বিমান দুর্ঘটনায় নিহত মিতুও রাজশাহীর মেয়ে
নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত বিলকিস আরা মিতুও রাজশাহীর মেয়ে। রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়া এলাকার গোলাম কিবরিয়া ও মনোয়ারা বেগমের মেয়ে তিনি। মিতুর পাসপোর্ট নম্বর বিসি-০০৪৯০৩০।
মিতু তার স্বামী আজিজুল হকের সঙ্গে নিউইয়র্কের হাডসনে থাকতেন। কয়েক দিন আগে মায়ের অসুস্থতার কথা বলে নিউইয়র্ক থেকে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। এরপর নেপালে বেড়াতে যাচ্ছিলেন তিনি। সেখানেই দুর্ঘটনার পড়ে মারা গেলেন তিনি।
গত সোমবার দুপুরে নেপালের কাঠমান্ডু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ২৬ বাংলাদেশিসহ ৫০ জন নিহত হন। আহত হন আরও ২১ জন। এ দুর্ঘটনায় রাজশাহীর আরও তিন দম্পতি ছিলেন।
তারা হলেন- শিরোইল এলাকার বাসিন্দা হাসান ঈমাম, তার স্ত্রী নাহার বিলকিস বানু, উপশহর এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম, তার স্ত্রী আক্তারা বেগম এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইমরানা কবির হাসি ও তার স্বামী রকিবুল হাসান। এদের মধ্যে হাসি ছাড়া বাকি সবাই নিহত হয়েছেন।
সর্বশেষ মিতুর পরিচয় জানা গেল। মিতুর স্বামী আজিজুল হক ফায়ারম্যানস অ্যাসোসিয়েশন অব দ্য স্টেট অব নিউইয়র্কের একজন স্টাফ নার্স। তার দেশের বাড়ি চট্টগ্রামে। তবে আজিজুল মিতুর দ্বিতীয় স্বামী। ২০০৯ সালে মিতুর সঙ্গে রাজশাহী নগরীর উপশহর এলাকার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে এমরান হোসেনের বিয়ে হয়েছিল।
এমরান রেলওয়েতে চাকরি করেন। তার সঙ্গে সংসার করা অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে আজিজুল হকের সঙ্গে পরিচয় হয় মিতুর। এরপর দাম্পত্য কলহ শুরু হয় মিতু-এমরানের। পরে ২০১৩ সালের ২৯ আগস্ট তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। পরের বছর আজিজুলকে বিয়ে করে ২০১৫ সালে নিউইয়র্ক পাড়ি দিয়েছিলেন মিতু।
বুধবার সন্ধ্যায় নগরীর নওদাপাড়ায় নিহত মিতুর বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।
আশপাশের বাড়ির বাসিন্দারা জানান, মিতুর মৃত্যুর খবর শুনে তার বাবা-মা ঢাকায় চলে গেছেন। মিতুর বাবা বাংলাদেশ রাইফেলসে চাকরি করতেন। আর তার মা ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক।
রেলওয়ে শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আবুল মাসুদ মোসাদ্দেক আহমেদ নিহত মিতুর আগের স্বামীর ভগ্নিপতি। আবুল মাসুদ জানান, বিচ্ছেদের পর মিতুর দেনমোহরের টাকাও পরিশোধ করেন তারা। মিতু ও তার পরিবারের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। তবে মিতুর মৃত্যুতে তারা মর্মাহত।
মাসুদ বলেন, বিয়ের পর মিতু ও এমরান আমার বাসার নিচতলায় থাকত। এমরানের সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে গেলে সব মালামাল নিয়ে মিতু চলে যায়। এরপর আর কখনও কথা হয়নি। কিন্তু তার মৃত্যুতে আমাদের পুরো পরিবার শোকাহত। সবাই কান্না করছে। আমরা মিতুর আত্মার শান্তি কামনা করি।
জানা গেছে, রাজশাহীতে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন মিতু। নিউইয়র্কে যাওয়ার পর স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কে একাউন্টিং অ্যান্ড ফিনান্স নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন তিনি। ১৫ মার্চ তার জন্মদিন। তার ঢাকায় বাবা-মা ও একমাত্র ভাইয়ের সঙ্গে দিনটি পালন করার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই জন্মের মাসেই মারা গেলেন মিতু।
কথা বলতে মিতুর বাবা গোলাম কিবরিয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। আর রিং হলেও ফোন ধরেননি মিতুর ভাই মাসুদ রানা মনির। তাই এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তাই মিতুর লাশ দেশে আনতে কেউ নেপাল গিয়েছেন কিনা তা জানা যায়নি।
(ঢাকাটাইমস/১৪মার্চ/আরআর/এলএ)