশীলতার জন্য ‘রিমু বস’ নামেও পরিচিতজনরা তাকে ডাকতেন। পরিবারের চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করা রিমু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেই রাজধানীর আদাবরে ‘প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠন পরিষদ’ (পিএনএসপি) নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। সেটাই ছিল তার অফিস। প্রতিবন্ধীদের সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতেই করেছিলেন প্রষ্ঠিানটি।

রিমু ৮৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেন। ঢাকা কলেজে পড়ার সময়ে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ঢাকা কলেজে পড়ার সময় ছাত্রলীগের নাট্য সম্পাদক ছিলেন তিনি। ৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষেই জিয়া হলের সেক্রেটারি পদ পেয়ে যান।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার শেষ মুহূর্তে প্রেম হয় সানজিদা হক (বিপাশা) সঙ্গে। পরে বিয়ে। বিপাশা লোক প্রশাসনের শিক্ষার্থী ছিলেন।

বিপাশা সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনে কাজ করতেন। তার বন্ধু জামান বলেন, ‘ও এত চমৎকার একটা মানুষ ছিল যেটা বলে বোঝাতে পারব না। আমরা একটা বন্ধু না, একটা পরিবার হারিয়েছি। একজনও বেঁচে নেই, এটা মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।’

‘এই বাসায় আমাদের অনেক সুখ দুখের স্বাক্ষী। বাসা রয়ে গেছে, কিন্তু মাঝখান থেকে চলে গেলেন রিমু। বিপাশাও কখনও ঝামেলা করত না।’

ঢাকাটাইমস/১২মার্চ/এনআই/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :