খালেদাকে সমঝোতা প্রস্তাবের খবর হাস্যকর: ফখরুল

প্রকাশ | ১৩ মার্চ ২০১৮, ১৪:৩২ | আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৮, ১৬:৫৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

কারাগারে বন্দী বেগম খালেদা জিয়াকে সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা সমঝোতা প্রস্তাব দেয়ার খবরকে হাস্যকর বলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসব খবর সাংবাদিকরা কোথায় পান, সেটাও জানতে চেয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের এক আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন মির্জা ফখরুল। খালেদা জিয়া ও স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মুক্তির দাবিতে এই সভার আয়োজন করে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট।

এ সময় বিএনপি মহাসচিব সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে বিএনপিকে নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন নিয়ে কথা বলেন। ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, গত ৭ মার্চ কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান মির্জা ফখরুলসহ দলের সাত নেতা। এ সময় খালেদা জিয়াকে বাইরে চলে যাওয়া, তার পরিবারের কারও নির্বাচনে অংশ না নেয়া, বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপির ভোটে যাওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব দেন ফখরুল।

ওই পত্রিকার ভাষ্যমতে, এ বিষয়ে নিশ্চয়তা পাওয়া গেলে খালেদা জিয়ার জামিনে সরকার বাধা দেবে না, বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা স্থগিত থাকা, খালেদা জিয়ার সব মামলায় সরকার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে বলেও মির্জা ফখরুল বলেন।

এই খবরটিকে হাস্যকর বলেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, ‘পত্র পত্রিকাতে খবর দেখি আমরা নাকি কারাগারে সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা প্রস্তাব নিয়ে গেছি। হাসি পায়। আপনারা কোথায় পান এমন তথ্য?’

‘আবার ফেসবুকে দেখি অনেক লেখালেখি হয় দলের ভাঙন নিয়ে। আমরা বলতে নেত্রী কারাগারে যাওয়ার পর দল আগের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই।’

‘ছলচাতুরি করে আটকে রাখা হচ্ছে খালেদা জিয়াকে

বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রাখতে সরকার ছল চাতুরি করছে বলে অভিযোগ করছেন বিএনপি মহাসচিব।

 

ফখরুল বলেন, ‘সরকার ছলছাতুরি করে বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রাখতে চায়। কিসের ভয়? জনগণকে এত ভয় পান আপনারা (সরকার)! তিনি যদি মুক্তি পান তাহলে জনগণের স্রোতে আপনাদের ক্ষমতার মসনদ ভেসে যাবে।’

সোমবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্ট বিএনপি চেয়ারপারসনকে চার মাসে জন্য জামিন দেয়ার দিনই কুমিল্লার একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ এসেছে। পাশাপাশি মঙ্গলবার হাইকোর্টের জামিনের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ এবং দুদক।

তবে খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা যাবে না মন্তব্য করে বিএনপি বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়া এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাকে (খালেদা জিয়া) মুক্ত করা হবে।’

বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে যাবে জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘এটাই একমাত্র পথ। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনগণের কাছে আমাদের যেতে হবে। এভাবেই জনগণের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে হবে।’

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘দেশে আইন নাই, আদালত নাই, বিচার বিভাগ নাই কোথায় যাবেন আপনারা। আমাদের পথ একটাই—তা হলো রাজপথ। সেই রাজপথের মধ্যে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সব সমস্যার সমাধান করব বলে আমি বিশ্বাস করি। এটা আলোচনা সভা না হয়ে প্রতিবাদ সভা হলে খুশি হতাম। এখন প্রতিবাদ করারই সময়। আলোচনা করার সময় বোধ হয় শেষ হয়ে গেছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে যে মামলায় নিম্ন আদালত সাজা দিয়েছে, মামলাটা দিয়েছিল ১ / ১১ অবৈধ সরকার। বাংলাদেশ থেকে রাজনীতি দূর করে দেওয়ার জন্য বিরাজনীতি করার জন্য সকল রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধেই মামলা দিয়েছিল। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চারটি মামলা ও আজকের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা দিয়েছিল। যারা গণতন্ত্রকে তার নিয়মমতো চলতে দিতে চায় না, তারা এই কাজগুলো করে। বাংলাদেশে পাকিস্তান আমল থেকে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে অনেকবার। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন—এমন ব্যক্তিরা এসে ক্ষমতা দখল করেছেন এবং রাজনীতিকে নির্বাসিত করার চেষ্টা করেছেন।

ফখরুল বলেন, ‘দুঃখ হচ্ছে এটা যখন কোনো সামরিক জান্তা করে, ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীনের মতো সেনা সমর্থিত কোনো অবৈধ সরকার করে। সেটা একটা কথা। কিন্তু যখন একটা রাজনৈতিক দল যাদের দীর্ঘ অতীত রয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। তারা যখন এই কাজ করেন, তখন যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, তাদের পক্ষে এটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন হয়ে যায়।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কেউ সরতে চায় না। ক্ষমতা দখল করে রাখে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ বারবার এই সমস্ত শক্তিকে এই সমস্ত ব্যক্তিদের যারা জোর করে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় তাদের টেনে হিচড়েই নামিয়ে ফেলেছে।’

ছাত্রদল নেতাকে হত্যা করা হয়েছে

নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেন মিলনের মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয় বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল।

ঢাকা উত্তর মহানগর ছাত্রদলের সহসভাপতি জাকিরকে গত ৬ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সোমবার সকালে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই মারা যান তিনি।

এই ছাত্রদল নেতাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘এমন অনেক জাকিরকে আমরা হারিয়েছি। তাদের অপরাধ গণতান্ত্রিক আন্দোলন করা।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন নিপীড়ন করে ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেন মিলনকে হত্যা করে জেলে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে তারা কী করল যে জাকির লাশ হয়ে ফিরল।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এদের দয়া নেই, মায়া নেই। এরা নৃশংসতম বর্বরতম শাসকগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। এদের কাছে মনুষ্যত্ব জীবন প্রাণের কোনো মূল্য নেই। আপনারা দেখেছেন, সেদিন ছাত্রনেতা রাজ বাঁচার জন্য আমাকে আঁকড়ে ধরেছিল। আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। আমি ছেলেটাকে রক্ষা করতে পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা। আজকে এই ক্ষোভ-ব্যথা-যন্ত্রণাকে শক্তিতে পরিণত করুন।’

তিনি বলেন, ‘এই যে কথায় কথায় আমাদের ভাইদের হত্যা করছে, ছেলেদেরকে হত্যা করছে, এদের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়ান। জনগণকে বলেন উঠে দাঁড়াতে। রাজপথে নামতে। এটাই একমাত্র পথ। বিকল্প কোনো পথ নেই।’

জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমিরকে গ্রেপ্তারেরও নিন্দা জানান ফখরুল। তিনি বলেন, ‘পত্রিকাতে দেখলাম রাজশাহীতে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমানসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমি এর নিন্দা জানাচ্ছি এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দাবি করছি।’

নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করেন বিএনপি মহাসচিব। সেই সঙ্গে তিনি আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।

বিএনপি নেতা গৌতম চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, অধ্যাপক সুকুমল বড়ুয়া, নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুন রায় প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/১৩মার্চ/বিইউ/ডব্লিউবি)