বিমান বিধ্বস্তে নিহত শিশু প্রিয়ংময়ীর জন্য ভালবাসা
গাজীপুরের শ্রীপুরের নগরহাওলা গ্রামের শরাফত-ফিরুজা দম্পতির একমাত্র সন্তান ফারুক হোসেন প্রিয়ক। সংসারে অভাব কি জিনিস তা ফারুককে বুঝতে দেননি বাবা ও মা। সবেমাত্র বিয়ে করেছেন এরই এক বছরের মাথায় ২০১৩ সালে বাবা শরাফত আলী মারা যান। সংসারের ভার এসে পরে ছেলে প্রিয়কের উপর।
বাবার মৃত্যুশোক কাটতে না কাটতেই ২০১৫ সালে ঘর আলো করে পরিবারের আরেক সদস্য প্রিয়ংময়ীর আগমন। নাতনির দিকে তাকিয়ে স্বামী হারানো ফিরোজার চোখে মুখে ছিল আলোকের আভা। এই পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের এই সদস্য প্রিয়ংময়ীকে ঘিরেই চলত সুখের আবহ।
মঙ্গলবার দুপুরে নিখোঁজ বাবা ও মেয়ের মৃত্যুর নিশ্চিত হওয়ার মধ্যদিয়ে পরিবারটির পরবর্তী প্রজন্মের পরিসমাপ্তি ঘটল।
বাবার ডাক নাম ছিল প্রিয়ক, নিজের নামে সাথে কন্যার নাম মিলিয়ে রেখেছেন প্রিয়ংময়ী।
শ্রীপুরের জৈনা বাজার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক লাগুয়া দোতলা বাড়িটি সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখত প্রিয়ংময়ী। তিন বছর বয়সী কন্যা বাবা ছাড়া অন্য কিছু বুঝত না, বাবাকে ঘিরেই ছিল তার সব ভালবাসা। সন্ধ্যা হলেই বাবার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনত সে। কখন বাবা আসবেন, বাবার বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর অপেক্ষায় থাকত সে। ভ্রমণ প্রিয় প্রিয়ক গত বছর পর্যটক হিসেবে ভারত ভ্রমন করেন। মেয়ের জন্য নিয়ে এসেছিলেন নানা ধরনের খেলনা, এ খেলনার ভিড়ে ছিল একটি বিমান। এ বিমান দিয়ে মেয়েকে প্রিয়ক তার ভারত ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এর পর থেকেই বাবার প্রতি বায়না ছিল তাকে বিমানে উঠানো নিয়ে। বাবা মেয়ের শখ পূরণের উদ্যোগ নেন।
কিন্তু এ শখের করুণ সমাপ্তি ঘটে বিমান দুর্ঘটনার মধ্যদিয়ে। আকাশে ওড়ার শখ পূরণ হলেও ভালবাসার বাবা ও মেয়ে চিরতরে সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন। এ বিমান দুর্ঘটনার মধ্যদিয়ে একটি প্রজন্মের পরিসমাপ্তি ঘটল।
মঙ্গলবার দুপুরে নিখোঁজ ফারুক হোসেনের মামা মশিউর রহমান নয়েস নেপালে থাকা স্বজনদের বরাত দিয়ে প্রিয়ংময়ী ও তার বাবার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
(ঢাকাটাইমস/১৩মার্চ/প্রতিনিধি/এলএ)